খেলা ডেস্ক
সাকিব আল হাসানের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে আফগানিস্তানের বিপক্ষে দাপুটে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। আফগানদের বিপক্ষে ৬২ রানের জয়ে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। নিজেদের পরের দুই ম্যাচে ভারত এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় পেলে বিশ্বকাপে প্রথমবার সেমিফাইনালে খেলার স্বাদ পাবে টাইগাররা। সোমবার ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটনে প্রথমে ব্যাট করে মুশফিকুর রহিম এবং সাকিব আল হাসানের জোড়া ফিফটিতে ৭ উইকেটে ২৬২ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে বাংলাদেশ।
প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই লিটন দাসের উইকেট হারায় টাইগাররা। দলীয় ২৩ রানে লিটন সাজঘরে ফেরার পর হাল ধরেন সাকিব-তামিম।
বাঁচা-মরার লড়াইয়ের ম্যাচে সাকিব-তামিম সাবধানি ব্যাটিং করে দ্বিতীয় উইকেটে ৫৯ রানের পার্টনারশিপ গড়েন। তাদের জুটিতে বড় স্কোরের স্বপ্ন দেখেছিল টাইগার সমর্থকরা। কিন্তু দলীয় ৮২ রানে মোহাম্মদ নবীর ঘূর্ণিতে বিভ্রান্ত হয়ে বোল্ড হয়ে বিদায় নেন তামিম ইকবাল। তার আগে ৫৩ বলে ৩৬ রান করেন দেশসেরা এ ওপেনার। তামিম আউট হলেও অনবদ্য ব্যাটিং করে যান সাকিব আল হাসান। তৃতীয় উইকেটে মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গে নিয়ে ৬১ রানের জুটি গড়েন সাকিব। আর এই জুটিতেই ফিফটির পর মুজিব-উর-রহমানের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে সাজঘরে ফেরেন সাকিব। তার আগে ৬৯ বলে ৫১ রান করেন তিনি। আর এই রান করার মধ্য দিয় এবারের বিশ্বকাপে ছয় ম্যাচে ৪৭৬ রান নিয়ে শীর্ষে উঠে যান বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডার।
সাকিবের বিদায়ের পর সুবিধা করতে পারেননি সৌম্য সরকার। ওপেনিংয়ের পরিবর্তে পাঁচ নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে নেমে মাত্র ৩ রানে ফেরেন সৌম্য। দলীয় ৩২ ওভারে ১৫১ রানে লিটন দাস, তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান ও সৌম্য সরকারের উইকেট পতনের পর দলের হাল ধরেন মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। পঞ্চম উইকেটে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে ৫৬ রানের জুটি গড়েন মুশফিক। উইকেটে সেট হয়ে যাওয়ার পর নিজের ইনিংসটা লম্বা করতে পারেননি রিয়াদ। গুলবাদিন নাইবের বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন তিনি। তার আগে ৩৮ বলে দুটি চারের সাহায্যে ২৭ রান করেন মাহমুদউল্লাহ।
তবে লিটন-তামিমের বিদায়ের পর ১৮তম ওভারে ব্যাটিংয়ে নামা মুশফিক শুরু থেকেই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেন। সাকিব ও মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ৬১ ও ৫৬ রানের জুটি গড়া মুশফিক, ষষ্ঠ উইকেটে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের সঙ্গে ৪৪ রানের পার্টনারশিপ গড়ে তোলেন। অন্যবদ্য ব্যাটিং করে সেঞ্চুরির পথেই ছিলেন মুশফিক। কিন্তু ইনিংসের শেষ দিকে বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে দৌলত জাদরানের বলে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। তার আগে ৮৭ বলে চারটি চার ও এক ছক্কায় ৮৩ রান করে ফেরেন মুশফিক। ইনিংসের শেষ বলে আউট হওয়ার আগে ২৪ বলে ৩৫ রান করেন মোসাদ্দেক। শেষ পর্যন্ত ৭ উইকেট হারিয়ে ২৬২ রান তুলতে সক্ষম হয় টাইগাররা।
