২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৮:১৮

বন্যায় বিপর্যস্ত লাইন নিয়ে বিপাকে পশ্চিমাঞ্চল রেল

ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী : উত্তরাঞ্চলে বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে রেলযোগাযোগ। বন্ধ হয়ে গেছে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বেশ কয়েকটি রুটের ট্রেন চলাচলও। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোর বন্যাতে এ রকম ভাঙনের কবলে পড়েনি রেললাইন। তবে আসছে কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে দ্রুত রেললাইন পুনঃস্থাপন করতে চায় তারা। কিন্তু তা সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে সংশয় কাটছে না।

বন্যায় রেলওয়ের ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এতে দেখা গেছে, সাতটি রুট বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে রেলওয়ের বেনারপাড়া-বাদিয়াখালী (৩৬৮/০-৩৭৪/৪) সেকশনে রেললাইনের ওপর দিয়ে এখনও পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এ অবস্থায় বিভাগীয়ভাবে ছোট ছোট স্পটে মেরামত কাজ শুরু করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষ বলছে, পুরোপুরি কাজ শেষ করতে আগামী ২৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় লাগবে। আর কোরবানির ঈদের ছুটি শুরু হতে পারে আগামী ১০ বা ১১ আগস্ট। ফলে এই রুটে ঈদযাত্রীদের ট্রেনযাত্রায় বিঘ্ন ঘটবেই। এ রুটে ঈদের আগে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা কম।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তাদের বাদিয়াখালী রোড-ত্রিমোহনী জংশন স্টেশনের মধ্যবর্তী স্থানে রেললাইন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ঢাকা-লালমনিরহাট রুটে চলাচলকারী লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকা-সান্তাহার-বগুড়া-বোনারপাড়া-কাউনিয়া-লালমনিরহাট রুটের বদলে ঢাকা-সান্তাহার-পার্বতীপুর-লালমনিরহাট রুট দিয়ে চলাচল করছে। একইভাবে রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকা-সান্তাহার-বগুড়া-বোনারপাড়া-কাউনিয়া-রংপুর রুটের বদলে ঢাকা-সান্তাহার-পার্বতীপুর-রংপুর রুট দিয়ে যাতায়াত করছে।

আন্তঃনগর দোলনচাঁপা এক্সপ্রেস ট্রেনটি দিনাজপুর-সান্তাহার-দিনাজপুর রুটের বদলে দিনাজপুর-গাইবান্ধা-দিনাজপুর রুটে এবং আন্তঃনগর করতোয়া এক্সপ্রেস সান্তাহার-বুড়িমারী-সান্তাহারের বদলে সান্তাহার-বোনারপাড়া-সান্তাহার দিয়ে চলাচল করছে। পদ্মরাগ এক্সপ্রেস ট্রেনটি বন্যার কারণে বাদিয়াখালী স্টেশনে আটকা পড়ায় বন্ধ রয়েছে সান্তাহার-লালমনিরহাট-সান্তাহার রুটের ট্রেন চলাচল। পাঁচপীর-উলিপুর স্টেশনের মধ্যে রেললাইন পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ৪২১-৪২২ নম্বর লোকাল ট্রেন পার্বতীপুর-কুড়িগ্রাম-পার্বতীপুর ও ৪১৫-৪১৬ নম্বর লোকাল ট্রেন তিস্তা জংশন-কুড়িগ্রাম-তিস্তা জংশন রুটে চলাচল করছে।
একইভাবে বালিয়াখালী-গাইবান্ধা রুটে রেললাইনের ওপর দিয়ে তীব্রভাবে স্রোত প্রবাহিত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত রুটগুলোর মধ্যে এই রুটটি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর পাঁচটি স্থানে রেললাইনের নিচের মাটি, পাথর ও বালি সরে গিয়ে গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ রুটের ৩৭৪/৪-৩৭৪/৬ সেকশনে রেলওয়ে লাইনের নিচ থেকে মাটি ও পাথর সরে গিয়ে ১৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের ১৬ ফুট গভীর একটি গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। একই রুটের ৩৭৫/০-২ সেকশনে ১৫ ফুট দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট ১০ ফুট গভীরতায় দুটি গর্ত সৃষ্টি হয়। এছাড়া ৩৭৫/২-৪ ও ৩৭৬/০-৩৭৬/৪ সেকশনে ৫০০ ও ৬০০ ফুট দৈর্ঘ্যের দুটি ১৮ ফুট গভীরতায় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক ইঞ্জিনিয়ার খোন্দকার শহীদুল ইসলাম বলেন,  গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের বিভিন্ন স্থানে রেললাইন বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। কোথাও কোথাও রেল সড়ক ভেঙে স্রোতের তোড়ে ভেসে গেছে। আবার কোথাও কোথাও মাটি ও পাথরসহ রেলপথ দেবে গেছে। এ অবস্থায় কয়েকটি স্টেশনের সঙ্গে ঢাকার এখনও সরাসরি রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। বিভিন্ন স্থানেও ট্রেন আটকা পড়েছে। তবে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে ঈদেও ছুটির আগেই রেললাইনগুলো সচল করার। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন। ক্ষতিগ্রস্ত লাইন পুনঃস্থাপন করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন তিনি।

প্রকাশ :জুলাই ২৭, ২০১৯ ২:১৪ অপরাহ্ণ