খেলা ডেস্ক
গত এক বছর যারা আর্জেন্টিনার ফুবটলের নিয়মিত খবর রেখেছেন তাদের জন্য চমক নাও হতে পারে ফল। ম্যাচের ফেভারিটরাই জিতেছে শেষ পর্যন্ত। কিন্তু যত সহজে বলা হয়ে গেল, আসলে কি ততো সহজে মেনে নিতে পারবেন আর্জেন্টাইনরা? ১৯৯৯ সালের পর কখনই কোপাতে আর্জেন্টিনাকে হারাতে পারেনি কলম্বিয়া। এবার পারলো তারা, আর্জেন্টিনাকে কলম্বিয়া হারালো ২-০ গোলে। হার তো হারই, কিন্তু আর্জেন্টিনা যেভাবে আত্মসমপর্ণ করলো সেটা স্বপ্নও দেখতে দেবে না আর্জেন্টিনা সমর্থকদের। সালভাদোরে কলম্বিয়ার বিপক্ষে শুধু রসদ ছাড়া ব্যর্থ লড়াই করে গেল আর্জেন্টিনা।
প্রথমার্ধের হতাশাজনক পারফরম্যান্সের পর দ্বিতীয়ার্ধে যখন আস্তে আস্তে গুছিয়ে উঠল আর্জেন্টিনা, তখনই গোল করেন মার্টিনেজ। নিজেদের অর্ধ থেকে হোসে রদ্রিগেজে লং বল পাঠিয়েছিলেন আর্জেন্টিনার ডিবক্সের বাইরে ডানদিকে। মার্টিনেজ সেই বল রিসিভ করে সহজেই আর্জেন্টিনার ডিফেন্ডার রেনজো সারাভিয়াকে পার করে যান কাট করে। এরপর বুলেট গতির এক শট মারেন কোণাকুণি। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা নিকোলাস অটামেন্ডি দর্শকের মতো চেয়ে থেকেছেন। আর গোলরক্ষক ফ্রাঙ্কো আর্মানি ঝাঁপ দিয়েও নাগাল পাননি বলের। মার্টিনেজের গোলটি ২০১১ সালের পর আর্জেন্টিনার বিপক্ষে কলম্বিয়ার প্রথম। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ৫৬৫ মিনিটের গোলখরা কলম্বিয়ার কেটেছে দুর্দান্ত এক গোলে।
ম্যাচ শেষের চার মিনিট আগে জেফেরসন ফারফানের মাপা ক্রস থেকে দারুণ ফ্লিকে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন দুভান জাপাতা। রাদামেল ফ্যালকাওয়ের বদলি হয়ে মাঠে নামার ৫ মিনিটের মধ্যেই গোল করেন তিনি। তাতে নিশ্চিত হয়ে যায় কলম্বিয়ার জয়ও।
প্রথমে শুরুটা এতোখানি মন্দ ছিল আর্জেন্টিনার। ৮ মিনিটে মিডফিল্ড থেকে লিওনেল মেসির বাড়ানো লং বলের নাগাল পেতে পারতেন সার্জিও আগুয়েরো। তবে গোলরক্ষক ডেভিড অস্পিনা এগিয়ে এসে ক্লিয়ার করতে গিয়ে আগুয়েরোকেই দিয়েছিলেন বল। কিন্তু সামনে থাকা দুই ডিফেন্ডারকে আর ফাঁকি দিতে পারেননি আগুয়েরো। প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনার বলার মতো আক্রমণ ওই একটাই। ১৫ মিনিটেই শেষ আর্জেন্টিনার আধিপত্য, এরপর কলম্বিয়ার ছড়ি ঘোরানোর পালা। এর মধ্যে নিজেদের অর্ধে শ খানেক খেলেও প্রতিপক্ষের অর্ধে ঢুকতে পারছিলেন না মেসিরা। এলোমেলো লং বলে আক্রমণে ওঠার চেষ্টা চালাচ্ছিল আর্জেন্টিনা। প্রথমার্ধে সেই চেষ্টা সফল হয়নি একবারও। আর্জেন্টিনার দুই ফরোয়ার্ড মেসি আর আগুয়েরো একবারও নিজেদের মধ্যে পাস অদল বদল করতে পারেননি প্রথমার্ধে। প্রতিপক্ষের ডিবক্সের ভেতর তাই প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনা বল ছুঁয়ে দেখল ওই একবারই।
