আন্তর্জাতিক ডেস্ক
দিল্লিতে পাঁচ বছর আগে ১৬ ডিসেম্বর, ২০১২ তারিখে এক তরুণী ধর্ষিত হয়, মুমূর্ষু অবস্থায় ১৩দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর অবশেষে মৃত্যু হয় তার। এর প্রতিবাদে ভারতে ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে উঠে আসে ‘নির্ভয়া’ নামটি। এ নামেই সে পরিচিত হয়ে উঠে, সেইসাথে জন্ম দেয় ভারতের ইতিহাসে আলোচিত এক গণ বিক্ষোভের।
শুক্রবার নির্ভয়া ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় চার আসামির ফাঁসির আদেশ বহাল রেখেছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ।
এ রায়ের পর নির্ভয়ার পিতা বদ্রি নাথ সিং প্রতিক্রিয়া জানান, “অবশেষে আজ রাতে শান্তিপূর্ণভাবে ঘুমাতে পারব।” তাদের কন্যার আত্মাও শান্তি পাবে, এ কথাও বলেন তার স্ত্রী আশা দেবী গণমাধ্যমের সামনে।বদ্রি নাথ আরো বলেন, “যদি বেঁচে থাকত এ বছর ১০ মে সে ২৮ বছরে পড়ত। আজকের রায় তার জন্য একটি উপহার”।
“আমি খুশি যে সুপ্রীম কোর্ট আমাদের কথা শুনেছেন এবং নির্ভয়ার দুর্বিষহ যাতনার কথা উপলব্ধি করেছেন। এ ন্যায় বিচার শুধু নির্ভয়ার প্রতিই নয়, পুরো দেশের প্রতি। সকল অপরাধীদেরকে যত দ্রুত সম্ভব ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেওয়া দেয়া হোক”, রায় ঘোষণার পর এভাবেই নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করেন বদ্রি নাথ।
মামলার রায় ঘোষণার সময় মানুষে ঠাসা আদালত কক্ষে উপস্থিত ছিলেন নির্ভয়ার মা আশা দেবীও। তিনি বলেন, “দীর্ঘকালীন আইনী প্রক্রিয়ার কারণে বিলম্বের পরও তারা অবশেষে ন্যায়বিচার পেয়েছে। এ কঠিন সময়ে যারা আমাদের সাথে ছিলেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। যদিও আমরা আমাদের মেয়েকে হারিয়েছি, আমরা সন্তুষ্ট যে আদালত শেষ পর্যন্ত অপরাধীদের মৃত্যুদন্ডের আদেশ বহাল রেখেছেন।”
আদালতের কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসার সময় আশা দেবী বলেন আরো বলেন, “এখন থেকে তিনি ও তার স্বামী নিপীড়িত নারীদের ন্যায়বিচারের জন্য কাজ করবেন।”
উল্লেখ্য যে, ২০১৩ সালে ট্রায়াল আদালত চার অভিযুক্তদের ফাঁসির আদেশ দেয়। পরের বছর উচ্চ আদালতও একই রায় দেন। কিন্তু এ চার অভিযুক্ত অক্ষয় ঠাকুর, বিনয় শর্মা, পবন গুপ্ত ও মুকেশ রায়ের বিপরীতে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করে।
নির্ভয়াকে চলন্ত বাসে ধর্ষণ ও খুনের সময় সেখানে আরো দু’জন ছিলেন। এর মধ্যে রাম সিং বাস চালাচ্ছিলেন। তিনি ২০১৩ সালের মার্চে তিহার জেলে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন। গত বছর আগস্টে বিনয় শর্মাও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। অভিযুক্ত ছয়জনের মধ্যে ষষ্ঠজনের বয়স ১৮ এর নিচে থাকায় তাকে সংশোধন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। সেখানে তিন বছর কাটানোর পর তাকে সাধারণ বিচারের আওতায় আনা হয়। ভারতে নতুন আইন হয়েছে যদি ১৬ থেকে ১৮ বছরের কোনো কিশোর জঘন্য কোনো অপরাধ করে থাকে তবে তাকে অবশ্যই প্রাপ্তবয়স্ক বলে গণ্য করা হবে।
২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর নির্ভয়া তার বন্ধুর সঙ্গে রাতে সিনেমা দেখে বাড়ি ফেরার পথে চলন্ত বাসে ধর্ষিত হয়। তাকে নিষ্ঠুরভাবে মারধর করা হয়। এরপর তাকে জীবন্ত অবস্থায় বাস থেকে রাস্তায় ছুড়ে ফেলা হয়। মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে তের দিন পরেই সে মারা যায়। সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া