১৯৪০ সালে ঠাকুরগাঁও জেলা শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ঠাকুরগাঁও-পীরগঞ্জ সড়কের পাশে শিবগঞ্জ এলাকার ৫৫০ একর জমির উপর স্থাপিত হয় বিমানবন্দরটি। যার রানওয়ে ছিল তিনটি এবং এতে সাব-রানওয়ে ছিল ১০টি।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বিমান চলাচল স্বাভাবিক ছিল । ওই সময় ঢাকা-ঠাকুরগাঁও রুটে নিয়মিত বিমান সার্ভিস চালু ছিল। এরপর যাত্রী স্বল্পতার অজুহাত দেখিয়ে সেটি বন্ধ হয়ে যায়।
১৯৮০ সালের দিকে বিমানবন্দরটি পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেজন্য কোটি টাকা ব্যয়ে টার্মিনাল ভবন নির্মাণ ও বিদ্যুতায়নের কাজসহ রানওয়ে মেরামতের কাজ শেষ করা হলেও পরবর্তীতে তা আর চালু করা হয়নি।
সড়কে অতিরিক্ত যানজট, ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাসে অপেক্ষা, দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে গিয়ে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকায় ঠাকুরগাঁও ও পার্শ্ববর্তী জেলার বাসিন্দারা দীর্ঘদিন থেকে বিমানবন্দরটি চালুর দাবি জানিয়ে আসছিল। এজন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সরকারের পক্ষ থেকে বিমানবন্দরটি চালুর আশ্বাসও মিললেও এখনও তা বাস্তবে রূপ দেয়া হয়নি।
১০ম সংসদের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর পরিদর্শন করে তা চালুর আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই আশ্বাস আলোর মুখ দেখেনি।
গত ১৫ এপ্রিল বিমানবন্দরটি পরিদর্শন করেন বর্তমান রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। বিমানবন্দরটি যেন চালু হয় তার যৌক্তিকতা তুলে ধরে তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি অবহিত করেন। তারপরেও জেলাবাসীর দাবি বাস্তবায়নে এখনো কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বিমানবন্দরটি চালু হতে এই আশায় এখনো বুধ বেঁধে আছেন ঠাকুরগাঁওবাসী।
ঠাকুরগাঁও চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি মোদাচ্ছের হোসেন বলেন, ‘এখন লেখাপড়া ও চিকিৎসা সবই হয়েছে রাজধানীভিত্তিক। সেজন্য পরিবারের সবাই ঢাকায় অবস্থায় করে। তাই আমাকেও মাঝে মাঝে ঢাকায় যেতে হয়। কিন্তু বাসে ঢাকা যাওয়া আর নিজের জীবনকে আজরাইলের হাতে তুলে দেওয়ার সামিল। সেক্ষেত্রে বিমান সার্ভিস চালু হলে সময় ও কষ্ট দুটোই লাঘব হবে।’
মোদাচ্ছের হোসেনের মতো একই বক্তব্য ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী, চিকিৎসক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গসহ অনেকের।
ঠাকুরগাঁওয়ের জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ের বন্ধ থাকা বিমানবন্দর চালুর দাবি এখন সময়ের দাবি। ইতোমধ্যে মাননীয় রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বিমানবন্দর এলাকা পরিদর্শন করে এটি চালুর সম্ভাব্যতা যাচাই করেছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এটি চালুর যৌক্তিকতা তুলে ধরে মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। এটি চালু হলে ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও দিনাজপুর জেলার মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে। সে দৃষ্টিতে বিমানবন্দরটি দ্রুত চালুকরণে সরকার এগিয়ে আসবেন বলে আশা করছি।