আর্জেন্টিনার জন্য তার চেয়েও বেশি হতাশার ছিল রক্ষণ। কলম্বিয়া যে প্রথমার্ধে আর গোল দিতে পারেনি সেটা আর্জেন্টিনার সৌভাগ্যই ছিল। গোলরক্ষক ফ্রাঙ্কো আর্মানির ভুলে কপাল পুড়তে পারত আর্জেন্টিনার। নিচ থেকে বিল্ড করে খেলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছিলেন না আর্মানি। তবুও প্রতিপক্ষের প্রেসিং উপক্ষে করে সেটাই করতে গেলেন ৩০ মিনিটে। হামেস রদ্রিগেজ ভুলের ফায়দা প্রায় লুটে নিয়েছিলেন, পেছন থেকে এসে লো সেলসো কোনোমতে বল ক্লিয়ার করে দলকে বাঁচিয়ে দেন। ৯ মিনিট পর প্রায় একইভাবে রাদামেল ফ্যালকাওকে গোলবঞ্চিত করেন জার্মান পেতজেলে।
এসবের আগে অবশ্য একটা ধাক্কাও খেয়েছিল কলম্বিয়া। ম্যাচের শুরুর দিকে ইনজুরিতে পড়া লুইস মুরিয়েলকে বদলি করাতে হয় কার্লোস কুইরোজকে। তার জায়গায় নামা মার্টিনেজও সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন আর্জেন্টিনার জন্য। মাঠেই নেমেই অল্পের জন্য গোল মিস করেছিলেন তিনি ১৬ মিনিটে। বিরতির সময়ে স্কালোনিকেও বদলি করাতে হলো, তবে ডি মারিয়া বাদ পড়লেন বাজে খেলে। প্রথমার্ধে বলের দেখা পেয়েছেন খুব কম, পেলেও নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি। তার জায়গায় নামা উদিনেসের রদ্রিগো ডি পল নেমে প্রাণের সঞ্চার করলেন কিছুটা আর্জেন্টিনার লেফট ফ্ল্যাংকে।
তাতে আর্জেন্টিনা গোল হজমের আগ পর্যন্ত কিছু হাফ চান্স তৈরি করেছিল। মেসি-আগুয়েরোর দারুণ বোঝাপড়া দেখে গিয়েছিল একবার। তবে গোল পর্যন্ত যেতে পারেননি মেসি ওই আক্রমণ থেকে। ৫৯ মিনিটে প্রথমবার গোলে শট করেন লিয়ান্দ্রো পারেদেস। সেটাও ডিবক্সের বাইরে থেকে। শটে গতি থাকলেও ছিল না সঠিক দিকনিশানা, অস্পিনা সহজেই লুফে নেন বল। ম্যাচের সেরা সুযোগটা অবশ্য মেসিই পেয়েছিলেন। আগুয়েরোর ডানদিক থেকে করা ক্রসে ভালো হেড করেছিলেন অটামেন্ডি। অস্পিনার রিফ্লেক্স সেভ থেকে বল গিয়ে পড়েছিল সিক্স ইয়ার্ড বক্সের মাথায় মেসির সামনে। মেসিও হেড করেছিলেন, কিন্তু সেখান থেকেও গোল করতে পারেননি। এর চার মিনিট পরই গোল হজম করে আবার সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায় আর্জেন্টিনার।
বি গ্রুপে আর্জেন্টিনার দ্বিতীয় ম্যাচ প্যারাগুয়ের বিপক্ষে। সেই ম্যাচেও হেরে গেলে দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার পথ অনেকটাই ঝুলে যাবে আর্জেন্টিনার।