১৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪ ইং | ৩রা পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৭:৪৭

দুই বছরেও জনপ্রিয় হয়নি পেপ্যাল ‘জুম’ সার্ভিস

আন্তর্জাতিক অনলাইন পেমেন্ট সংস্থা পেপ্যালের ‘ইনওয়ার্ড সার্ভিস’ জুমের মাধ্যমে বিদেশ থেকে খুব সহজে ও কম সময়ে দেশে টাকা পাঠানো যায়। শুধু তাই নয়, পৃথিবীর যেকোনও প্রান্ত থেকে সেকেন্ডের মধ্যে দেশে টাকা চলে আসে। তারপরও জনপ্রিয় হচ্ছে না প্রায় দুই বছর আগে চালু হওয়া পেপ্যাল জুম। এর অন্যতম কারণ এই সেবার মাধ্যমে লেনদেন করতে না পারা। তবে ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এই মুহূর্তে এটি জনপ্রিয় করার কোনও পদক্ষেপও নেবে না বাংলাদেশ ব্যাংক।  কারণ লেনদেন সেবা চালু করলে দেশ থেকে অর্থ পাচার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।সাধারণত, প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে চাইলে টাকা জমা দেওয়ার অন্তত দুই ঘণ্টা পর বাংলাদেশে টাকা জমা হয়। কিন্তু পেপ্যাল জুম সেবা থেকে টাকা পাঠাতে এক সেকেন্ডের মতো সময় লাগে। অথচ এই সেবার প্রতি মানুষের আগ্রহ কম।

২০১৭ সালের ১৯ অক্টোবর পেপ্যাল ‘জুম’ সেবা উদ্বোধন করা হয়। ওই সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেছিলেন, চালুর দিন থেকেই সোনালী, রূপালী, অগ্রণী, জনতা, সোস্যাল ইসলামী, উত্তরা, পূবালী, সিটি ও ইসলামী ব্যাংকে এই সেবা চালু হচ্ছে। বাকি ব্যাংকগুলোকে এ সেবা চালু করার আহ্বান জানান তিনি। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে মাত্র তিনটি ব্যাংকে পেপ্যাল ‘জুম’ সেবা চালু আছে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম  বলেন, ‘বর্তমানে সোনালী, রূপালী ও ডাচ বাংলা ব্যাংকে পেপ্যালের জুম সেবা চালু আছে। এই তিনটি ব্যাংকের গ্রাহক পেপ্যালের জুম ব্যবহার করে অল্প খরচে ও কম সময়ে টাকা পাঠাতে পারছেন।’ তবে এ সার্ভিসের মাধ্যমে কী পরিমাণ অর্থ আসছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে তার কোনও তথ্য নেই।
বর্তমানে পেপ্যাল জুম সেবার মাধ্যমে অন্য দেশ থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠানো গেলেও এই সেবার মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে কোনও টাকা বাইরে পাঠানো যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, বাইরে টাকা পাঠানোর অনুমতি দেওয়া হলে হয়তো টাকা দেশে আসার চেয়ে বাইরে চলে যাবে বেশি।
দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কথা চিন্তা করেই বাংলাদেশ ব্যাংক এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানান সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলন, ‘এই মুহূর্তে পেপ্যালের জুম সেবা জনপ্রিয় না হলেও কিছু করার নেই। মানি লন্ডারিং বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা বাইরে পাঠানোর অনুমতি দিচ্ছে না।’
এ প্রসঙ্গে সোনালী ব্যাংকের ফরেন রেমিট্যান্স অপারেশন শাখার এক কর্মকর্তা  বলেন, বাংলাদেশে পেপ্যালের পূর্ণাঙ্গ সুবিধা পেতে হলে প্রথমে এ সংক্রান্ত শক্ত নীতিমালা করতে হবে। তা না হলে পেপ্যালের মাধ্যমে প্রচুর টাকা বাইরে চলে যাবে। এতে মানি লন্ডারিংয়ের পরিমাণও বেড়ে যাবে।
ইসলামী ব্যাংক থেকে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালের ১৯ অক্টোবর থেকে পেপ্যাল জুম সেবা চালু হওয়ার কথা থাকলেও ব্যাংকটি শেষ পর্যন্ত এই সেবা চালু করতে পারেনি। শুধু ইসলামী ব্যাংকই নয়, রাষ্ট্রায়ত্ত  অগ্রণী, জনতা, সোস্যাল ইসলামী, উত্তরা, পূবালী, সিটি ব্যাংক এই সেবা চালু করতে পারেনি। তবে যে তিনটি ব্যাংকে এই সেবা চালু করেছে তাদের গ্রাহক দিন দিন কমছে। মূলত এই সেবা নিচ্ছেন সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাষ্ট্রে থাকা গ্রাহকরাই। আর পেপ্যাল জুম-এর মাধ্যমে বেশিরভাগ রেমিট্যান্স আসছে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে।
এ প্রসঙ্গে সোনালী ব্যাংকের ফরেন রেমিট্যান্স ম্যানেজমেন্ট শাখার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শীর্ষ এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সোনালী ব্যাংক এই সেবাকে আরও জনপ্রিয় করার নানামুখী উদ্যোগ নিলেও গ্রাহকদের আগ্রহ বাড়ছে না। যাদের সোনালী ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট আছে, কেবল তারাই এর মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। ফলে গ্রাহকদের সংখ্যাও বাড়ছে না। আবার এই সেবার মাধ্যমে রেমিট্যান্সের পরিমাণও বাড়ছে।’

তিনি জানান, প্রতি মাসে (ওয়ার্কিং ডে ২০ দিন) গড়ে ৫০০ গ্রাহক পেপ্যাল জুম সেবার মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন। বাংলাদেশে সোনালী ব্যাংকের যেকোনও শাখায় ১৩ ডিজিটের অ্যাকাউন্ট থাকলে তিনি পেপ্যালের ‘জুম’ থেকে তার নিজের অ্যাকাউন্টে সেকেন্ডের মধ্যে টাকা পাঠাতে পারছেন। অচিরেই পেপ্যাল জুম সেবার গ্রাহকদের জন্য আরও সুবিধা দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস (এপিআই) করতে যাচ্ছি। আর এটা সম্পন্ন হলে যেকোনও দেশ থেকে যেকোনও সময়ে টাকা পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গে গ্রাহকের বাংলাদেশে থাকা অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হয়ে যাবে।’
জুম সেবা চালুর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের পেপ্যাল অ্যাকাউন্টধারীরা তাদের পেপ্যাল ওয়ালেট ব্যবহার করে প্রতিবার সর্বোচ্চ ১০ হাজার ডলার পাঠাতে পারেন। প্রতি লেনদেনে এক হাজার ডলার পর্যন্ত পাঠাতে ৪.৯৯ ডলার ফি লাগে। এক হাজার ডলারের বেশি অর্থ পাঠাতে কোনও ফি লাগে না।

প্রকাশ :আগস্ট ২৪, ২০১৯ ৪:০৫ অপরাহ্ণ