আন্তর্জাতিক ডেস্ক : স্বায়ত্তশাসনের মর্যাদা কেড়ে নেয়ার পর ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে এখন ভয় ও আতঙ্ক চেপে বসেছে। সামরিক বাহিনীর ব্যাপক ধরপাকড় ও বিচ্ছিন্ন বিক্ষোভ চলছে।
সোমবার মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলটির সাংবিধানিক বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার ঘোষণা দেন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এর পর বিক্ষোভে এক কাশ্মীরি নিহত ও আরও ছয় ব্যক্তি আহত হয়েছেন।-খবর এএফপির
কাশ্মীরের একটি হাসপাতাল বলছে, বন্দুকের গুলিতে আহত ছয় ব্যক্তিকে তারা চিকিৎসা দিয়েছে।
দেশের বাকি অংশের সঙ্গে হিমালয় অঞ্চলটির সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দুত্ববাদী সরকার সোমবার কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের ঘোষণা দেয়াকে সামনে রেখে কাশ্মীরের ফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়।
এছাড়া জনসমাবেশ ও বিক্ষোভও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিচ্ছিন্ন এই সম্প্রদায় ও শ্রীনগর থেকে বিমানে আসা যাত্রীরা কাশ্মীরের অস্বাভাবিক পরিস্থিতির কথাই বলেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যাত্রী বলেন, সোমবার থেকেই তিনি থেমে থেমে বন্দুক ও অন্যান্য অস্ত্রের আওয়াজ শুনছেন। প্রতি পাঁচ কদম পরপর সরকারি বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
এএফপিকে তিনি বলেন, বিমানবন্দরে আসার আগে অন্তত ২৫ বার আমার গাড়ি তল্লাশি করা হয়েছে। এতে ত্রিশ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে আমার চার ঘণ্টা সময় লেগেছে।
মঙ্গলবার শ্রীনগর থেকে নয়াদিল্লিতে আসা মুবিন মাসুদি বলেন, রোববার তিনি বিয়ের উৎসবে ছিলেন। তখন হঠাৎ করে উপস্থিত লোকজন বুঝতে পারেন, ফোন কোনো কাজ করছে না।
তিনি বলেন, মাঝরাতে যখন খাবার খাচ্ছিলাম, তখন একের পর এক ফোন অকার্যকর হয়ে যায়। সবাই বুঝতে পারে, কিছু একটা কিছু ঘটছে এবং বাড়ি ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
ফারুক শেখ নামের আরেক যাত্রী বলেন, তার কাছে মনে হয়েছে, শহরের ভেতর তিনি যেন খাঁচায় আটকা পড়েছেন।
‘আমাদের মোবাইল ফোনগুলো কেড়ে নেয়া হয়। ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়া হয়। এমনকি টেলিভিশনের লাইন ও ল্যান্ডফোনের সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে।’
কাশ্মীরের কবি সান্না ওয়ানি নিজের টুইটার পোস্টে শ্রীনগরজুড়ে ভয় ও আতঙ্কের কথা লিখেছেন। পরবর্তী সময়ে তিনি কাশ্মীর থেকে বিমানে চলে আসেন।
এই নারী কবি বলেন, জরুরি চিকিৎসার কথা বলা হলেও তল্লাশি চৌকি থেকে রেহাই মেলে না।
কাশ্মীরের অধিবাসীরা যেন একটি বন্দিশিবিরে রয়েছে। ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র রুপার্ট কলভিল্লি বলেন, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ও নিরাপত্তা ধরপাকড় গভীর উদ্বেগের।
মঙ্গলবার জেনেভায় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমরা সেখানে ব্যাপক টেলিযোগাযোগ বিধিনিষেধ দেখতে পাচ্ছি। সম্ভবত এর আগে কখনো এমনটা ছিল না। রাজনৈতিক নেতাদের স্বেচ্ছাচারী আটক এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বিধিনিষেধের খবরও পাচ্ছি বলে জানান রুপার্ট।
১৯৮৯ সাল থেকে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে কাশ্মীরে বিদ্রোহ চলছে। ভারতীয় টেলিভিশনে রাজ্য পুলিশ প্রধান বলছেন, লোকজন খুবই সহযোগিতা করছেন। একটি সহিংসতার ঘটনাও এখানে ঘটেনি।