২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ১১:০৩

জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলবেন না: হাইকোর্ট

দেশজনতা অনলাইন : লাইসেন্স বিহীন ও লাইসেন্সধারী কতগুলো কোম্পানি ঢাকায় দুধ ও দই বাজারজাত করেছে তার তালিকা দুই সপ্তাহের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিএসটিআইকে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে।

আগামী ১৫ জুলাই এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।

বিচারপতি মো: নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার এই আদেশ দেন।

শুনানিতে আদালত প্রথমে বিএসটিআইয়ের আইনজীবী সরকার এম আর হাসান ও কর্মকর্তা নুরুল ইসলামের বক্তব্য শোনেন।

তারা বলেন, ‘পাস্তুরিত দুধ ও দই বাজারজাত করার জন্য লাইসেন্স ১৮টি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে। এই ১৮টি প্রতিষ্ঠানের পণ্যের মান দেখভাল করার দায়িত্ব বিএসটিআইয়ের। এর বাইরে কারা দুধ ও দই বাজারজাত করছে সেটা দেখার দায়িত্ব বিএসটিআইয়ের নয়।

আদালত বলেন, লাইসেন্সধারীগুলো দেখার দায়িত্ব আপনাদের হলে লাইসেন্স বিহীনগুলোও দেখার দায়িত্ব আপনাদের মধ্যে পড়ে। কিন্তু আপনারা বলছেন, দেখার দায়িত্ব আপনাদের না। আপনাদের এই বক্তব্য এফিডেভিট আকারে আদালতে দাখিল করুন।

বিএসটিআইয়ের আইনজীবী আরো বলেন, ঢাকায়  অভিজাত দোকানগুলোতে এই ১৮টি কোম্পানির দুধ ও দই ছাড়া লাইসেন্স বিহীন কোম্পানির দুধ ও দই বিক্রি হয় না। তখন আদালত ড. শাহলীনার দাখিল করা প্রতিবেদন দেখিয়ে বলেন, গুলশানের অভিজাত দোকানগুলোতে লাইসেন্স বিহীন কোম্পানির দুধ বিক্রির কথা উল্লেখ রয়েছে। আপনার বক্তব্য সঠিক নয়।

আদালত বিএসটিআইয়ের আইনজীবী ও কর্মকর্তার বক্তব্যে  বিস্ময় ও অসন্তোষ প্রকাশ করেন। আদালত বলেন, মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার আপনাদের কে দিয়েছে? লাইসেন্স নেই অথচ দুধ বাজারজাত করছে। এটা দেখার দায়িত্ব কার?

জবাবে আইনজীবী বলেন, এটা দেখার দায়িত্ব কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের।

এ সময় দুদকের আইনজীবী মামুন মাহবুব ও রাষ্ট্রপক্ষের ডেপুটি অ্যাটর্নি  জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘আইনে বিএসটিআইকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা দায়িত্ব এড়িয়ে অন্যর উপর দোষ চাপাচ্ছেন। এজন্য আদালতকে কঠোর হতে হবে।’

বিএসটিআইয়ের আইনজীবী এসময় আদালতকে বলেন, বেআইনিভাবে যারা দুধ ও দই বাজারজাত করছে তাদের পণ্য ধ্বংস করার আদেশ দিন।

তখন আদালত বলেন, আপনারা স্ব-বিরোধী কথা বলছেন। একটু আগে বললেন, দেখার দায়িত্ব আপনাদের না। এখন আবার ধ্বংস করার আদেশ চাচ্ছেন। এসব বাদ দিন। আগে আপনারা তালিকা দাখিল করুন। বাকীটা আদালত দেখবে।

এরপর আদালত আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে লাইসেন্স বিহীন কতগুলো কোম্পানি দুধ ও দই বাজারজাত করছে তার তালিকা দাখিলের নির্দেশ দেন।

একইসঙ্গে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা: শাহলীনা ফেরদৌসিকে কোন রকম বিরক্ত না করতে বিএসটিআই, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, ভোক্তা অধিকার সংক্ষরণ কর্তৃপক্ষসহ সকল সরকারি সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য নিয়ে তার দেওয়া প্রতিবেদন সম্পর্কে কোন প্রশ্ন থাকলে তা আদালতকে অবহিত করতে বলা হয়েছে।

এর আগে সারাদেশ থেকে দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য পণ্যর ৩০৫টি নমুনা সংগ্রহের প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, দুটি নমুনা (একটি ঢাকা, একটি সিলেট) নিম্নমাণের পাওয়া গেছে। বাকীগুলোতে কোন সমস্যা পাওয়া যায়নি। তবে এই প্রতিবেদন এলোমেলো হওয়ায় বিএসটিআইকে ফের গুছিয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

প্রসঙ্গত, গত ১১ ফেব্রুয়ারি কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পত্রিকার ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দেশে পুষ্টির অন্যতম প্রধান যোগান হিসেবে বিবেচিত গরুর দুধ বা দুগ্ধজাত খাদ্যে এবার মিলেছে মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর নানা উপাদান। ১০ ফেব্রুয়ারি এ তথ্য প্রকাশ পেয়েছে সরকারের জাতীয় নিরাপদ খাদ্য গবেষণাগারের প্রতিবেদনে।

জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সভাকক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও অন্য কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে।
জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘গরুর খোলা দুধে অণুজীবের সহনীয় মাত্রা সর্বোচ্চ ৪ থাকার কথা থাকলেও পাওয়া গেছে ৭.৬৬ পর্যন্ত।’ এরপর সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন হাইকোর্টের নজরে আনেন আইনজীবী মামুন মাহবুব।

পরে দুধে সিসা মিশ্রণকারীদের শাস্তির আওতায় আনার ব্যর্থতা কেন বেআইনি হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। এছাড়াও রুলে দুগ্ধজাত খাবারে ভেজাল প্রতিরোধে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি খাদ্যে ভেজালের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তির (মৃত্যুদণ্ড) নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি আদালত ঢাকাসহ সারা দেশের বাজারে কোন কোন কোম্পানির দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য পণ্যে কী পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া, কীটনাশক এবং সিসা মেশানো রয়েছে, তা নিরূপণ করে একটি জরিপ প্রতিবেদন তৈরির নির্দেশ দেন। জাতীয় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।

যার ধারাবাহিকতায় হাইকোর্টের নির্দেশের পর বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. মাহবুব কবিরকে আহ্বায়ক করে ১৬ সদস্যের কমিটি গঠিত হয়।

প্রকাশ :জুন ২৪, ২০১৯ ১:৪৮ অপরাহ্ণ