নিজস্ব প্রতিবেদক:
অপারেটর ভেদে মোবাইল ইন্টারনেটের দাম ভিন্ন ভিন্ন। আর এ নিয়ে সঠিক দিকনির্দেশনা না থাকায় অপারেটরগুলো ইন্টারনেটের মূল্য গ্রাহকদের কাছে থেকে ইচ্ছেমাফিক নিচ্ছে। কিন্তু এবার এই মূল্যের লাগাম টানতে যাচ্ছে টেলিকম খাতের নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসি।
বিটিআরসির একটি সূত্র জানিয়েছে, বিটিআরসি কার্যালয়ে শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা কস্ট মডেলিং (সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের ইন্টারনেট খরচ বের করার পদ্ধতি) করছেন। একাজে বিটিআরসিকে সহযোগিতা করছে আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের (আইটিইউ)। আগামী সপ্তাহেই ইন্টারনেটের দাম বেধে দেয়া হবে।
বিটিআরসির শীর্ষ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাংবাদিকদের বলেছেন, কস্ট মডেলিংয়ের জন্য আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের (আইটিইউ) এর পরামর্শক ও টেলিকম অপারেটরদের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে বিটিআরসিতে চলছে বিশেষ সভা। এই সভা থেকেই সিদ্ধান্ত আসবে। তবে বিটিআরসি চেয়ারম্যান শাহজাহান মাহমুদ দেশে না থাকায় এই বিষয়ে এখন সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি। তিনি দেশে ফিরলেই আনুষ্ঠানিকভাবে বিটিআরসির পক্ষ থেকে এ নিয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।
বিষয়টি নিয়ে অবগত আছে অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল অপারেটরস ইন বাংলাদেশ (অ্যামটব)। বুধবার প্রস্তাবিত বাজেট নিয়ে টেলিকম খাতের অবস্থান তুলে ধরতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির কর্তারা বিটিআরসির মোবাইল ইন্টারনেটের কস্ট মডেলিংয়ের সত্যতা স্বীকার করেন।
তবে এই কস্ট মডেলিং কতটা গ্রাহক বান্ধব হবে তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়। কেননা, এর আগে বিটিআরসিকে ভয়েস কলের কস্ট মডেলিং করে দিয়েছিল আইটিইউ। কিন্তু তারপরও অপারেটর ভেদে ভয়েস কলের রেট রেট ভিন্ন ভিন্ন।
এর কারণ জানতে চাইলে অ্যামটব মহাসচিব টি আই এম নুরুল কবির সাংবাদিকদের বলেন, অন্য অপারেটরদের সঙ্গে প্রতিযোগিতার জন্য অপারেটর ভেদে মোবাইল ফোনের ভয়েস কল রেট ভিন্ন হয়। এক্ষেত্রে প্রতিটি অপারেটর গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন প্যাকেজ ও অফার ঘোষণা করে। তাই অপারেটর ভেদে ভয়েস কল রেটেও ভিন্ন হয়। ধারণা করা হচ্ছে বিটিআরসির মোবাইল ইন্টারনেটের কস্ট মডেলিংয়ের পর অপারেটর ভেদে ইন্টারনেটের দামও হবে ভিন্ন ভিন্ন।
