২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১২:৫২

বয়স্ক নয়, নিয়মিতদের হাতেই ছাত্রদলের নেতৃত্ব দিতে অনড় বিএনপি

 

দেশজনতা অনলাইন : বয়স্ক ছাত্রনেতা এবং কর্মীদের প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের পরও নিয়মিত শিক্ষার্থীদের দিয়েই ছাত্রদল পরিচালনার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে বিএনপির হাই কমান্ড। দলটির নেতারা বলছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে চলমান বিভাগীয় সমাবেশের চূড়ান্ত কর্মসূচি হবে ঢাকায়। এর আগেই ছাত্রদলে নতুন নেতৃত্ব আনার সবরকম চেষ্টা শুরু হয়েছে। গত একমাসে বয়স্ক বিদ্রোহীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে প্রাথমিক সমাধানের দিকে এগিয়েছেন বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।

২০১৪ সালে অক্টোবরে রাজীব আহসানকে সভাপতি ও আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করেছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দুই বছর মেয়াদি ওই কমিটি পাঁচ বছর পর ভেঙে দেওয়া হয় এ বছরের ৩ জুন। এরপর রবিবার (২৩ জুন) পরবর্তী কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। ওই ঘোষণা অনুযায়ী ১৫ জুলাই ছাত্রদলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও বিদ্রোহীদের বিক্ষোভে তা বাতিল হয়।

বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বলছেন, অচিরেই নতুন কাউন্সিলের দিনক্ষণ নির্ধারণ করে সংবাদ সম্মেলন করা হবে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশ অনুযায়ী নিয়মিত শিক্ষার্থীদের দিয়েই ছাত্রদলের নেতৃত্ব দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে ছাত্রদলের নতুন নেতৃত্ব খুঁজতে গঠিত সার্চ কমিটির প্রধান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘আমরা নেতৃত্ব সার্চ করছি না, প্রক্রিয়া ঠিক করছি। ছাত্রদলের ভবিষ্যৎ খুব শুভ। ছাত্ররাই ছাত্ররাজনীতি করবে। যারা বুঝতে পারছে না, তাদের বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ছাত্রদলের নেতৃত্ব সার্চ করবে, যাদের নেতৃত্ব দেওয়া হবে তারা। ভোটের মধ্য দিয়ে নেতৃত্ব ঠিক হবে।’

বিএনপির দায়িত্বশীল একটি পক্ষের অভিযোগ, সার্চ কমিটির নেতারা নিজেদের মধ্যে সিন্ডিকেট বজায় রাখতে গিয়েই কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হয়েছে। তারেক রহমান নিজ উদ্যোগে ছাত্রদলের সাবেক সব সভাপতি ও সেক্রেটারিকে দিয়ে কমিটি করে দিলেও তারা নিজেরা বিভক্ত থাকায় সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি।

এই পক্ষটির দাবি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আল মেহেদি তালুকদারকে কেন্দ্রীয় সভাপতি বানাতে সার্চ কমিটির কয়েকজন সদস্যের তৎপরতা ছিল লক্ষণীয়। একইসঙ্গে নিয়মিতদের দিয়ে ছাত্রদলের কমিটি করতে তারেক রহমান সক্ষম হলে অন্যান্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোতেও এই প্রক্রিয়ায় শুরু হবে। আর এখানেই ভয় সিন্ডিকেটের। সে কারণেই ছাত্রদলে নিয়মিত নেতৃত্ব আনতে অনীহা রয়েছে সার্চ কমিটিরই কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘যারা অভিযোগ করছেন, তারা অবুঝ। পরিস্থিতি না বুঝে মন্তব্য করাই তাদের কাজ। এটা সবখানেই আছে।’

সার্চ কমিটির আরেকজন সদস্য দাবি করেন, ‘ছাত্রদলের পুরো পরিস্থিতি কোথায় যাচ্ছে, আমি বুঝতে পারছি না। এখন আর আমাদের হাতে কিছু নেই।’

