নিজস্ব প্রতিবেদক: নরসিংদীতে দলীয় নেতাকর্মীদের দিকে জুতা হাতে তেড়ে এসেছেন যুবলীগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী। এ সময় তিনি জেলার মন্ত্রী-এমপিদের অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করেছেন বলেও প্রত্যক্ষদর্শী কয়েক নেতাকর্মী জানিয়েছেন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় নরসিংদীর ভেলানগর জেলখানার মোড় বাসস্ট্যান্ডে এ ঘটনা ঘটে।
দীর্ঘ ১৪ বছর পর আগামী রোববার নরসিংদী জেলা যুবলীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। সম্মেলনের দুইদিন আগে সংগঠনের শীর্ষ নেতার এমন আচরণ এ আয়োজনকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রীয় নেতাদের উপেক্ষা করে সম্মেলনের আগেই পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হীরু (বীর প্রতীক) নিজের বলয়ের এমপিদের নিয়ে পছন্দের নেতাদের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বাঁছাই করায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। এতে শুক্রবারের সন্ধ্যার এই প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেন যুবলীগের চেয়ারম্যান।
স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত মৌলভীবাজার জেলা যুবলীগের সম্মেলনে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ, যুবলীগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদসহ কেন্দ্রীয় নেতারা অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
সম্মেলন শেষে শুক্রবার সন্ধ্যায় যুবলীগের চেয়ারম্যান দলীয় নেতাদের নিয়ে ঢাকায় ফিরছিলেন। তাদের ঢাকা ফেরার খবরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদী শহরের ভেলানগর জেলখানা মোড় এলাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের অভ্যর্থনা জানাতে প্রস্তুতি নেয় জেলা যুবলীগের নেতারা। এ সময় জেলা যুবলীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী ও এবার সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামীম নেওয়াজসহ শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
একই সময়ে মনোহরদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খাঁন বীরু ঢাকায় যাওয়ার পথে যুবলীগের নেতাকর্মীদের দেখে তাদের সঙ্গে যোগ দেন।
প্রত্যক্ষদর্শী নেতাকর্মীরা জানান, সন্ধ্যা ৬টার দিকে কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের গাড়িবহর জেলখানা মোড় অতিক্রম করার সময় যুবলীগের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে অভ্যর্থনা জানাতে এগিয়ে যায়। এ সময় হঠাৎ যুবলীগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী জুতা হাতে গাড়ি থেকে নেমে আসেন। তিনি নেতাকর্মীদের গালগাল করতে করতে জুতা হাতে ধাওয়া করেন। এ সময় তিনি স্থানীয় মন্ত্রী-এমপিদের অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করেন। এ ঘটনায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন নেতাকর্মীরা। তারা দিগ্বিদিক ছোটাছুটি শুরু করেন।
ঘটনার প্রসঙ্গে মনোহরদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খাঁন বীরু জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি ঢাকায় যাওয়ার পথে নেতাকর্মীদের দেখে দাঁড়িয়েছিলাম। কিন্তু অনাকাঙ্খিতভাবে যুবলীগের চেয়ারম্যান বিজয় দাকে গালিগালাজ করে। এ রকম পরিস্থিতি দেখে দূরে সরে যাই। এ রকম পরিস্থিতিতে জীবনে কখনো পড়িনি। তবে অনর্থক মুখ দিয়ে এই গালিগালাজ আসবে না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলার এক সংসদ সদস্য জানিয়েছেন, রোববার অনুষ্ঠিতব্য যুবলীগের সম্মেলনে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হীরু একতরফাভাবে নিজের পছন্দের নেতা বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামীকে সভাপতি ও শামীম নেওয়াজকে সাধারণ সম্পাদক করার প্রস্তুতি সেরেছেন। এতে কেন্দ্রীয় নেতাদের ও আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মীদের মতামত না নেয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। ফলশ্রুতিতে যুবলীগের চেয়ারম্যান এ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারেন।
এদিকে, নির্ভরযোগ্য এক সূত্র জানিয়েছে, যুবলীগের চেয়ারম্যানের এই প্রতিক্রিয়ার প্রভাব পড়বে রোববারের সম্মেলনে। সম্মেলন নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ায় অনেক অতিথির সম্মেলনে যোগ দেয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। ফলে সম্মেলন ও নতুন কমিটি নিয়ে জটিলতা তৈরি হতে পারে।
এই ব্যাপারে জানতে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামীর মোবাইল ফোনে কল করে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
জেলা যুবলীগের সভাপতি একরামুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘যুবলীগের চেয়ারম্যান মৌলভীবাজার যাওয়ার সময় আমরা অভ্যর্থনা জানালে তিনি সাদরে গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু আসার সময় কেন এমন ঘটনা ঘটলো তা আমার জানা নেই।’