২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৮:৩৮

প্রতিকূল আবহাওয়ায় দুর্ভোগে ঘরমুখো মানুষ

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : ঈদে মানুষ ও গাড়ির অতিরিক্ত চাপে কিছুটা শিডিউল বিপর্যয় আর দুর্ভোগ মেনে নেয় ঈদের আনন্দে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা মানুষ।

তবে, এবার ঈদুল আজহায় প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে শুরুতেই শিডিউল বিপর্যয়ে দুর্ভোগে পড়েছে ঘরমুখো মানুষ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাউন্টারে অপেক্ষা করতে হচ্ছে। সেটা বাস, ট্রেন কিংবা লঞ্চ; সব মাধ্যমেই ‘অপেক্ষা’ বাড়িয়ে দিয়েছে আবহাওয়ার গুমোট আচরণ।

শুক্রবার (৯ আগস্ট) থেকে সরকারি ছুটি। এদিন বাড়ি ফেরা মানুষের চাপ থাকবে সবচেয়ে বেশি। এ কারণে বড় ঝক্কি এড়াতে একদিন আগেই বৃহস্পতিবার ঢাকা ছাড়ছেন অনেকে। এই সংখ্যাটাও অনেক বেশি। বৃহস্পতিবারও লঞ্চ, ট্রেন কিংবা বাস; সব মাধ্যমেই মানুষের স্রোত দেখা গেছে। তবে এদিন রাত থেকে টানা বৃষ্টি ঘরমুখো মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েক গুন।

গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক হাসিবুল ইসলাম জানিয়েছেন, প্রায় সব রুটেই দেরি করে বাস ঢাকায় প্রবেশ করছে। এজন্য নির্ধারিত সময়েরও অনেক পরে বাস ছেড়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা।

নাবিল পরিবহনের ম্যানেজার মি. এনামুল  জানিয়েছেন, বুধবার থেকেই কিছুটা এলোমেলো অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে শিডিউল। এর কারণ হিসেবে তিনি প্রতিকূল আবহাওয়াকে দুষছেন। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় প্রধান রাস্তার উপরেই কোরবানির হাট বসে গেছে। আর অতিরিক্ত চাপ হিসেবে রয়েছে গরু বোঝাই ট্রাক। এ জন্য তৈরি হয়েছে যানজট। আবার অনেক রাস্তার উল্টোপাস থেকে গাড়ি প্রবেশ করায় প্রচণ্ড যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

তবে এসব অজুহাত মানতে নারাজ যাত্রীরা। গাবতলী বাস টার্মিনালে বাসের জন্য দুই ঘন্টা অপেক্ষা করা মি. কাদের জোয়ারদার জানান, সকাল ৯টায় বাস ছাড়ার কথা থাকলেও ঈদের সময় বিবেচনায় এক ঘন্টা আগে এসেছেন তিনি। কিন্তু এখন ১১টা বাজলেও গাড়ির দেখা নেই।

বুধবার থেকেই আবহাওয়ার ছন্দপতন ঘটেছে। ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে বৃষ্টি যাতায়াত ব্যবস্থাকে কঠিন করে তুলেছে। এরই মধ্যে পদ্মায় ২ নম্বর বিপদ সংকেত থাকায় লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল বন্ধ রাখা হয়। বুধবার বেলা একটা থেকে ফেরিসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করে ঘাট কর্তৃপক্ষ। হঠাৎ নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েন যাত্রী ও পরিবহনচালকেরা। নদীর পাড়ে শত শত গাড়ির লম্বা লাইন জমে যায়। দুর্ভোগে অনেকে নদীর পাড়েই রাত কাটিয়েছেন। ফেরি বন্ধ থাকায় বাসের পাশাপাশি আটকা পড়েছে শত শত ট্রাক।

বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ও মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে। তাও ১৮টি ফেরির বিপরীতে থেমে থেমে চলছে মাত্র ৭টি। তবে এখনো প্রবল স্রোত আর বাতাস থাকায় চাহিদা অনুসারে ফেরি চালানো সম্ভব হচ্ছে না।

বৃহস্পতিবার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সারা দিনের আকাশ মেঘলা থেকে অস্থায়ীভাবে মেঘাচ্ছন্ন থাকতে পারে। হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। ঘণ্টায় ৩০-৪০ কিলোমিটার বেগে দমকা হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

এদিকে বৈরি আবহাওয়ার কারণে সদর ঘাটের লঞ্চ চলাচলের ক্ষেত্রেও বিঘ্ন ঘটে। আবহাওয়ার পরিস্থিতি বুঝে নির্ধারিত সময়ে ছেড়ে যায়নি লঞ্চ। লঞ্চ মালিক সমিতির অফিস সহকারী নজরুল ইসলাম জানান, সকাল থেকে সিগনাল ছিলো। বাতাসের গতিবেগও একটু বেশি ছিলো, যে কারণে লঞ্চ ছাড়তে দেরি হয়েছে। তবে একটু দেরিতে হলেও লঞ্চ ছেড়ে যাচ্ছে।

বিআইডব্লিউটিআইয়ের যুগ্ম পরিচালক মো. জয়নাল আবেদেীন জানান, বৈরী আবহাওয়ার কারণে লঞ্চ চলাচলের ক্ষেত্রে কিছুটা ছন্দপতন ঘটেছে। তবে দ্রুতই সবকিছু স্বাভাবিক হচ্ছে।

এদিকে কমলাপুর থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক আবু বকর ইয়ামিন জানিয়েছেন, ট্রেনও সময় মতো ছেড়ে যাচ্ছে না। কমলাপুর থেকে ৩টি স্পেশাল ট্রেনসহ প্রায় ৪০টি ট্রেন বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যাবে। অনেক যাত্রী শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে ভোগান্তির অভিযোগ করছেন।

জানা গেছে, রাজশাহীগামী ধুমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনটি সকাল ৬ টা ২০ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও কমলাপুর ছেড়ে যায় প্রায় দুই ঘণ্টা পর সকাল সাড়ে ৮ টার দিকে। একইভাবে চিলাহাটীগামী নীলসাগর এক্সপ্রেস, রংপুর এক্সপ্রেস, দিনাজপুর-পঞ্চগড়গামী একতা এক্সপ্রেসের শিডিউল বিপর্য় হয়েছে।

স্টেশন ম্যানেজার আমিনুল ইসলাম জানান, শিডিউলে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। আমরা সর্বকাত্মক চেষ্টা করছি শিডিউল ঠিক রাখার জন্য। যেসব ট্রেন দেরিতে আসছে সেগুলো ছাড়তে একটু দেরি হচ্ছে।

মাওয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটে নৌযান চলাচল সীমিত থাকার কারণে দক্ষিণাঞ্চলগামী যাত্রীদের বড় একটি অংশ বিপদে পড়েছে। ফেরি চলার বন্ধ থাকার পর সীমিত আকারে চললেও ঢাকায় বাস ঢুকছে অনেক পরে। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাউন্টারেই বসে থাকছেন যাত্রীরা। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা গেছে, পরিবার-পরিজন নিয়ে বাসের দিকে চেয়ে বসে আছেন শত শত মানুষ।

সায়েদাবাদ সৌদিয়া পরিবহনের কর্মকর্তা মো. দীপ জানান, মাওয়ায় ফেরি চলাচল সীমিত হওয়ার কারণে বাস ঢাকায় ঢুকতে দেরি করছে। এজন্য কাউন্টার থেকে বাসও ছাড়তে দেরি হচ্ছে।

প্রকাশ :আগস্ট ৮, ২০১৯ ৩:২৩ অপরাহ্ণ