টার্গেট তাড়া করতে নেমে সাকিবের অফ স্পিনে বিভ্রান্ত হয়ে ২০০/১০ রানে ইনিংস শেষ করে আফগানিস্তান। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৪৭ রান করেন অধিনায়ক গুলবাদিন নাইব। এছাড়া ২৪ রান করেন রহমত শাহ। ৪৯ রান করেন সামিউল্লাহ সেনওয়ারি। টার্গেট তাড়া করতে নেমে দারুণ সূচনা করেন আফগান দুই ওপেনার রহমত শাহ ও গুলবাদিন নাইব।অনবদ্য ব্যাটিং করে যাওয়া নাইব-রহমত শাহর জুটি ভাঙেন সাকিব। তার আগে ওপেনিং জুটিতে ১০.৫ ওভারে ৪৯ রান যোগ করেন তারা। সাকিবের বলে তামিম ইকবালের হাতে ক্যাচ তুলে দেয়ার আগে ৩৫ বলে ২৪ রান করেন রহমত শাহ। লিটন দাসের বিতর্কিত ক্যাচ নিয়ে সমালোচিত হয়ওয়া হাসমতউল্লাহ শহীদিকে ব্যাটিংয়ে সফল হতে দেননি মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। তার বলে ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে গিয়ে স্ট্যাম্পিং হয়ে ফেরেন হাসমতউল্লাহ। দুই উইকেটে ১০৪ রান করা আফগান শিবিরে জোড়া আঘাত হানেন সাকিব। বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডারের অফ স্পিনে বিভ্রান্ত হয়ে সাজঘরে ফেরেন আফগান অধিনায়ক গুলবাদিন নাইব। তিনি সাজঘরে ফেরার আগে ৭৫ বলে ৪৭ রান করেন। পাঁচ নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে নেমে কোনো কিছু্ বুঝে ওঠার আগেই সাকিবের বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন মোহাম্মদ নবী। এরপর আফগানিস্তানের সাবেক অধিনায়ক আসগর আফগানকেও আউট করে সাজঘরে ফেরান সাকিব। নিজের প্রথম ৬.২ ওভারে মাত্র ৮ রান দিয়ে ৪ উইকেট শিকার করেন সাকিব। ১২ বলে ১১ রান করা ইকরাম আলিখিলকে রান আউট করে ফেরান লিটন।
৩৫.১ ওভারে ১৩২ রানে ৬ উইকেট পতনের পর দলকে খেলায় ফেরাতে চেষ্টা করেন সামিউল্লাহ সেনওয়ারি ও নজিবুল্লাহ জাদরান। সপ্তম উইকেটে তারা ৫৬ রান যোগ করেন। তাদের এই জুটিও ভাঙেন সাকিব। নজিবুল্লাহ জাদরানকে আউট করার মধ্য দিয়ে ৯ ওভারে ২৬ রানে ৫ উইকেট শিকার করেন সাকিব। নয় নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে নামা রশিদ খানকে আউট করেন মোস্তাফিজুর রহমান। ইনিংসের শেষ বল পর্যন্ত খেলেও দলের পরাজয় এড়াতে পারেননি সামিউল্লাহ সেনওয়ারি। ৫১ বলে ৪৯ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি।
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৬২/৭ (মুশফিক ৮৩, সাকিব ৫১, তামিম ৩৬, মোসাদ্দেক ৩৫, মাহমুদউল্লাহ ২৭, লিটন ১৬; মুজিব-উর ৩/৩৯)।
আফগানিস্তান: ৫০ ওভারে ২০০/১০ (সামিউল্লাহ সেনওয়ারি ৪৯, গুলবাদিন নাইব ৪৭, রহমত শাহ ২৪, নজিবুল্লাহ জাদরান ২৩, আসগর আফগান ২০; সাকিব ৫/২৯)।
ফল: বাংলাদেশ ৬২ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা: সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)।