২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৬:১১

ম্যানচেস্টার ডার্বিতে থাকছে যখন লিভারপুলও

খেলা ডেস্ক

ম্যাচটা ম্যানচেস্টার ডার্বি, কিন্তু সেটার দিকে অধীর আগ্রহে তাকিয়ে থাকবে লিভারপুল। জেমস মিলনার তো বলেই দিয়েছেন, জীবনে প্রথমবারের মতো ইউনাইটেড সমর্থন করবেন তিনি। শুধুমাত্র মিলনার নয়, কথাটা বাকিদের ক্ষেত্রেও সত্যি। রেষারেষি ভুলে আসলে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড-ম্যানচেস্টার সিটির ম্যাচে পাড় লিভারপুল সমর্থকেরাও রেড ডেভিলদেরই সমর্থন করার কথা। মিলনারের মতো প্রথমবারের মতোই, হয়ত সেটা শেষবারের মতোও।

প্রিমিয়ার লিগ এর আগেও দেখেছে দুই দলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। লিগের শেষ দিনে, শেষ মিনিটেও নির্ধারণ হয়েছে শিরোপা। ম্যানচেস্টার সিটির জন্য ব্যাপারটা নতুন কিছু না। কিন্তু লিভারপুলের এই ব্যাপারে আনকোরাই। লিগের ৩ ম্যাচ বাকি থাকতে ইয়ুর্গেন ক্লপের দল আছে সবার ওপরে। ২৮ বছরের লিগ শিরোপাখরা ঘোচাতে আপাতত এই ম্যাচটাই বড় ভরসা লিভারপুলের জন্য।

ম্যানচেস্টার সিটির হাতে আছে ৪ ম্যাচ। সবগুলো ম্যাচ জিতে টানা দ্বিতীয়বারের মতো লিগ জিতবেন পেপ গার্দিওলা। ৪ ম্যাচের প্রথম পরীক্ষাটা কঠিন সিটিজেনদের, নগরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইউনাইটেড। এরপর বার্নলি, লেস্টার সিটি আর ব্রাইটনের বিপক্ষে পা সিটির পা হড়কানোর সুযোগ কমই।

যদিও ক্লপ খুব একটা ভরসা করতে পারছেন না ইউনাইটেডের ওপর, “এটা একটা ডার্বি ম্যাচ। আমরা তো আর প্রভাব ফেলতে পারব না এই ম্যাচের ওপর। আর ইউনাইটেডের যা অবস্থা তাতে মনে হচ্ছে না তারাও কিছু করতে পারবে। আজকে ইউনাইটেডের ফল যেন কি? ৩-০ না ৪-০?” এভারটনের বিপক্ষে ম্যান ইউনাইটেডের হারের পর স্কাই স্পোর্টসকে বলেছিলেন ক্লপ।

ক্লপ যতই খোঁচা মারুন, পেপ গার্দিওলা কিন্তু বরাবরের মতোই সতর্ক। যদিও ওল্ড ট্রাফোর্ডে ভয়টা সিটি অনেক আগেই কাটিয়ে উঠেছে। সেটা জানেন তিনিও। তবুও মনে আরেকবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন, খেলাটা ডার্বি। এভারটনের বিপক্ষে ইউনাইটেডের ম্যাচটা এখন ইতিহাস তার জন্য। সেটার প্রভাব ইউনাইটেড কাটিয়ে উঠবে বলেই মনে করছেন তিনি, “আমি এখানে তিন মৌসুম ধরে আছি। প্রতিবারই আমরা তাদের চেয়ে ভালো করেছি। এটা মোটেও ইউনাইটেডকে হারানোর ব্যাপার না, এটা শিরোপার ব্যাপার।” গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে অবশ্য কেভিন ডি ব্রুইনকে পাচ্ছেন না গার্দিওলা। টটেনহামের সঙ্গে প্রথমার্ধে ইনজুরি নিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন বেলজিয়ান। গার্দিওলার হাতে অবশ্য খেলোয়াড় আছে আরও। তাই আপাতত ইউনাইটেডকে নিয়েই চিন্তা করছেন তিনি।

