নিজস্ব প্রতিবেদক:
বর্তমান উপাচার্য ড.মিজানুর রহমান ২০১৩ সালে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) প্রাক-বাজেট ও বাজেট আলোচনা নিয়ে বন্ধ রয়েছে কর্তৃপক্ষের খোলামেলানীতি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট সম্বন্ধে কোনো কিছুই জানতে পারছেন না প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা। জানা যায়, জবির বর্তমান উপাচার্যের দায়িত্ব গ্রহণের আগে পূর্ববর্তী উপাচার্য ড.মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ প্রাক-বাজেট আলোচনা ও বাজেট পরবর্তী কোন খাতে কত বরাদ্দ এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করতেন। কিন্তু ২০১৩ সালে বর্তমান উপাচার্য আসার পর থেকেই বন্ধ রয়েছে এ ধরনের খোলামেলা নীতি। এ নিয়ে এক ধরনের চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে।
জবির একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট সম্বন্ধে কোনো প্রকার ধারণাই নেই শিক্ষার্থীদের। কোন দিক দিয়ে বাজেট পাস হয় বা কত টাকার বাজেট পাস হয় তার কিছুই জানেন না তারা। অনেকেই মনে করেন, ট্রেজারার দপ্তরের বিভিন্ন বিষয়ে দুর্নীতি ঢাকতে গোপন রাখা হয় বাজেট। শিক্ষার্থীরা জানান, প্রতিবছর তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে চাঁদা নেওয়া হয়। এসবের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ছাত্রসংসদ না থাকলেও প্রতিবছর এর জন্য চাঁদা নেয়া হয় ঠিকই। কিন্তু এই অর্থ কিভাবে ব্যয় হয় তা জানেন না কেউই। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি বাবদ ভর্তির সময় ১০০০ টাকা করে নেওয়া হলেও এ টাকারও হিসেব নেই কারো কাছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ফি বাবদ ১০০০ টাকা করে নেয়া হলেও কোথাও দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন নেই।
বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমকে দেয়া উপাচার্যের বক্তব্য থেকে জানা যায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে যে বাজেট দেয়া হয় এর সিংহভাগ ব্যয় হয় শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীতের বেতন-ভাতার পেছনে। জবির বাজেটে গবেষণা খাতে বলতে গেলে কোনো অর্থবরাদ্দ রাখা হয় না। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় তাদের বাজেটের ১০ শতাংশের বেশি বরাদ্দ রাখে গবেষণা খাতে; সেখানে জবি রাখে শতকরা ১ থেকে ২ ভাগের চেয়েও কম। যা একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির আপ্যায়ন বাজেটের চেয়েও কম।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে রসায়ন বিভাগের শেষ বর্ষের এক শিক্ষার্থী বৈশাখীনিউজকে বলেন, আমাদের ল্যাবে যে ধরনের সুবিধা দরকার তার অর্ধেকও নেই। প্রতিবছর বাজেট আসে, বাজেট যায়; আমাদের ল্যাব এভাবেই থেকে যায় সুযোগ সুবিধা ও সরঞ্জামহীন। জবি ট্রেজারার দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৮৭ কোটি ৮৪ লাখ টাকার রাজস্ব বাজেট অনুমোদন করা হয়েছিল। এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের মূল বাজেট ৫১ কোটি ৮৫ লক্ষ টাকা, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের মূল বাজেট ৪৭ কোটি টাকা এবং ২০১৩-১৪ অর্থবছরের রাজস্ব-বাজেটে ৩৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। প্রতিবারই কয়েক কোটি টাকার ঘাটতি বাজেট রাখা হয়েছিল।
তবে কোনো বাজেটেই শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা ও পেনশন খাত, শিক্ষা ও গবেষণা, গ্রন্থাগারের জন্য বই কেনা, প্রকাশনা, যন্ত্রপাতি ক্রয়, শিক্ষাসফর, সেমিনার, পরীক্ষা সংক্রান্ত ব্যয়, শিক্ষক প্রশিক্ষণ, ছাত্রদের ইন্টারনেট, শিক্ষা উপকরণ, বৃত্তি, বিভাগীয় খেলা, ছাত্র পরামর্শ, ছাত্রকল্যাণ, আসবাবপত্র, বিদ্যুৎ-গ্যাস-টেলিফোন বিল, চিকিৎসাসেবা, বিভাগীয় আপ্যায়ন ও সভা, পরীক্ষার খাতা, টিএডিএ, জ্বালানি তেল ও গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ খাতে কত টাকা বাজেট ধরা হয়েছে কিংবা বছর শেষে কত টাকা খরচ করা হয়েছে তা প্রকাশ করেনি ট্রেজারার দপ্তর। বাজেটের এই গোপনীয় দিক প্রসঙ্গে জবি ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি মেহরাব আজাদ বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় চলে একজনের সিদ্ধান্তে। তাই সব দায়ভার ভিসিকে নিতে হবে। আমরা বিভিন্ন সময়ে তার কাছে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ভিসি বলেন, ‘তোমরা কে যে তোমাদের হিসেব দিতে হবে? ’
জবির বাজেট বিষয়ে জানতে জবি ট্রেজারার অধ্যাপক সেলিম ভূঁইয়াকে ফোনকল দিলে তিনি ‘ভীষণ ব্যস্ত’ আছেন বলে ফোন সংযোগ কেটে দেন।জবি উপাচার্য ড. মীজানুর রহমান বলেন, বাজেট বিষয়ে কিংবা আয়-ব্যয় নিয়ে সাংবাদিকদের জানার দরকার নাই। বাজেট হয়ে গেলে আমরা একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেব।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