রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক গোপেন্দ্র নাথ আচার্য্য নিজ উদ্যোগে কীটতত্ত্ববিদদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে পাঁচদিন ধরে মাঠ পর্যায় থেকে নমুনা সংগ্রহ করে এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতির বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন।
রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক-স্বাস্থ্যর কার্যালয় থেকে গঠিত কীটতত্ত্ববিদদের তিন সদস্যের এই কমিটি রামেক হাসপাতালের আশপাশসহ নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছেন। তারা এসব নমুনা থেকে এডিস মশার লার্ভার ব্যাপক উপস্থিতি পেয়েছেন।
এই কমিটির প্রধান সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে জেলা কীটতত্ত্ববিদ তায়েজুল ইসলাম। কমিটির অপর দুই সদস্য হচ্ছেন- রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়ের কীটতত্ত্বীয় কারিগর (টেকনিশিয়ান) আব্দুল বারী ও রাজশাহী সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের কীটতত্ত্বীয় কারিগর উম্মে হাবিবা।
রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক-স্বাস্থ্য গোপেন্দ্রনাথ আচার্য বলেন, রাজশাহীতে এডিস মশার উপস্থিতি আছে কি না, এ ব্যাপারে তার কাছে কী তথ্য আছে, সরকার থেকে জানতে চাইলে তিনি যাতে এডিস মশার ঘনত্ব, প্রজনন ক্ষেত্র ও বিস্তার সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য দিতে পারেন সেজন্য গত ১ আগস্ট তিনজন কীটতত্ত্ববিদকে নিয়ে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দেন।
এই কমিটি গত ২ আগস্ট থেকে কাজ শুরু করেন। পাঁচ দিনে তারা নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডের সন্দেহজনক জায়গাগুলো থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছেন। তার মধ্যে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ফালগুনী ছাত্রীনিবাসের সামনে আইসক্রিমের বক্সে জমে থাকা পানিতে ও অধ্যক্ষের বাসভবনের সামনে নারকেলের মালায় জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে তারা এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি পেয়েছেন।
একইভাবে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের সামনে পড়ে থাকা ভাঙা বেসিন ও ওয়ার্ডের পাঁচটি জায়গায় জমে থাকা পানিতে এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
এই দল নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে নগরীর উপশহর এলাকার রংধনু টাওয়ারের পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের ড্রামে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে, একই এলাকার ২২৪ নম্বর বাড়ির পরিত্যক্ত পাত্রে, তিন নম্বর সেক্টরের ১৬৪ নম্বর বাড়ির ফুলের টবে ও পরিত্যক্ত কর্কশিটে ও ২০১ নম্বর বাড়ির ফুলের টবে এই লার্ভার উপস্থিতি মিলেছে।
নগরীর আট নম্বর ওয়ার্ডের সিপাইপাড়া এলাকার মারুফের বাড়ির সামনের নারকেলের মালায়, একই এলাকার আরেকটি বাড়িতে ফুলের টবে, চার নম্বর ওয়ার্ডের কেশবপুরের মাসুদ রানার বাড়ির প্লাস্টিকের পাত্রে, সেলিনা বেগমের বাড়ি ফুলের টবে ও মিলনের বাড়ির টায়ারে ও মাটির পাত্রে জমে থাকা পানিতে এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এছাড়া শিরোইল এলাকা থেকে ভদ্রা পর্যন্ত রাস্তার পাশে হাঁটু সমান উুঁচ করে যেসব পাইপ পুঁতে রাখা হয়েছে, তার ভেতরে জমে থাকা পানিতেও এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে।
শিরোইল এলাকার ব্যবসায়ী সেলিমের টায়ারের দোকানের টায়ারে, নাসির হোসেনের ব্যাটারির সেলে জমে থাকা পানি ও শুকুর আলী নার্সারির মাটির পাত্রে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতেও তৈরি হয়েছে এডিস মশার লার্ভা।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের বাসভবনের সামনে থেকে এডিস মশার লার্ভা পাওয়ার ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে অধ্যক্ষ নওশাদ আলী বলেন, বাসভবনটি গত আট-দশ বছর ধরে পরিত্যক্ত রয়েছে। ওই বাসায় তিনি থাকেন না। সেখানে পানি জমে এডিস মশার লার্ভা হওয়া স্বাভাবিক।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এফএএম আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, বাংলাদেশে যখন এডিস মশা আছে তখন রাজশাহীতেও থাকতে পারে। তবে সেই মশাটি ডেঙ্গু আক্রান্ত কি না অর্থাৎ মশাটি ডেঙ্গুর জীবনু বহন করছে কি না সেটাই কথা। যারা খুঁজে পেয়েছেন তাদের উচিত মাঠপর্যায়ের তথ্য রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়রকে হস্তান্তর করা। তাহলে মেয়র ওই মশার প্রজনন ক্ষেত্রগুলো ধ্বংস করার উদ্যোগ নিতে পারেন। বাড়িতে হলে তাদেরও সতর্ক করতে পারেন।