খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদ আসার বেশ আগে থেকেই গরম হয়ে আছে গরম মসলার বাজার। কোরবানির সময় চাহিদা বেশি থাকার সুযোগকে কাজে লাগান ব্যবসায়ীরা। এবার রোজার ঈদের পরই গরম মসলার দাম বাড়িয়েছেন তারা। কারণ ওই সময়ে সরকারি বা বেসরকারি কোনও সংস্থার কিংবা গণমাধ্যমের নজরদারি থাকে না। এই সুযোগটি নিয়েছেন মসলা ব্যবসায়ীরা। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন আদা-রসুন ব্যবসায়ীরাও। চাহিদার অতিরিক্ত উৎপাদন ও আমদানি হয়েছে বলে এবার পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা এ সুযোগটি নিতে পারেননি।
রাজধানীর চকবাজার, কাওরান বাজার ও স্থানীয় মহল্লার খুচরা বাজার ঘুরে জানা গেছে, রোজার ঈদের সময় প্রতিকেজি এলাচ বিক্রি হয়েছে ১৮৫০ টাকা দরে। সেই এলাচের দাম ঈদের পর তিন দফায় বেড়ে বর্তমানে ২৭৫০ টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত ১৫ দিন এলাচের দাম বাড়েনি। কোরবানির সময় আর বাড়বেও না। ব্যবসায়ীরা তাদের মতো করে প্রতি কেজিতে ৯০০ টাকা বাড়িয়েছেন। অনেকের বিশ্বাস, ‘যতটুকু দাম বাড়িয়েছেন তাতে এ সিজন চলবে।’
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভালো মানের জাম্বু (বড় দানা) সাইজের এলাচ বর্তমানে পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৫৫০ টাকা কেজিদরে। খুচরা বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ২৭৫০ টাকা কেজিদরে। এই এলাচই রোজার ঈদের সময় বিক্রি হয়েছে ১৮৫০ টাকা কেজিদরে। মাঝারি সাইজের দানা সম্বলিত এলাচ বর্তমান বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৩০০ টাকা কেজিদরে। খুচরা বাজারে তা বিক্রি হচ্ছে ২৪০০ টাকা কেজিদরে।
এ প্রসঙ্গে কাওরান বাজারের কিচেন মার্কেটের ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম লাল মিয়া বলেন, ‘আমরা এখন আর ১০০ টাকার থোক (এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, জিরা একসঙ্গে মিলিয়ে) গরম মসলা বেচি না, পরিমাণে বেচি। প্রয়োজন হলে ২৫ গ্রাম ওজনে বেচবো, তবুও থোক মসলা বেচি না। কারণ এতে পরিমাণ কম দেখায় বলে ক্রেতা অসন্তুষ্ট হয়। গরম মসলার প্রতিটি আইটেমের দাম আমদানিকারকরা এমনভাবে বাড়িয়েছেন তাতে হাতের আন্দাজ বা অনুমান ঠিক রাখা কঠিন। এতে আমাদের লোকসান হয়।’
তিনি জানিয়েছেন, ‘গরম মসলার দাম বাড়ানোর কোনও যৌক্তিক কারণ নাই। তারপরেও বেড়েছে। এখন আর ঈদ কোরবানিকে কেন্দ্র করে পণ্যের দাম বাড়ে না। উৎসবকে কেন্দ্র করে পণ্যের দাম বাড়ালে ব্যবসায়ী ও সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বদনাম হয়। তাই নিরিবিলি এক সময় সুযোগমতো দাম বাড়িয়ে বসে থাকলে সবাই ভালো থাকে।’
গরম মসলা ছাড়াও আদা, রসুন, জিরা, লবঙ্গ, আলু বোখারা, গোল মরিচ এবং কিসমিসের বাজারেও একই অবস্থা। বর্তমানে পাইকারি বাজারে পাটনার জিরা (ভালোমানের) বিক্রি হচ্ছে ৩০৮ টাক কেজিদরে। যা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা কেজিদরে। লবঙ্গ পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮২০ টাকা কেজিদরে। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকা কেজিদরে। আলু বোখারা পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা কেজিদরে, যা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকাদরে। গোলমরিচ প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা দরে, যা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা দরে। পাইকারি বাজারে কিসমিস বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকা কেজিদরে, যা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩৬০ টাকা কেজিদরে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চকবাজারের গরম মসলার আমদানিকারক আবুল বাশার বলেন, ‘বেশি দামে আমদানি করতে হয়েছে বলে দাম বেড়েছে গরম মসলার প্রতিটি আইটেমের। আমরা যেমন দামে কিনি তেমন দামেই বিক্রি করি। বাইরের বাজারে তো আর আমাদের হাত নাই।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা সিন্ডিকেট করে কোরবানিকে উছিলা করে মসলার দাম বাড়াইনি। বাইরের বাজারে যখন বেড়েছে, তখন আমাদের বাজারেও বেড়েছে।’
রোজার ঈদের পরপরই প্রতিকেজি আদার দাম বেড়ে ১৫০-১৬০ টাকায় স্থির হয়ে আছে। একইভাবে রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা কেজিদরে।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, কোরবানির সময় এর দাম আর বাড়বে না। তবে কমারও কোনও সম্ভাবনা নেই। প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৬-৩৮ টাকা দরে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪৫-৪৮ টাকায়। ভারতীয় আমদানি করা পেঁয়াজের কেজি ছিল ৩২-৩৪ টাকা। বর্তমানে তা ২৮-৩০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। পচনশীল বলে পেঁয়াজের মজুত বেশি দিন ধরে রাখা যাচ্ছে না। চাহিদায়ও কোনও পরিবর্তন আসেনি, আসবেও না। কারণ উৎপাদন ও আমদানি দুটোই বেশি হয়েছে। লোকসান ঠেকাতে ব্যবসায়ীরা মজুত করা পেঁয়াজ বাজারে ছেড়ে দিয়েছেন। তাই সরবরাহ ব্যাপক। এতে দাম কমেছে অনেকটা।
গরম মসলার দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘মসলার আইটেমগুলো আমদানিনির্ভর। ওইসব পণ্যের আমদানি মূল্য যদি বাড়ে, তাহলে পণ্যের দাম বাড়বে এটি স্বাভাবিক। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে যদি গরম মসলার মূল্য না বাড়ে, দেশীয় বাজারে সিন্ডিকেট করে যদি কেউ বাড়তি দাম রাখে, তবে অবশ্যই সে অপরাধী। এক্ষেত্রে সরকার কর্তব্য পালনে পিছপা হবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম যাতে কোরবানি উপলক্ষে না বাড়ে সেদিকে মন্ত্রণালয়ের নজর রয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং টিম নিয়মিত মনিটর করছে। যদি কারসাজির বিষয়টি ধরা পড়ে, তবে অবশ্যই তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।’