“আমি নিশ্চিত আগামীকাল দারুণ ইউনাইটেডের বিপক্ষে খেলতে হবে। এটা একটা ডার্বি ম্যাচ। আমরা যতবার ইউনাইটেডের সঙ্গে খেলেছি তারা ভালো করেছে। এই ম্যাচ জিতে সমর্থকদের খুশি করতে চায় সব খেলোয়াড়ই।”

এই মুহুর্তে ৮৮ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে লিভারপুল। ইউনাইটেডের কাছে সিটি হেরে গেলে সমান ম্যাচে ২ পয়েন্টে এগিয়ে থাকবে অলরেডরা। আর ম্যাচটা ড্র হলে, লিভারপুলের লিড হবে ১ পয়েন্টের।

লিভারপুল-ম্যান সিটির শিরোপা দৌড়ের আলোকছটায় অবশ্য কিছুটা ঢাকা পড়ে যাচ্ছে ম্যান ইউনাইটেড। এভারটনের কাছে বড় ব্যবধানে হারলেও চ্যাম্পিয়নস লিগে বাছাই করার জন্য শেষ দুইটি জায়গার লড়াইয়ে এখনও টিকে আছে ওলে গানার সোলশারের দল। সিটির বিপক্ষে তার দলের পক্ষে বাজি ধরার লোক যতই কম থাক, এই জয়টা হতে পারে ইউনাইটেডের জন্য বিরাট অনুপ্রেরণার।

গতবার ইতিহাদে লিগের শেষ ডার্বিতে প্রথমে দুই গোলে পিছিয়ে পড়েও শেষে ৩-২ গোলে জিতেছিল ইউনাইটেড। তখন অবশ্য শুরু সিটির শিরোপা জয়টাই বিলম্বিত করতে পেরেছিলেন পগবারা। তবে এবার সেটা করতে পারলে সিটির শিরোপাই খোয়া যেতে পারে। তবে ইউনাইটেডের বর্তমান ফর্ম সেরকম কিছুর স্বপ্ন দেখাতে পারছে না। লিগে শেষ ৬ ম্যাচের ৪ টিতেই হেরেছে সোলশারের দল। আর প্রতিপক্ষ সিটি টানা ১০ ম্যাচ জিতে খেলতে যাচ্ছে ওল্ড ট্রাফোর্ডে।

কিন্তু ‘নয়েজি নেবার’ বা ‘চিরশত্রু’ লিভারপুল কাউকেই শিরোপা জিততে দেখাটা এক বিন্দুও তৃপ্তি যোগাবে না ইউনাইটেডকে। ক্লাবের কিংবদন্তী ম্যানেজার স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসন একবার বলেছিলেন, তার ক্যারিয়ারের সেরা অর্জন হবে লিভারপুলকে তাদের গদি থেকে নামিয়ে দেওয়া। স্যার অ্যালেক্স সেটা করেও দেখিয়েছিলেন। লিভারপুলের ১৮ লিগ জয় ছাপিয়ে ইউনাইটেড জিতেছিল রেকর্ড ২০ শিরোপা। সিটিকে হারিয়ে দিলে সেই লিভারপুলের রাস্তাটাই সহজ করে দেবে ইউনাইটেড!

সিটিজেনদেরকে ইউনাইটেড সমর্থকেরা ডাকতেন ‘নয়েজি নেবার’ নামে। যদিও ২০০৮ সালে নতুন মালিকানায় বদলে গেছে সেই সিটি। ১০ বছরে তারা লিগ জিতেছে তিনবার। বাড়ির পাশে পড়শির আনন্দ সহ্য করবেন নাকি ৩৪ মাইল দূরে লিভারপুল শহরের লাল ক্লাবের ইতিহাস গড়া প্যারেড দেখবেন- সেটা হয়ত ইউনাইটেডের ওপরই অপেক্ষা করছে।

প্রকাশ :এপ্রিল ২৪, ২০১৯ ২:১৩ অপরাহ্ণ