দেশজনতা অনলাইন : রোহিঙ্গাদের দেয়া শর্ত পুরণ না হওয়ায় তালিকাভুক্ত কোনো রোহিঙ্গাই স্বদেশে ফিরতে রাজী হয়নি। ফলে বাংলাদেশ সব প্রস্ততি সম্পন্ন করার পরও পূর্বনির্ধারিত আজকের (২২ আগস্ট) বহুল প্রত্যাশিত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন হয়নি। বিষয়টি অপেক্ষমান জনাকীর্ণ দেশী-বিদেশী মিডিয়াকর্মীদের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশণার মোঃ আবুল কালাম নিশ্চিত করেছেন।
এই সময় মিয়ানমার এক ও চীনের দুই প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। এ নিয়ে পর পর ২ বার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আটেকে গেল।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের শালবাগান ২৬ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরের সামনে প্রধান সড়কের পাশে ৫টি মাইক্রো, ৩টি বাস ও ২ ট্রাক এবং লেদা ক্যাম্পের পাশে আরও দুটি বাস অপেক্ষা করছিল।
টেকনাফের জাদিমোরা শালবাগান রোহিঙ্গা শিবিরের ইনচার্জ মোহাম্মদ খালিদ হোসেন বলেন, প্রত্যাসনের তালিকায় থাকা রোহিঙ্গাদের আজও সাক্ষাৎকারের কার্যক্রম চলছে। তবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য ক্যাম্পে সব ধরণের প্রস্তুতি রয়েছে। রোহিঙ্গারা স্বেচ্ছায় স্বদেশে ফিরে যেতে চাইলে গাড়িতে করে তাদের পাঠিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতরে সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, ইউএনএইচসিআর প্রতিনিধি, সেনাবাহিনী ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য উপস্থিতি রয়েছেন।
এইদিকে মিয়ানমার সরকার ৩ হাজার ৪৫০ রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে নেয়ার ঘোষণায় অনেকটা তড়িঘড়ি করেই প্রত্যাবাসনের প্রস্তুতি নেয়া হয়। গত মঙ্গলবার থেকে রোহিঙ্গাদের সাক্ষাতকার নেয়ার মাধ্যমে প্রত্যাবাসনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু করে শরনার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের কর্মকর্তারা। এসময় জাতিসংঘ শরণার্থী হাই কমিশনের কর্মকর্তারা প্রথমে তালিকায় থাকা রোহিঙ্গাদের বাড়ী বাড়ী গিয়ে তাদের মিয়ানমার সরকারের ফিরিয়ে নেয়ার বার্তা পৌছে দেয়। পরে তাদের সংশ্লিষ্ট সিআইসি অফিসে নিয়ে এসে সাক্ষাতকার বা মতামত নেয়া হচ্ছে।
গত দুই দিনে টেকনাফের ৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রত্যাবাসনের তালিকায় থাকা ২৩৫ পরিবারের সাক্ষাতকার নেয়া হয়েছে। ২২ আগস্ট প্রত্যাবাসনের জন্য সব ধরণের প্রস্তুত রয়েছে সরকারের। সেচ্ছাসম্মতিতে যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ট্রানজিট পয়েন্ট দিয়ে প্রত্যাবাসন করা হবে। সেচ্ছায় প্রত্যাবাসনে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের জন্য যানবাহন ও নিরাপত্তা সহ সকল ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সরকারের সকল প্রস্তুতি থাকলেও রোহিঙ্গাদের নানা দাবীতে প্রত্যাবাসন অনেকটা অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে। রোহিঙ্গারা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে নানা দাবী জুড়ে দিচ্ছে। তাদের দাবী পূরণ না হলে মিয়ানমারে ফিরে যাবে না বলে জানান এসব রোহিঙ্গারা।
প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে সেচ্ছাসম্মতি বা সাক্ষাতকার নেয়ার জন্য ইউএনএইচসিআর এবং সরকারী কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ৮টি দল কাজ করছে। প্রত্যাবাসনের তালিকায় থাকা ৩ হাজার ৪৫০ রোহিঙ্গা পরিবারের সাক্ষাতকার পর্ব চলমান থাকবে। গতবছরের ১৫ নভেম্বর প্রথমদফা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ধার্য্য দিন রোহিঙ্গাদের অনিচ্ছার কারণে প্রত্যাবাসন করা যায়নি।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে ২৫ আগস্ট রাখাইনের ৩০টি নিরাপত্তা চৌকিতে একযোগে হামলার ঘটনা ঘটে। প্রতিক্রিয়ায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন শুরু করে। ফলে প্রাণ বাঁচাতে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়। পুরনোসহ উখিয়া-টেকনাফের ৩২টি ক্যাম্পে এখন ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে।