খেলা ডেস্ক
সান্তিয়াগো বার্নাব্যু, জুভেন্টাস স্টেডিয়াম। চ্যাম্পিয়নস লিগে শেষ দুই টাইয়ে নিজেদের চেয়ে প্রতিপক্ষের মাঠেই ভাল খেলেছিল আয়াক্স, রচনা করেছিল দুই মহাকাব্যিক জয়। ২২ বছর পর আজ চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিফাইনাল খেলতে এসেছিল আয়াক্স; এসেই জানান দিল, এতদূর আসাটা ‘ফ্লুক’ নয় কোনওভাবেই। টটেনহাম হটস্পারের মাঠে সেমিফাইনাল প্রথম লেগ জিতে আয়াক্স আজ পূরণ করল ২০১৮-১৯ চ্যাম্পিয়নস লিগের নক আউট পর্বে প্রতিপক্ষে মাঠে জয়ের ‘হ্যাটট্রিক’। জুভেন্টাসের মাঠে গোল করেছিলেন তিনি, আজ সেই ডনি ভ্যান ডি বিকের একমাত্র গোলেই স্পার্সকে ১-০ গোলে হারিয়েছে আয়াক্স।
প্রাপ্য জয়টা পেলেও লন্ডন থেকে কিছুটা অপ্রাপ্তি নিয়েই হয়তো ফিরবে আয়াক্স। ৭৮ মিনিটে দুসান তাদিচের পাস থেকে ডেভিড নেরেসের শট স্পার্স গোলরক্ষক হুগো লরিসকে পরাস্ত করলেও প্রতিহত হয় বারপোস্টে। দুই অর্ধ মিলিয়ে ম্যাচে আধিপত্য বেশি ছিল আয়াক্সেরই। স্পার্স বল দখলে এগিয়ে থাকলেও ডাচ গোলরক্ষক আন্দ্রে ওনানাকে তেমন পরীক্ষায়ই ফেলতে পারেনি মরিসিও পচেত্তিনোর দল। ম্যাচের আগে আয়াক্সের বেশি বিশ্রাম পাওয়ার সমালোচনা করেছিলেন পচেত্তিনো। স্পার্সের তিন দিনের বদলে প্রস্তুতির জন্য পুরো এক সপ্তাহ পেয়েছিল আয়াক্স। পচেত্তিনোর আশঙ্কার প্রমাণ মিলেছে ম্যাচেও।
‘গডফাদার’ ইয়োহান ক্রুইফের শেখানো ভয়ডরহীন আক্রমণাত্মক ‘টোটাল’ ফুটবল খেলেই এই মৌসুমে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে আয়াক্স। মঞ্চ যত বড়ই হোক, নিজেদের স্বাভাবিক খেলাটা খেলেতে আজ পিছপা হয়নি এরিক টেন হাগের দল। তাদিচ-জিয়েচদের সাথে দৌড়ে সুবিধা করতে পারেনি স্পার্স। কম বিশ্রামের সাথে হ্যারি কেইন এবং হিউঙ-মিন সনের অনুপস্থিতিও বেশ ভুগিয়েছে স্পার্সকে। ইনজুরির কারণে ছিলেন না অধিনায়ক হ্যারি কেইন, বহিষ্কারাদেশের কারণে দর্শক বনে থাকতে হয়েছিল হিউঙ-মিন সনকেও।
আক্রমণে কেইন-সনের বদলে নামা লুকাস মউরা, ফার্নান্দো ইয়োরেন্তেরা তেমন পরীক্ষায়ই ফেলতে পারেননি মাথিয়াস ডি লিটদের। নখদন্তহীন স্পার্সকে পেয়ে প্রথমার্ধের শুরুতেই লিড নেয় আয়াক্স। ১৫ মিনিটে তাদিচের থ্রু পাস থেকে লরিসকে পরাস্ত করেন ডি বিক। আয়াক্সের হয়ে তার শেষ ৬ গোলের প্রতিটিই এসেছে প্রতিপক্ষের মাঠে। আগের রাউন্ডে জুভেন্টাসের মত এবারও ডি বিকের গোলের পর ‘ভিএআর’-এর শরণাপন্ন হয়েছিলেন রেফারি। কিন্তু আগেরবারের মত এবারও অনসাইডে থেকেই জাল খুঁজে পেয়েছেন তিনি।
