২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সন্ধ্যা ৭:১৩

প্রিপেইড মিটার নিয়ে ভোগান্তির যত অভিযোগ

দেশজনতা অনলাইন : বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রিপেইড মিটার নিয়ে নানামুখী ভোগান্তির অভিযোগ করছেন গ্রাহকরা। হঠাৎ কার্ডের টাকা শেষ হলে ছুটির দিনে রিচার্জ করা যায় না। কার্ড রিচার্জ করলে শুরুতেই অনেক টাকা কেটে নেওয়া হয়। একই বাড়িতে প্রিপেইড এবং পোস্টপেইড—দুই ধরনের মিটার থাকায় দুই পদ্ধতিতেই বিল দিতে হচ্ছে।

এমন নানা ধরনের ভোগান্তির অভিযোগ উঠলেও বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো বলছে, সমস্যা এখন প্রায় নেই বললেই চলে। তারা নানাভাবে গ্রাহককে সেবা দিতে চেষ্টা করছেন। তবে প্রিপেইড মিটার ব্যবহারের নিয়ম পুরোটা না জানায় কিছু সমস্যা হচ্ছে বলে তারা স্বীকার করেন।
সারাদেশে বিদ্যুৎ বিতরণে প্রিপেইড মিটার বসাচ্ছে বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো। আগামী ৫ বছরের মধ্যে সব গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনার পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। তবে ধীরগতি হওয়ায় এর কাজ শেষ হতে আরও সময় লাগার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সারাদেশে ৩ কোটির বেশি বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছে। তবে প্রিপেইড মিটার নেই ৫০ লাখ গ্রাহকের ঘরেও। প্রত্যেকটি বিতরণ কোম্পানি পৃথকভাবে প্রিপেইড মিটার স্থাপন করছে। তবে একই বাড়িতে দুই ধরনের মিটার এখনও রয়ে গেছে। বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করা হলে তারা বলছে, মিটার সংকটের কারণে তারা নতুনদের প্রিপেইড মিটার দিতে পারছেন না।
স্বামীবাগের বাসিন্দা মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার বাড়িতে তিনটি মিটার ছিল। এরপর আরও তিনটি মিটার নিয়েছি। শুরুতে আমাকে বলা হয় মিটার নেই, কিছু দিন অপেক্ষা করতে। এভাবে ৪৫ মাস অপেক্ষার পর জানানো হয়, এখনও মিটার আসেনি। আপনি ইচ্ছা করলে আগের মিটার লাগিয়ে নিতে পারেন।’
তিনি বলেন, ‘আগের মিটার লাগিয়ে বিল দিতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। কোনও কোনও সময় দুই মাসের বিল একসঙ্গে দিয়ে যাচ্ছে। আবার তাদের ডেকে এনে বিল করাতে হচ্ছে।’ আগের তিনটি প্রিপেইড মিটারে বিল আসতো ১৮ হাজার টাকা। এখন সেখানে প্রতিটি মিটারে এক হাজার টাকা মাসে বিল আসছে বলে জানান তিনি।
নিউপল্টন লাইনের বাসিন্দা নিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘শুরু থেকেই প্রিপেইড মিটারে বিল দিতে গিয়ে ভোগান্তি ছিল। এখন সেই ভোগান্তি কমলেও একেবারে শেষ হয়নি।’ তিনি বলেন, একটি বিদ্যুৎ বিল দিতে কয়েক ঘণ্টা পর্যন্ত সময় লাগে, যা যৌক্তিক নয়। প্রিপেইড মিটারে বাড়তি অর্থ কাটার অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘এক হাজার টাকা ঢোকালে শুরুতেই ২০০ টাকার মতো কেটে নিচ্ছে।’ এটাকে অত্যধিক বলে মনে করেন তিনি।
আশকোনার বাসিন্দা আজাদ পারভিন বলেন, ‘যদি বৃহস্পতিবার কার্ডের টাকা শেষ হয়, তাহলে আর কার্ডে টাকা ভরতে পারি না। কার্ড কিনতে হয় ব্যাংক থেকে।’ যেকোনও জায়গা থেকে যেন কার্ড কেনা যায়, এমন ব্যবস্থা করার দাবি জানান তিনি। সেবা খাতের কেন্দ্র সরকারি ছুটির দিন বন্ধ থাকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন এই গ্রাহক।
