খেলা ডেস্ক
ডেভিড ডি গিয়া মাথা নাড়ছেন অবিশ্বাসে। আরও একবার ভুল করেছেন। নেয়ার পোস্টে হাতে আসা বলই ঠেকাতে পারেননি। তাতে দুই গোলে এগিয়ে গেছে সিটি। ডি গিয়ার সঙ্গে টেলিভিশন পর্দায় মাথা নেড়েছেন লিভারপুল সমর্থকেরাও। জীবনে হয়ত প্রথমবারের মতো ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের পক্ষ নিয়েছিলেন তারা। হতাশ হয়েছে ইউনাইটেড, হতাশ হয়েছে লিভারপুলও। ওল্ড ট্রাফোর্ডে ২-০ গোলে জিতে আবারও শীর্ষে উঠেছে ম্যানচেস্টার সিটি। লিগের ৩ ম্যাচ বাকি থাকতে পেপ গার্দিওলার দল এগিয়ে আছে ১ পয়েন্টে। লিভারপুল সমর্থকদের তাই আপাতত বার্নলি, ব্রেন্ডন রজার্সের লেস্টার সিটি আর ব্রাইটনের ওপর ভরসা রাখতে হচ্ছে।
ওল্ড ট্রাফোর্ডে সিটির সবগুলো গোলই হয়েছে দ্বিতীয়ার্ধে। এর আগ পর্যন্ত ইউনাইটেড ভালোভাবেই হতাশ করে যাচ্ছিল সিটিজেনদের। কিন্তু বের্নার্দো সিলভার অসাধারণ এক গোলে বাধ ভাঙে ইউনাইটেডের। ডিবক্সের ভেতর গোল থেকে ১৫ গজ দূরে লুক শকে ডামি হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন সিলভা। এরপর গ্রাউন্ড শট করেন নেয়ার পোস্টে। ডি গিয়া লুটিয়ে পড়ে সেভ করার আগেই সেই শট পরিণত হয় গোলে। ৫৪ মিনিটে ভাঙে ম্যাচের ডেডলক।
এগিয়ে গিয়েও অবশ্য খানিকটা অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছিল সিটিকে। মার্কস র্যাশফোর্ডের ক্রস ক্লিয়ার করতে পারেননি ভিনসেন্ট কোম্পানি। কিন্তু ফাঁকা বারেও কাজের কাজটা করতে পারেননি জেসি লিনগার্ড। অস্বস্তিকর মুহুর্তটাই তাই বড় ধরনের শাস্তি হয়ে আসেনি সিটিজেনদের জন্য।
ফার্নান্দিনহো প্রথমার্ধেই কিছুটা ধুঁকছিলেন। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই পল পগবার একটি শট ব্লক করতেই হত তাকে। সেটা করতে গিয়েই ইনজুরিতে পড়েছিলেন। কিন্তু গার্দিওলা অবশ্য তাকে আরেকবার মাঠে নামার সুযোগ দেননি। ৫১ মিনিটে নামিয়ে দিয়েছিলেন লিরয় সানেকে। এরপর থেকেই নিজেদের খুঁজে পায় সিটিও। সিলভার গোলের কিছুক্ষণ পরই আগুয়েরোও ব্যবধানটা দ্বিগুণ করতে পারতেন, কিন্তু তার ডিবক্সের বাইরে থেকে নেওয়া শট ফেরত আসে বারপোস্টে লেগে।
সিটি ডার্বি ম্যাচটা পুরোপুরি নিজদের করে নেয় ৬৬ মিনিটে। প্রতিপক্ষের অর্ধে বল হারিয়েছিল ইউনাইটেড। সেখান থেকেই ৪০ গজ দৌড়ে গেলেন রাহিম স্টার্লিং। এরপর বামদিকে দিলেন সানেকে। জার্মান ফরোয়ার্ড ডিবক্সের ভেতর থেকেই শট করেছিলেন। গোল হবে সেটা হয়ত তিনিও আশা করেননি। কিন্তু ডি গিয়া অপ্রত্যাশিত উপহারটাই সানেকে দিলেন ডার্বিতে।
ওই গোলের পর ম্যাচের গল্পটা লেখা হয়ে গিয়েছিল অনেকটাই। রোমেলু লুকাকু, অ্যালেক্সিস সানচেজদেরকে নামিয়েও ভাগ্য বদলাতে পারেননি ওলে গানার সোলশার। অথচ শুরুটা ভালোই করেছিল তার দল। ৫-৩-২ ফর্মেশনে রক্ষণে মাতেও ডারমিয়ানকে দিয়েছিলেন বিরল সুযোগ। স্ট্রাইকার র্যাশফোর্ড আর লিনগার্ডও প্রেস করে সিটিকে ছোট পাসে খেলা বিল্ড আপ করতে দিচ্ছিলেন না। এর মধ্যে প্রথমার্ধে মাত্র গুটিকয়েক সুযোগ তৈরি করতে পেরেছিল সিটি। ৪৪ মিনিটে গুন্ডোয়ান, আগুয়েরো, ডেভিড সিলভার সাজানো আক্রমণ থেকে বল পেয়েছিলেন স্টার্লিং। কিন্তু গোলের ১০ গজ দূর থেকেও সোজা ডি গিয়া বরাবর শট মেরেছিলেন তখন। তাই সুন্দর আক্রমণটা আর ফলপ্রসূ হয়নি তখন সিটির। কিন্তু প্রথমার্ধে সিটির সঙ্গে পাল্লা দিলেও দিনশেষে ইউনাইটেডকে বাস্তবতাটাই মেনে নিতে হয়েছে।
টানা ১১ জয় নিয়ে সিটি যখন উড়ছে, ইউনাইটেডকে তখন ধুঁকতে হচ্ছে শীর্ষ চারের জন্য। অবশ্য ৬ এ থাকা ইউনাইটেডের সব আশা শেষও হয়ে যায়নি এখনও। ক্রিস্টাল প্যালেসের পর ওলভসের কাছেও আর্সেনাল হেরেছে ৩-১ গোলে। তাই পরের মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলার স্বপ্নটা এখনও ধরা ছোঁয়ার মধ্যেই আছেই রেড ডেভিলদের। ৬৪ পয়েন্ট নিয়ে ইউনাইটেডের, আর্সেনালের পয়েন্ট ৬৬। ৬৭ পয়েন্ট নিয়ে চারে থাকা চেলসির সঙ্গে পরের ম্যাচ সোলশারের দলের।