বিএনপির একটি দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, তারেক রহমান দলের নেতৃত্ব পাওয়ার পর প্রথম সিদ্ধান্ত দিয়েছেন ছাত্রদল নিয়ে। আর এই সিদ্ধান্ত অকার্যকর হলে তার নেতৃত্ব নিয়েই প্রশ্ন উঠতে পারে। সেদিক থেকে ছাত্রদলের দুটি সিন্ডিকেট তারেকের সিদ্ধান্ত কার্যকর করার বিপক্ষে। যদিও বিএনপির হাই কমান্ডের একাধিক ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি, যেকোনও অবস্থায় ছাত্রদলের নেতৃত্বে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ফেরানো হবে।

ছাত্রদলের ঢাকা মহানগরের একজন প্রথম সারির নেতা  বলেন, ‘জ্যেষ্ঠ নেতাদের কাছে বিষয়টি ইগোর ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এটাই ঠিক, বিদ্রোহের প্রতি বিএনপির হাই কমান্ড যদি দুর্বলতা দেখান, তাহলে পরবর্তী সময়ে নতুনদের কাছে তা পাথেয় হয়ে থাকবে। পার্টির সিদ্ধান্ত না মানলে প্রিভিলেজ পাওয়া যাবে না, এটা প্রমাণ করতে হবে। এ কারণেই ছাত্রদের নেতৃত্ব নিয়মিতদের হাতে দিতে হবে। নিয়মিত ছাত্রদের হাতে ছাত্রদলের নেতৃত্ব না গেলে ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রদল করার মতো কর্মী পাওয়া যাবে না।  যারা জ্যেষ্ঠ, তারা ক্যাম্পাসের বাইরে, তাদের দিয়ে ছাত্রদলের ভবিষ্যৎ কতটা নিশ্চিত হবে, তা নিশ্চয়ই তারেক রহমান ভালো বুঝতে পারছেন।’

বুধবার (২৪ জুলাই) ছাত্রদলের বহিষ্কৃত নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন সংগঠনটির সংকট নিরসনে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু।

বৈঠকে অংশ নেওয়া ছাত্রদলের এক বহিষ্কৃত নেতা জানান, আমরা তিনটি দাবি তুলে ধরেছি। প্রথম দাবি হচ্ছে, (১২ জনের) বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার এবং নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ভাঙচুরের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা। দ্বিতীয় দাবি, আগামী ১ জানুয়ারি ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পর্যন্ত আহ্বায়ক কমিটি করা। তৃতীয় দাবি, আমরা সরাসরি তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করতে চাই; সেখানে তিনি যে সমাধান দেবেন, সেটা আমরা মেনে নেবো।’

ছাত্রদলের বহিষ্কৃত একজন সহসভাপতি বলেন, ‘ছাত্রদলের সংকট সমাধানে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন সার্চ কমিটি ও দলের স্থায়ী কমিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই নেতা। এখন এর সমাধান করতে পারেন একমাত্র তারেক রহমান। তিনি যদি সরাসরি আমাদের সঙ্গে কথা বলেন, এর সমাধান হয়ে যায়। খালেদা জিয়া থাকলে এতদিনে এর সমাধান হয়ে যেতো। তিনি যেহেতু কারাগারে, ফলে ছাত্রদলের সমস্যা সমাধানে তারেক রহমানকে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে হবে।’

ছাত্রদলের বহিষ্কৃত সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আজম সৈকত বলেন, ‘আমাদের দাবি হচ্ছে—বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করা এবং আগামী ১ জানুয়ারি ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পর্যন্ত আহ্বায়ক কমিটি করা। আহ্বায়ক কমিটি কাউন্সিল করে পরবর্তী সময়ে কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবে।’

সার্চ কমিটির সদস্য বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন বলেন, ‘আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ছাত্রদলের সংকট সমাধান করা হচ্ছে।’

তিনি  আরও বলেন, ‘ক্ষুব্ধ ছাত্রদল নেতাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হবে। যারা বয়সের কারণে কাউন্সিলে অংশ নিতে পারবে না, তাদের আগামীতে দলের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠন ও মূল দলে মূল্যায়িত করা হবে।’

প্রকাশ :জুলাই ২৫, ২০১৯ ১১:১৩ পূর্বাহ্ণ