আবারও ঋণের ফাঁদে বিপিসি, উন্নয়ন প্রকল্প বাধাগ্রস্তের শঙ্কা!
বিপিসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, প্রস্তাবটি এখন জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। এরপর এটি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) পাঠানো হবে। অনুমতি পাওয়া গেলে চুক্তি সই হবে। তিনি জানান, এখন বিপিসির ঋণের পরিমাণ অনেক কম, অন্যদিকে লোকসানও আগের মতো নেই। তবে, এখনও দিনে ৫ থেকে ৭ কোটি টাকা লোকসান দেয় বিপিসি।
সূত্র জানায়, জ্বালানি তেল আমদানি অর্থায়নে ২০২০ সালে ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফিন্যান্স করপোরেশন (আইটিএফসি) থেকে ঋণ সহায়তা নেওয়ার বিষয়ে আলোচনার জন্য আইটিএফসির আমন্ত্রণে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল ২৪ থেকে ২৫ জুন জেদ্দা সফর করেন। এই সভায় আইটিএফসি থেকে ২০২০ সালের জন্য জ্বালানি তেল আমদানি অর্থায়নে ১২০ কোটি ডলার ঋণ নেওয়ার বিষয়ে একমত হয়।
জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, গত দশ বছরের মধ্যে তিন বছর জ্বালানি তেলের দাম কমাতে বিপিসি কিছু মুনাফাও করেছে। তবে, তা খুব বেশি না হলেও ওই সময় বিপিসিকে নানা উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করতে দেখা গেছে। লাভের মুখ দেখায় সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং টার্মিনাল, জ্বালানি তেল পরিবহনে কয়েকটি পাইপ লাইন প্রকল্পও হাতে নিয়েছে বিপিসি। তবে, এখন আবার লোকসানে পড়ায় আগের মতো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ধীরগতির পাশাপাশি নতুন প্রকল্প হাতে নিতে পারছে না বিপিসি।
আইটিএফসির প্রস্তাবিত ১২০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণের বার্ষিক সুদের হার ৪ দশমিক ০৫ ভাগ। দেশের জ্বালানি তেলের সরবরাহ সচল রাখা, বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতির ওপর চাপ কমানো ও আইটএফসিকে ‘স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার’বিবেচনায় প্রস্তাবিত ঋণ নিতে বিপিসি রাজি হয়েছে।
জ্বালানি বিভাগের ঊর্ধ্বতনরা বলছেন, বিপিসি তেল আমদানিতে তহবিল গঠন করতে পারেনি। প্রতিদিনই লোকসানের হিসাব করলে বিপিসি বছরে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা লোকসান করছে। একদিকে লোকসান, অন্যদিকে ফের ঋণ নিয়ে অর্থের প্রবাহ ঠিক রাখতে হলে বিপিসি কোনও দিনই নতুন প্রকল্প তৈরি করতে পারবে না। কিন্তু দেশে জ্বালানির মূল্য নিয়ন্ত্রণে বিপিসির কিছু উদ্যোগ বহু বছর ধরে ঝুলে আছে। তারা বলেন, আর্থিক সংকটের কথা বলে বিপিসি এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে না। যা করা সম্ভব হলে দেশে আরও সাশ্রয়ী দামে জ্বালানি তেল পাওয়া যেতো। তখন আর ঘাটতি থাকতো না। এতে বিপিসির ঋণও নিতে হতো না।
বিপিসি বলেছে, এখন দেশে ৬০ লাখ টন জ্বালানি তেলের চাহিদা রয়েছে। এরমধ্যে মাত্র ১৫ লাখ টন দেশে পরিশোধন করার ক্ষমতা রয়েছে। বাকিটা পরিশোধিত জ্বালানি তেল কিনে আনে বিপিসি। অর্থাৎ বছরে ৪৫ লাখ টন পরিশোধিত তেল আমদানি করা হয়। এতে প্রতি লিটারে অন্তত ৬ টাকা করে অতিরিক্ত ব্যয় হয়। এই ব্যয় থেকে বাঁচতে বিপিসি দেশের একমাত্র তেল পরিশোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইরানির ক্ষমতা আরও ৩০ লাখ মেট্রিকটন বাড়ানোর প্রকল্প নিয়েছে। তবে, ২০০৯ সাল থেকে চেষ্টা করেও এই প্রকল্পের অর্থায়ন জোগাড় পারেনি। এখন আবার ধারাবাহিক লোকসান ও বিপিসির বড় অঙ্কের ঋণের কারণে এ ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প নির্মাণ আরও বাধাগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিপিসির একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘সরকারের উচিত বিপিসির চাহিদার পুরোটা ভর্তুকি দেওয়া। কারণ বিপিসির ব্যবসা করার কথা থাকলেও তা কখনোই করতে পার না। লোকসানি প্রতিষ্ঠানকে প্রকল্প নির্মাণের জন্য কেউ দীর্ঘে মেয়াদি ঋণ দিতে চায় না।’
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বিপিসি চেয়ারম্যান সামছুর রহমানকে কয়েক দফা ফোন করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার মুঠোফোনে এ বিষয়ে কথা বলার আগ্রহ জানিয়ে এসএমএস পাঠালেও কোনও সাড়া মেলেনি।