অ্যামটবের তথ্য মতে, দেশে ৬ কোটি মানুষ ইন্টারনেট সেবা গ্রহণ করছে। এর মধ্যে ৯৫ শতাংশ মানুষ স্মার্টফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। অন্যটিকে বিটিআরসির তথ্য মতে, দেশে এখন ১৩.৩১ কোটি মোবাইল গ্রাহক রয়েছে। এর মধ্যে ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা ৭ কোটি।
ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য মোবাইল ফোন অপারেটরেরা বিভিন্ন প্যাকেজ দিচ্ছে। ডাটার প্যাকেজ ভেদে এসব নেট প্যাকের মেয়াদও ভিন্ন। কিন্তু নির্দিষ্ট মেয়াদের পর অব্যবহৃত ইন্টারনেট আর ব্যবহার করা যায় না। এ নিয়ে ব্যবহারকারীদের মধ্যে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। গ্রাহকরা জানান, মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর স্বেচ্ছাচারিতার জন্যই গ্রাহকরা প্রতারণার স্বীকার হচ্ছেন।
বর্তমানে গ্রামীণফোন চারটি ইন্টারনেট প্যাকেজ দিচ্ছে। এসব প্যাকেজের মধ্যে আছে ভলিউম প্যাক, সোশ্যাল প্যাক, স্মার্ট প্যাক এবং হেভি ব্রাউজিং প্যাক। এসব প্যাকে ২০ জিবি ইন্টারনেট থেকে ৪ মেগাবাইট ইন্টারনেট প্যাক রয়েছে। প্যাক ভেদে এর মেয়াদও ভিন্ন ভিন্ন।
বাংলালিংকে প্রি-পেইড এবং পোস্ট পেইড গ্রাহকের জন্য আলাদা ইন্টারনেট প্যাক রয়েছে। ২৫ জিবি থেকে ৯ মেগবাইট ইন্টারনেট প্যাক রয়েছে বাংলালিংকের। এসব প্যাকের মেয়াদ ১৭৯৯ টাকা থেকে ৩ টাকা পর্যন্ত।
স্বল্প মেয়াদে এবং স্বল্প ডাটার ইন্টারনেট ডাটা প্যাক ছাড়াও রবির ম্যাজিক প্যাক, মাই নেট এবং শেয়ার মাই নেট নামের ইন্টারনেট ডাটা প্যাক আছে। এসব ডাটা প্যাকের মধ্যে সবচেয়ে স্বল্প খরচের প্যাকটি হলো ৭ মেগাবাইটের। এর মূল্য ২টাকা ৪৪ পয়সা। যার মেয়াদ ১ দিন। এছাড়াও রবির ইন্টারপ্লাস নামের আরেকটি প্যাকেজ আছে। এই প্যাকেজে ইন্টারনেট ডাটা ছাড়াও এএসএমএস পাওয়া যায়।
সেলফোন অপারেটরদের ডাটাভিত্তিক সেবার তথ্যানুযায়ী, বর্তমানে গ্রামীণফোনের ১ জিবি ডাটার সরাসরি কোনো প্যাকেজ না থাকলেও ফ্লেক্সিপ্ল্যানের মাধ্যমে সমপরিমাণ ডাটা ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। ফ্লেক্সিপ্ল্যানে ৩০ দিন মেয়াদে ১ জিবি ডাটা কিনতে গ্রামীণফোনের গ্রাহকের ব্যয় ২৭৪ টাকা ২৮ পয়সা। একই পরিমাণ ডাটা কিনতে বাংলালিংকের গ্রাহকদের দিতে হচ্ছে ২০৯ টাকা। রবি ও এয়ারটেলের ১ জিবি ডাটা প্যাকেজের মূল্য যথাক্রমে ২১৩ টাকা ৬ পয়সা ও ২০৯ টাকা। তবে এক্ষেত্রে মেয়াদ ধরা হয়েছে ২৮ দিন। আর রাষ্ট্রায়ত্ত সেলফোন অপারেটর টেলিটকের ১ জিবি ডাটা প্যাকেজের মূল্য তুলনামূলকভাবে অন্যদের চেয়ে কম। প্রতিষ্ঠানটির ৩০ দিন মেয়াদি ১ জিবি ডাটা প্যাকেজের মূল্য ১৮০ টাকা। তবে গড় হিসাবে এ পাঁচটি অপারেটরের প্রতি জিবি ডাটার বিক্রয়মূল্য দাঁড়ায় ২১৭ টাকা।
দৈনিক দেশজনতা/ এমএইচ