চ্যাম্পিয়নস লিগে প্রতিপক্ষের মাঠে নিজেদের ইতিহাসে এবারই প্রথম টানা ৯ ম্যাচে গোলের দেখা পেল আয়াক্স। গোলের পর আর পেছনে ফিরতে হয়নি ডাচদের। প্রথমার্ধে ব্যবধান দ্বিগুণের সুযোগ পেয়েছিলেন ডি বিকই। কিন্তু ২৪ মিনিটে তাদিচকে পাস না বাড়িয়ে ডি বিকের নেওয়া শট ফিরিয়ে দিয়েছেন লরিস। আয়াক্সের আক্রমণ এবং গোছানো ফুটবলের সামনে রীতিমত অসহায়ই মনে হয়েছে স্পার্সকে। মাঝমাঠ থেকে ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেনও তেমন কিছুই করতে পারেননি, পাসে আক্রমণ গড়ার চেয়ে তাই সেটপিসই ছিল স্পার্সের ভরসা।
প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে আরেকটু হলেই সমতায় ফিরতে পারত তারা, কিন্তু এরিকসেনের ফ্রিকিকে টবি অল্ডারওয়েরেল্ডের হেড চলে যায় গোলের সামান্য উপর দিয়ে। এই আয়াক্সেই ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন স্পার্স রক্ষণজুটি অল্ডারওয়েরেল্ড এবং ইয়ান ভার্টনহেন। কিন্তু ৩৯ মিনিটে হেড করতে লাফিয়ে উঠে দুই বেলজিয়ানের সংঘর্ষে ইনজুরিতে পড়েন ভার্টনহেন, প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ফিরলেও শেষ পর্যন্ত উঠে যেতে হয়েছে তাকে। প্রথমার্ধের মত দ্বিতীয়ার্ধেও সেটপিসেই ভরসা রেখেছিলেন পচেত্তিনো, কিন্তু ড্যালে আলি এবং ইয়োরেন্তেদের কেউই পরীক্ষায় ফেলতে পারেননি ওনানা-ডি লিটদের। দ্বিতীয়ার্ধে নেরেসের শট ছাড়া লরিসকে আর বিপাকে ফেলতে পারেনি আয়াক্স।
প্রথমার্ধের চেয়ে দ্বিতীয়ার্ধে আয়াক্সের আক্রমণ ধার কিছুটা কমে গেলেও সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেনি স্পার্স। সেটপিস ছাড়া আক্রমণে তেমন কিছুই করতে পারে পচেত্তিনোর দল। নিজেদের মাঠে একেবারেই গড়পড়তা পারফরম্যান্সের পরও ব্যবধানটা মাত্র এক গোলের হওয়ায় এখনও আশা ছাড়বে না স্পার্স। দ্বিতীয় লেগে ইয়োহান ক্রুইফ অ্যারেনাতে ফিরবেন সনও।
তবে নিজেদের মাঠে আয়াক্সও ছেড়ে কথা বলবে না নিশ্চয়ই। কিন্তু ইতিহাস নেই স্পার্সের পক্ষে, চ্যাম্পিয়নস লিগ সেমিতে নিজেদের মাঠে প্রথম লেগ হেরে ফাইনাল খেলেছে কেবল ১টি দল। ২২ বছর আগে সেই কীর্তি গড়েছিল আয়াক্স। সেই ১৯৯৫-৯৬ মৌসুমের পর আজ আবার সেমিতে নামল আয়াক্স, জানান দিল নিজেদের সামর্থ্যের। সব মিলিয়ে আগামী সপ্তাহে রুদ্ধশ্বাস এক দ্বিতীয় লেগেরই অপেক্ষায় থাকল ফুটবলবিশ্ব।