২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৯:০৯

কোন দুধ খাবো

দেশজনতা অনলাইন : মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়োটিক ও সিসার উপস্থিতির কারণে বিএসটিআই’র অনুমোদিত ১৪টি কোম্পানির পাস্তুরিত দুধ উৎপাদন ও বিপণনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন হাইকোর্ট। রবিবার (২৮ জুলাই) আদালতের দেওয়া এই আদেশের পর থেকে বাজার দুধশূন্য হয়ে পড়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, প্রথম সারির এই কোম্পানিগুলোর দুধ বাজারে না থাকায় ভোক্তারা এখন কোন ধরনের দুধ খাবেন? যারা দুধের এই নানাবিধ ক্ষতিকর দিকগুলোর উপস্থিতি নিয়ে গবেষণা করেন, তারা বলছেন—ভেজাল না খেয়ে ভালো দুধ খাওয়ার অপেক্ষা করুন। কিছুদিন কষ্ট হবে, কিন্তু দ্রুতই সমাধান হয়ে যাবে।

দুগ্ধজাত পণ্য মানেই ক্যালসিয়ামের মাত্রা পর্যাপ্ত। স্বাস্থ্যকর হাড়, পেশি তৈরি থেকে শুরু করে শরীরে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি এবং ভিটামিন ডি সবকিছুর জন্যই দুধের মুখাপেক্ষী হতে হয়। এছাড়া, দুধ এবং দুধের পণ্যগুলোতে ফসফরাস থাকে। বিশেষ করে শিশুর বিকাশের প্রাথমিক  পর্যায়ের বছরগুলোতে এ কারণেই দুধ এত প্রয়োজনীয়। বাজারে দুধের জোগান না থাকলে এই শিশুরাইবা কী খাবে? চিকিৎসকরা বলছেন, কয়েকদিন দুগ্ধজাত পনির ধরনের জিনিস খাওয়ানো যেতে পারে। সরাসরি দুধটা ক্ষতিকর বলেই এড়িয়ে যেতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল রিসার্স সেন্টারের সদ্য সাবেক পরিচালক আ ব ম ফারুক মনে করেন, খারাপ কিছুর ভোক্তা না হয়ে ভালো কিছুর জন্য অপেক্ষা করা উচিত। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মেঘ দেখে করিস নে ভয়। আড়ালে সূর্য হাসে। হাইকোর্ট যেভাবে নির্দেশনা দিচ্ছেন সেটা ইতিবাচক। কোম্পানিগুলো যদি সেসব মানে, তাহলে ভালো হবে। দুধ কয়েকদিন না পেয়ে ভোক্তাদের কষ্টতো হবেই। আমার নিজেরও রোজ এক গ্লাস দুধ খাওয়ার জন্য চিকিৎসকদের পরামর্শ রয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্যহানিকরটা খাবো না বলে আমি নিজেও অপেক্ষা করছি। দেখা যাক, কী হয়।’
গত ২০ জুলাই দুধের মান বাড়াতে পাস্তুরিত দুধ প্রস্তুতকারকদের কিছু পরামর্শও দেন তিনি। তিনি মনে করেন, দুধকে আরও মানসম্মত করতে হলে, যারা দুধ পাস্তুরাইজেশন করেন, তাদের সঠিক নির্দেশনা দেওয়া প্রয়োজন। আর পাস্তুরাইজেশনের যে চেক পয়েন্টগুলো রয়েছে, সেগুলোকে আরও আন্তরিকতার সঙ্গে যেন দেখা হয়। তাহলে পাস্তুরাইজেশনে জীবাণু থাকার কোনও কারণ নেই। ত্রুটি থাকে। এসব দিকে নজর রেখে দুধ পাস্তুরিত করলে জীবাণুমক্ত হবে।

ময়মনসিংহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি সায়েন্সের অধ্যাপক নূরুল ইসলাম  বলেন, ‘বাজারে এসব দুধ না থাকলে চাহিদায় ঘাটতি হবে বিষয়টা এমন না। আমি বলতে চাই, আমাদের আগেই ৬০ শতাংশ চাহিদা পূরণ হতো, ৪০ শতাংশ ঘাটতি থাকতো। এমনিতেই আগে থেকেই গ্যাপ আছে। এখন দুধের বিষয়ে উচ্চ আদালত যা বলছেন, তাদের নিশ্চয়ই পরিকল্পনা আছে, কীভাবে বিষয়টির ভালো সমাধান আসবে।’

‘হেলথ অ্যান্ড হোপ’ হাসপাতালের চেয়ারম্যান এবং প্রিভেনটিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরীও মনে করেন, ভেজাল খাওয়ার চেয়ে দুধ না খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। তিনি  বলেন, ‘আমরা প্রত্যাশা করবো হাইকোর্ট যেভাবে বলছেন, কোম্পানিগুলো আগামী পাঁচ সপ্তাহের নিষেধাজ্ঞার মধ্যে দূষণমুক্ত দুধ বাজারে আনবে।’

শিশুদের এই দুধের প্রয়োজনই নেই, উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘প্রাকৃতিক নিয়মে জন্মের আড়াই বছর পর মায়ের দুধ কমতে শুরু করে। এরপর শিশুর আর সেটির প্রয়োজন হয় না। শিশুকে ছয় মাস পর শক্ত খাবার আর নয় মাস পর স্বাভাবিক খাবার দিতে বলি আমরা। অতিরিক্ত যত্ন করতে গিয়ে অভিভাবকরা এসব দুধ, গুঁড়ো দুধ টিন জাতীয় দুধ বেশি খাওয়ান।’

উল্লেখ্য, সরকার পরিচালিত সমবায় সমিতির মিল্ক ভিটাসহ মোট ১৪টি কোম্পানি বিএসটিআই থেকে অনুমোদন নিয়ে পাস্তুরিত দুধ উৎপাদন করে আসছিল। প্রায় মাসখানেক আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা মিল্ক ভিটা, প্রাণ, আড়ং, ইগলু, ফার্ম ফ্রেশের মতো কোম্পানিগুলোর দুধের নমুনা পরীক্ষা করে মানবদেহে ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিক পান।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তানজির আহমেদের করা রিট আবেদনের শুনানি করে রুলসহ আদেশ আসে হাইকোর্ট থেকে। দুধে ক্ষতিকর উপাদান পাওয়া যাওয়ায় বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের বেঞ্চ ওই ১৪ কোম্পানির পাস্তুরিত দুধ উৎপাদন ও বিপণনে পাঁচ সপ্তাহের নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।

প্রকাশ :জুলাই ২৯, ২০১৯ ৪:৩৪ অপরাহ্ণ