২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১:১৬

বৈদেশিক বাণিজ্যের তিন খাতেই স্থবিরতা

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে রফতানিতে প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়ায় ৫.২৭ শতাংশে। রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়ায় ১.১৭ শতাংশে। মে মাসে আমদানিতেও প্রবৃদ্ধি কম হয়েছে ৮.৪৫ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক ড. জায়েদ বখত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সামনে কোরবানির ঈদ। আগামী মাসে (আগস্ট) প্রবাসীদের হয়তো বেশি করে রেমিট্যান্স পাঠাতে হবে, সেজন্য এখন একটু কম পাঠাচ্ছেন তারা। এজন্য রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি কম হয়েছে।’

তিনি বলেন,  ‘অনেক সময় শিপমেন্ট কমে গেলে রফতানিতে তার প্রভাব পড়ে। তবে খাদ্য উৎপাদন বেড়ে যাওয়ার কারণে খাদ্যশস্য আমদানি কমেছে, ফলে আমদানি ব্যয় কমে গেছে। এছাড়া সরকারের বড় বড় প্রকল্পের জন্য আমদানি আগের মতো করতে হচ্ছে না। আবার টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমদানিতে বেশি অর্থ খরচ হচ্ছে। এতে অনেকেই আমদানিতে অনুৎসাহিত হচ্ছেন। ফলে আমদানি ব্যয় কমে গেছে।’

গত জুনে রফতানি আয় হয়েছে ২৭৮ কোটি ৪৪ লাখ ডলার। যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৬০ কোটি ডলার। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় জুনে রফতানি আয় কমেছে ২২.৬৫ শতাংশ। গত বছরের জুনে রফতানি আয় হয়েছিল ২৯৩ কোটি ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পণ্য রফতানি করে ৪ হাজার ৫৩ কোটি ডলার আয় হয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের রফতানি আয় ছিল তিন হাজার ৬৬৬ কোটি ৮১ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের মোট রফতানি আয়ে পোশাকের অবদান ছিল ৮৪ শতাংশের বেশি। তবে হোমটেক্স, টেরিটাওয়েলসহ এ খাতের অন্যান্য রফতানির উপখাত হিসাব করলে তৈরি পোশাক খাতের অবদান ৮৯ শতাংশেরও বেশি হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে, ২০১৯ সালের জুনে রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধিও হয়েছে মাইনাস ১.১৭ শতাংশ। ২০১৮ সালের জুনে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিল ১৩৮ কোটি ৪৩ লাখ ডলার। চলতি বছর জুনে প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ১৩৬ কোটি ৮২ লাখ ডলার।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি মনে করা হয় বিভিন্ন দেশে থাকা বাংলাদেশিদের পাঠানো অর্থ বা রেমিট্যান্সকে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ৩০ জুন শেষ হওয়া এই অর্থবছরে (২০১৮-১৯) এক হাজার ৬৪১ কোটি ৯৬ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অংক গত অর্থবছরের চেয়ে ৯.৬০ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স থেকে আয় হয়েছিল এক হাজার ৪৯৮ কোটি কোটি ১৬ লাখ ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, মে মাসে আমদানি বাণিজ্যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাইনাস ৮.৪৫ শতাংশ। এপ্রিলে আমদানি বাণিজ্যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাইনাস ৬.১২ শতাংশ।

২০১৮ সালের মে মাসে আমদানিতে ব্যয় হয়েছিল ৫৫৯ কোটি ৭৩ লাখ ডলার। ২০১৯ সালের একই সময়ে আমদানি ব্যয় হয়েছে ৫১২ কোটি ৪৪ লাখ ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০১৮ সালের মার্চে আমদানি ব্যয় হয়েছিল ৪৮৪ কোটি ২০ লাখ ডলার। চলতি বছর একই সময়ে আমদানি ব্যয় হয়েছে ৪৮৯ কোটি ৩৬ লাখ ডলার।

দেশের ভেতরের চাহিদা মেটাতে বিদেশ থেকে চাল ও গম আমদানি কমেছে। এই অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত ১১ মাসে চাল ও গম আমদানির জন্য লেটার অব ক্রেডিট বা এলসি খোলার পরিমাণ কমেছে ৬২.৫৯ শতাংশ। এসময়ে এলসি নিষ্পত্তি কমেছে ৫৩.৭১ শতাংশ। জুলাই থেকে মে এই ১১ মাসে শিল্পের জন্য ক্যাপিটাল মেশিনারির এলসি খোলার পরিমাণ কমেছে ৩০.২৫ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, এ সময়ে সার্বিক এলসি খোলার পরিমাণ কমেছে ১৭.৫০ শতাংশ। অবশ্য এ সময়ে সার্বিক এলসি নিষ্পত্তি বেড়েছে ৫.৮৩ শতাংশ।

 

প্রকাশ :জুলাই ১৭, ২০১৯ ১২:২০ অপরাহ্ণ