ইংল্যান্ড এবার চতুর্থবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছে। ১৯৭৯, ১৯৮৭ ও ১৯৯২ আসরে ইংলিশরা ফাইনালে উঠলেও শিরোপা জিততে পারেনি। অন্যদিকে, নিউজিল্যান্ড এবার দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে ওঠে। গত আসরে ফাইনালে উঠলেও অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে তারা রানার্স আপ হয়েছিল।
এবার ১৫ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষে থেকে সেমিফাইনালে উঠেছিল ভারত। ১৪ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে থেকে শেষ চারে উঠেছিল অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু এই দুই দলের কেউই ফাইনালে উঠতে পারেনি। ফাইনালে ওঠে তৃতীয় অবস্থানে থেকে লিগ পর্ব শেষ করা ইংল্যান্ড ও চতুর্থ অবস্থানে থেকে সেমিফাইনালে ওঠা নিউজিল্যান্ড।
ফেভারিট হিসাবেই বিশ্বকাপ মিশন শুরু করে ইংল্যান্ড। শুরুর দিকে তারা একের পর এক জয় পেলেও মাঝে শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে বিদায়ের শঙ্কা তৈরি হয় তাদের। তবে, শেষ দুই ম্যাচে ভারত ও নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে তারা সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে। লিগ পর্বে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৬৪ রানে হারলেও সেমিফাইনাল ম্যাচে অজিদের ৮ উইকেটে হারায় ইয়ন মরগ্যানের দল।
অন্যদিকে, নিউজিল্যান্ড যেভাবে খেলেছে বলতে গেলে তার চেয়ে তাদের ‘ভাগ্য সহায়’ হয়েছে বেশি। কারণ, বেশ কয়েকটি ম্যাচে তারা হারতে হারতে শেষ মুহূর্তের নাটকীয়তায় জয় তুলে নেয়। যেমন বাংলাদেশের বিপক্ষে তারা হারতে হারতে শেষমেশ দুই উইকেটে জয়ের দেখা পায়। আবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ব্র্যাথওয়েটের ওই বলটি ছক্কা হয়ে গেলে সেমিফাইনালেই খেলা হতো না কিউইদের। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও শেষ মুহূর্তের নাটকীয়তায় জয়ের দেখা পায় কেন উইলিয়ামসনের দল।
সেমিফাইনালে ওঠার ক্ষেত্রেও কতো নাটকীয়তা। লিগ পর্ব শেষে নিউজিল্যান্ডের পয়েন্ট ছিল ১১। আবার পাকিস্তানেরও পয়েন্ট ছিল ১১। তবে, নেট রান রেটে এগিয়ে থাকায় সেমিতে খেলার সুযোগ পায় কিউইরা। সেমিফাইনাল ম্যাচেও ভাগ্য সহায় হয় নিউজিল্যান্ডের। ভারতের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে ২৩৯ রান করেও পরে জিতে যায় তারা। শেষ মুহূর্তে ধোনি রান আউট না হলে ম্যাচটি হয়তো ভারতই জিতত! কিন্তু ধোনির রান আউটে বদলে যায় ম্যাচের চিত্র।
ফাইনাল ম্যাচে ইংল্যান্ড দলের অন্যতম ভরসা হবে দুই ওপেনার জনি বেয়ারস্টো ও জ্যাসন রয়। অধিকাংশ ম্যাচেই তারা দলের শক্ত ভিত গড়ে দিয়েছেন। পরে রুট-মরগ্যান-স্টোকসরা বড় স্কোর গড়েছেন। ইংল্যান্ডের বোলিং সাইডও অনেক শক্তিশালী। সেমিফাইনাল ম্যাচে এক ক্রিস ওয়েকসই অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইন আপে ধস নামিয়েছিলন। আবার জফরা আর্চার-মার্ক উডরাও দুর্দান্ত বোলিং করছেন।
নিউজিল্যান্ডও ভারসাম্য দল। নিউজিল্যান্ডের ওপেনিং জুটি ভালো না করতে পারলেও পরে কেন উইলিয়ামসন ও রস টেইলর দলের শক্ত ভিত গড়ে দিচ্ছেন। দুজনই অসাধারণ ব্যাট করছেন। বোলিংয়ে নিউজিল্যান্ডের মূল শক্তি দুই পেসার ম্যাট হেনরি ও ট্রেন্ট বোল্ট।
এবারের বিশ্বকাপে বৃষ্টি বেশ ভুগিয়েছে। বৃষ্টির কারণে চারটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়। ভারত ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার প্রথম সেমিফাইনাল ম্যাচটি বৃষ্টির কারণে রিজার্ভ ডে’তে গড়ায়। ফাইনাল ম্যাচেও যদি বৃষ্টি হয় তবে রিজার্ভ ডে’তে খেলা হবে।
এবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে আইসিসি বিশ্বকাপের ১২তম আসর। এর আগের ১১ আসরের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া পাঁচবার, ওয়েস্ট ইন্ডিজ দুইবার, ভারত দুইবার, পাকিস্তান একবার ও শ্রীলঙ্কা একবার করে শিরোপা জয় করে। অস্ট্রেলিয়া ও ভারত এবার সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নেয়। আর লিগ পর্ব থেকেই বিদায় নেয় পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১০ জুন প্রথম সেমিফাইনাল ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে ১৮ রানে হেরে বিদায় নেয় ভারত। আর ১১ জুন দ্বিতীয় সেমিফাইনাল ম্যাচে ইংল্যান্ডের কাছে ৮ উইকেটে হেরে বিদায় নেয় অস্ট্রেলিয়া।
বাংলাদেশ এবার বিশ্বকাপ মিশন শেষ করে অষ্টম অবস্থানে থেকে। লিগ পর্বে ৯ ম্যাচের মধ্যে বাংলাদেশ জয় পায় তিনটিতে। একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়। বাকি পাঁচ ম্যাচে হারে মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। এবার ব্যাটে ও বলে দুর্দান্ত খেলেছেন টাইগার অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। ব্যাট হাতে ৬০৬ রান করার পাশাপাশি বল হাতে ১১ উইকেট নেন তিনি। বিশ্বকাপের ইতিহাসে সাকিবের মতো এমন অলরাউন্ড নৈপুণ্য আগে কেউ দেখাতে পারেনি। এই বিশ্বকাপে দশ দলের মধ্যে এশিয়া থেকেই অংশ নেয় পাঁচটি দল। কিন্তু এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সেমিফাইনাল খেলে মাত্র একটি দল। তবে, ফাইনালে উঠতে পারেনি তারা।