এই ক্ষতির অঙ্ক বাড়ছে প্রতিদিন কমপক্ষে ২০ লাখ টাকা করে। অপরদিকে মিলের প্রায় ৮ শতাধিক শ্রমিক কর্মচারী কর্মকর্তা বেকার সময় কাটানোর পাশাপাশি মিলের আবাসিক কলোনীতে গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ সমস্যায় তারা অত্যন্ত মানবেতন অবস্থায় দিনাতিপাত করছে।
সরেজমিন পরিদর্শন এবং মিলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই থানার চন্দ্রঘোনায় অবস্থিত স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে দেশের সবচেয়ে বড় (এশিয়ার বৃহত্তম হিসেবে খ্যাত) কাগজ উৎপাদনকারী কারখানা ছিল কর্ণফুলী পেপার মিল লিমিটেড। স্থানীয় কাঁচামাল বাঁশ, নরম কাঠের মাধ্যমে পাল্প উৎপাদন এবং পরবর্তী এই পাল্প থেকে কাগজ উৎপাদন হয় কেপিএম-এ।
শুরু থেকে দৈনিক ১৩০ থেকে ১৫০ মেট্রিকটন কাগজ উৎপাদন ক্ষমতার এই বৃহৎ কারখানায় এখন দৈনিক কাগজ উৎপাদন হয় মাত্র ১০ থেকে ১৫ টন। এক সময় এই কারখানার শ্রমিক কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ৫ হাজারের অধিক থাকলেও এই সংখ্যা কমতে কমতে এখন ৮শ’-এ নেমে এসেছে। এই করুণ অবস্থার মধ্যেও কারখানাটির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে গত ৪ আগস্ট থেকে। গ্যাস সরবরাহ লাইনে ত্রুটি দেখা দেয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গত ১৬ দিনেও এই ত্রুটি সাড়াতে পারেনি।
কর্ণফুলী পেপার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. এমএ কাদের উৎপাদন বন্ধ থাকার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, কারখানার গ্যাস সরবরাহ লাইনের একটি মেশিন নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণে কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ফলে কারখানার উৎপাদনও বন্ধ হয়ে গেছে। মিলে গ্যাস সরবরাহ প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রবিউশন কোম্পানির সাথে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলেও তারা প্রয়োজনীয় মেশিন যন্ত্রাংশ সংগ্রহ করতে না পারায় সেটি এখনো লাগানো সম্ভব হয়নি। নষ্ট হওয়া মেশিন প্রতিস্থাপন করা গেলে মিলের উৎপাদন সচল হবে বলে ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান।
স্থানীয় চন্দ্রঘোনা ইউপি চেয়ারম্যান, আনোয়ার ইসলাম চৌধুরী বেবি জানান, মিলে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় মিলের নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদনের জেনারেটর বন্ধ রয়েছে। এর ফলে মিল এলাকায় বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। কখনো কখনো সাময়িক সময়ের জন্য পানি বিদ্যুৎ পাওয়া গেলেও এতে প্রয়োজন মিটছে না শ্রমিক কর্মচারীদের । সীমাহীন দুর্ভোগে রয়েছে পুরো চন্দ্রঘোনা কেপিএম আবাসিক এলাকার শত শত পরিবার।
চট্টগ্রাম কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী খায়েজ আহম্মদ মজুমদার বলেন, আমরা কেপিএম-এ গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক করার জন্য চেষ্ঠা করছি। যে মেশিনটি নষ্ট হয়েছে সেটি বাংলাদেশে কোথাও নেই। এটি বিদেশ থেকে আমদানি করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কবে এটি দেশে পৌঁছাবে এবং কবে কারখানায় গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হবে এ ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না গ্যাস কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, কাপ্তাইয়ের চন্দ্রঘোনায় ১৯৫৩ সালে পাকিস্তানের দাউদ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ কর্ণফুলী পেপার মিলটি প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে এটি পাকিস্তান শিল্প উন্নয়ন সংস্থা এবং বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) এর অধীনে পরিচালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ সরকারের রাস্ট্রয়ত্ব প্রয়োজনের যাবতীয় কাগজ, সচিবালয়, টেক্সট বোর্ড বোর্ড, নির্বাচন কমিশনসহ সরকারী বিভিন্ন দপ্তর কর্ণফুলী পেপার মিলের কাগজের উপরই নির্ভরশীল ছিল।