এসব অভিযোগের বিপরীতে ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির (ডিপিডিসি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, ‘ডিপিডিসির এলাকায় এ ধরনের কোনও সমস্যা এখন আর নেই। ব্যাংক বন্ধ থাকলেও শনিবার ভেন্ডিং সেন্টারগুলো খোলা থাকে। আর শুক্রবার তো গ্রামীণফোন, রবি, রকেট আর এজেন্ট ব্যাংকিং আছে।’ তিনি বলেন, ‘কার্ড রিচার্জ করার সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে শতভাগ সমস্যা কেটে গেছে তা বলা যায় না। অনেক সময় টেকনিক্যাল সমস্যা হয়।’ ডিপিডিসির কলসেন্টার ‘১৬১১৬’ নম্বরে অভিযোগ করলে গ্রাহকদের কাছে টেকনিক্যাল টিম পৌঁছে যাবে বলে জানান তিনি।
ডিপিডিসি জানায়, বর্তমানে ডিপিডিসির সোয়া ৩ লাখ গ্রাহক প্রিপেইড মিটার ব্যবহার করছে। এই বিতরণ কোম্পানির আওতাধীন আজিমপুর, লালবাগ, শ্যামলী, কামরাঙ্গীরচর, স্বামীবাগ, শেরে বাংলানগর, রাজারবাগ ও মুগদাতে প্রিপেইড মিটারে গ্রাহকরা বিদ্যুৎ বিল দিচ্ছে। এ বছর প্রায় আরও ৮০ হাজার প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। আরও সাড়ে ৮ লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপন করবে তারা। বলা হচ্ছে, এই ৮ লাখ হলো স্মার্ট মিটার, যাতে থাকবে টু ওয়ে। মোবাইলের মাধ্যমে, এমনকি বিদেশে বসেও রিচার্জ করতে পারবেন গ্রাহকরা।
ডেসকোর আওতাধীন উত্তরা এলাকার গ্রাহকদের রয়েছে দুই রকম বক্তব্য। উত্তরা ১৪ নম্বরের বাসিন্দা সাদিয়া সিরাজ জানান, প্রিপ্রেইড মিটার ব্যবহার করে তার কোনও সমস্যা হচ্ছে না। তবে ৪ নম্বর সেক্টরের বাসিন্দা রোকসানা মারজিয়া জানান, আগের তুলনায় বিল বেশি আসছে। আগে যখন অন্য সেক্টরে ছিলেন বিল আসতো ১৩০০-১৪০০ টাকা। এখন আসছে ২০০০-২১০০ টাকার মতো।
ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহিদ সারোয়ার বলেন, ‘এখন আর গ্রাহকদের ব্যাংকের লাইনে দাঁড়িয়ে বিল দিতে হচ্ছে না। রকেট বা বিকাশের মাধ্যমেই প্রিপেইড মিটারের কার্ড রিচার্জ করা যাচ্ছে।’ তবে নতুন নেওয়া অনেক গ্রাহক বিষয়টি না জানায় সমস্যায় পড়তে পারেন বলে জানান তিনি। সেক্ষেত্রে ডেসকোর বিলে এবং ওয়েবসাইটে আলাদা করে একটি পেজ করা হয়েছে। আর ডেসকোর অভিযোগ কেন্দ্র তো আছেই।
শাহিদ সারোয়ার বলেন, কার্ডের টাকা শেষ হলেও বাকিতে (ক্রেডিট) দুই দিন ব্যবহার করা যায়। গ্রাহক সচেতনতা বাড়াতে লিফলেট বিলি করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
ডেসকো জানায়, এরই মধ্যে ১ লাখ ২২ হাজার ২৩৬ গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা হয়েছে। আরও ১ লাখ মিটার স্থাপনে ওয়ার্ক অর্ডার দেওয়া হয়েছে।
ঢাকার বাইরেও চলছে প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজ
ঢাকার বাইরে আরইবি তাদের সমিতির নিজস্ব অর্থায়নে ২০ হাজার ৫০০টি প্রি-পেমেন্ট মিটার স্থাপন করেছে। আরও ৪০ হাজার মিটার কেনার চুক্তি করেছে। সরকারি অর্থায়নে আরও ৩১ লাখ প্রি-পেমেন্ট মিটার কেনার ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্পের প্রস্তাব) চূড়ান্ত হয়েছে। পশ্চিমাঞ্চল বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি (ওজোপাডিকো) মিটার স্থাপনের কাজ করছে। নর্দার্ন ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) পিডিবির কাছ থেকে পাওয়া ৫ লাখ মিটার স্থাপনের কাজ করছে।
প্রকাশ :জুন ১৯, ২০১৯ ১:৪৭ অপরাহ্ণ