২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৪:০৬

যে প্রক্রিয়ায় জবানবন্দি পরিবর্তনের আবেদন করতে পারবেন মিন্নি

বরগুনা থেকে : পুলিশ নির্যাতন করে রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় তার স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেছে বলে দাবি করেছেন মিন্নির পরিবার ও তার আইনজীবী। মিন্নি জবানবন্দি পরিবর্তন করতে চান বলেও জানান তারা। তবে এই জবানবন্দি পরিবর্তনের জন্য মিন্নিকে বেশ কয়েকটি ধাপের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। নির্যাতন বা জোর করে জবানবন্দি নেওয়ার বিষয়টি আদালতে প্রমাণও করতে হবে।

মিন্নির আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম জানান, ‘বুধবার (২৪ জুলাই) মিন্নির সঙ্গে দেখা করার সময় আমি জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদনপত্র নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ তা অনুমোদন করেনি। তারা বলেছে, এ ধরনের আবেদনপত্র বাইরে থেকে দেওয়ার কোনও উপায় নেই। এই আবেদন মিন্নিকে নিজ হাতে লিখতে হবে। এজন্য তাকে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে কাগজ ও কলম চাইতে হবে। আমি বলে এসেছি চাইতে। আমি মিন্নিকে সব বুঝিয়ে দিয়ে এসেছি কীভাবে আবেদন করতে হবে।’

এ বিষয়ে জেল সুপার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত মিন্নি কারা কর্তৃপক্ষের কাছে কাগজ-কলম চাননি। তবে তিনি যদি আবেদন করেন তবে কাগজ ও কলম সরবরাহ করা হবে। জবানবন্দি প্রত্যাহার ছাড়াও যে কোনও আবেদন আসামি যদি করতে চান, জেল সুপার মাধ্যমেই করতে হবে। এটাই কারা বিধি। জেল কর্তৃপক্ষ সেটা কোর্টে পাঠাবে। আইনজীবীর কোনও ভূমিকা নেই। আর কোর্টে পাঠানোর আগে আমি চেক করবো আবেদন ঠিক আছে কিনা।’

ঢাকা জজকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী প্রকাশ বিশ্বাস এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘যদি আসামি কারাগারে থাকেন, সেক্ষেত্রে জবানবন্দি প্রত্যাহারের জন্য তাকেই আবেদন করতে হবে। কারাবিধি অনুযায়ী এটাই নিয়ম। যদি আসামি লিখতে সমর্থ না হন, তাহলে আদালতের সম্মতি নিয়ে ও বিচারকের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে আবেদন আদালতে গৃহীত হলেও বিচার শুরুর পর সাফাই সাক্ষীর মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে যে প্রথম জবানবন্দি জোর করে নেওয়া হয়েছিল।’

গত ১৯ জুলাই শুক্রবার বেলা ৩টার দিকে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মিন্নির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়া হয়। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি। তবে মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর দাবি করেছেন, নির্যাতন ও জোর-জবরদস্তি করে তার মেয়ের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। তার আইনজীবী মাহবুবুল বারীও বলেছেন, ‘জেল সুপারের সামনে মিন্নি বলেছেন, তার সঙ্গে জোর-জবরদস্তি হয়েছে। তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়েছে।’

মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) মিন্নির জামিন আবেদন গ্রহণ করেছেন বরগুনা জেলা দায়রা ও জজ আদালত। মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) বিচারক আসাদুজ্জামানের এজলাসে জামিন আবেদনের শুনানি হয়। পরে ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে নথি তলব করেন এবং আদেশ দেওয়ার জন্য ৩০ জুলাই তারিখ নির্ধারণ করেন আদালত।

রিফাত হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত মিন্নিসহ ১৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা সবাই ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। প্রধান আসামি নয়ন বন্ড ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে। তবে মামলার এজাহারভুক্ত ১২ আসামির মধ্যে এখনও চার জন গ্রেফতার হয়নি। তারা হচ্ছে−মুসা, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রায়হান ও রিফাত হাওলাদার। আগামী ৩১ জুলাই মামলার চার্জ গঠনের তারিখ ধার্য রয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২৬ জুন সকালে প্রকাশ্যে বরগুনা সরকারি কলেজ গেটের সামনে রিফাতকে কুপিয়ে আহত করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় বরিশাল নেওয়ার পর তিনি মারা যান। এ ঘটনায় রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা থানায় হত্যা মামলা করেন।

প্রকাশ :জুলাই ২৫, ২০১৯ ৩:৩৪ অপরাহ্ণ