২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১০:৪৮

রিকশা বন্ধ : গাবতলী-আজিমপুর রোডে অম্লমধুর অভিজ্ঞতা

দেশজনতা অনলাইন : আবির হোসেন। ঢাকা কলেজের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। থাকেন গাবতলী। সপ্তাহের চার দিন তাকে কলেজে আসতে হয়। যানজট না থাকলে গাবতলী থেকে তার কলেজ আসতে সময় লাগে আধ ঘণ্টার মতো। আর যানজট থাকলে ঘণ্টাা বা তার চেয়ে বেশি সময়ের প্রয়োজন হয়। তবে আজকের দিনটা একটু অন্যরকম। গাবতলী থেকে কলেজ এসেছেন ২০মিনিটে।

আবির বলেন, ‘আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না এত কম সময়ে কলেজ আসা সম্ভব। কারণ এর আগে এমনটি ভুলেও হয়নি।’
পক্ষে বিপক্ষে নানা আলোচনার মধ্যেই ঘোষণা অনুযায়ী রাজধানীর গাবতলী থেকে আজিমপুর (মিরপুর রোড), সায়েন্স ল্যাব থেকে শাহবাগ ও কুড়িল থেকে রামপুরা হয়ে সায়েদাবাদ পর্যন্ত সড়কে আজ রবিবার থেকে রিকশা চলাচল বন্ধ করা হয়েছে।

তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধের প্রধান কারণ ছিল রিকশাসৃষ্ট এইসব সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি আর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাসগুলো গন্তব্য পৌঁছাতে পারে না পারা। রিকশা বন্ধের প্রথম দিন সকাল থেকে থেকে থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি হলে নগরীতে এমনিতে যানজট হয়। তবে এই তিন সড়কে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আগের মত তীব্র যানজট নেই। তুলনামূলক কম সময়ে যাত্রীরা পৌঁছেছে গন্তব্যে।

রিকশা বন্ধের প্রথম দিনে ট্রাফিক পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকেও নেওয়া হয়েছে কঠোর পদক্ষেপ। ট্রাফিক পুলিশ ও আনসার সদস্যরা কোনোভাবেই রিকশা মূল সড়কে উঠতে দেয়নি।

সুমন তার মাকে গ্রিন রোডের একটি হাসপাতাল থেকে ডাক্তার দেখিয়ে রিকশায় করে পপুলার মেডিকেল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করাতে নিয়ে  যাচ্ছিলেন। রিকশা সাইন্সল্যাবের মূল সড়কে পার হওয়ার চেষ্টা করলে সেখানে দায়িত্বরত আনসার মিজানুর রহমান তাদের বাধা দেয়। অসুস্থ মাকে সামান্য পথ হাঁটিয়ে নেওয়া বা এটুকু রাস্তার জন্য সিএনজি ভাড়া করা সম্ভব না বলে বারবার বোঝানোর চেষ্টা করে মিজানকে। কিন্তু মিজান তার দায়িত্বে অটল। তিনি কোনোভাবেই রিকশা যেতে দেবে না।

সুমন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘দেখেন না ভাই, এত করে বললাম তাও যেতে দিচ্ছে না। এখন এই অসুস্থ মাকে হাঁটিয়ে নেওয়া তো সম্ভব না।’

সায়েন্স ল্যাব থেকে একটু সামনে এগিয়ে কথা হয় ট্রাফিক পুলিশ রহমত আলীর সঙ্গে। তিনি জানান, রিকশা বন্ধে তিনি খুশি। কারণ এই রাস্তায় রিকশা সামলানো ট্রাফিক পুলিশের জন্য খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল।

তিনটি সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত জানানোর পর থেকেই শুরু হয় বিতর্ক। এ নিয়ে শনিবার বিক্ষোভও করে রিকশা শ্রমিকরা। যাত্রীরাও প্রশ্ন তুলেছেন, বিকল্প যানবাহন না থাকলে তারা কীভাবে চলবেন। আর এটা নিয়ে সবচেয়ে আরোচনা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। পক্ষে-বিপক্ষে নানা মন্তব্য এসেছে। তবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন, বিকল্প হিসেবে এসব রুটে বাস চালু করা হবে।

এর মধ্যে রিকশার জন্য আলাদা লেন করা, ভারো মানের গণপরিবহন বাড়ানোর দাবি উঠেছে। রিকশাচালকদের রুটি রুজির কথা চিন্তা করে কেউ কেউ আবার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবিও করেছে।

এসব সড়কে রিকশা নিয়ে যাতায়াত না করতে পারায় অনেকে আবার ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন। এদের একজন মুসলিম জাহান সেতু। বলেন, ‘আমার বাসা কাঁঠালবাগান। বাসার জন্য কিছু কেনাকাটা করেছি। এসব নিয়ে  নিউমার্কেট থেকে ল্যাবএইড হেঁটে যাওয়া সম্ভব? যতসব ফালতু সিদ্ধান্ত। রিকশা বন্ধ।’

পূর্ব রাজাবাজারের আরেক বাসিন্দা জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘নীলক্ষেত যাচ্ছি মেয়ের জন্য বই কিনতে। আমি অসুস্থ মানুষ, ল্যাবএইড থেকে নীলক্ষেত হেঁটে যাওয়ার মত অবস্থা আমার নাই। তাছাড়া এই পথ বাসও উঠাবে না। আমাদের মত মানুষদের জন্য চলাফেরা বড় কঠিন হয়ে গেল।’

সড়কে রিকশা বন্ধকে যারা ভালো সিদ্ধান্ত মনে করছেন তাদের একজন মহসীন হুসেন। তিনি বলেন, ‘খুব ভালো হয়েছে। মানুষ এত অলস হয়ে গেছে যে, সামান্য পথও হাঁটতে রাজি না। মানুষ না হাঁটতে হাঁটতে প্রচুর চর্বি জমে গেছে। এবার হেঁটে সেটা কমাক।’

প্রকাশ :জুলাই ৭, ২০১৯ ৬:৫১ অপরাহ্ণ