সংসদে যাওয়া নিয়ে দোলাচলে থাকা সিলেট-২ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচিত মোকাব্বির খান শেষ পর্যন্ত শপথ নিতে যাচ্ছেন। আজ দুপুর ১২টায় তার শপথ।
মোকাব্বিরের শপথ নেয়ার বিষয়ে তার দল গণফোরামের সায় রয়েছে কিনা সেটি নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে এক ধরনের ধোঁয়াশা।
মোকাব্বির বলছেন- দলীয় প্রধান ড. কামাল হোসেনের সিদ্ধান্ত নিয়েই তিনি শপথ নিতে যাচ্ছেন। আর গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও নির্বাহী সভাপতি বলছেন- ভিন্নকথা। তাদের বক্তব্য হচ্ছে- একাদশ নির্বাচন বর্জন ও এই সংসদে শপথ না নেয়ার সিদ্ধান্তে অনড় গণফোরাম। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নিলে মোকাব্বিরকেও সুলতান মনসুরের পরিণতি বরণ করতে হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন গণফোরামের দুই শীর্ষ নেতা।
এদিকে মোকাব্বির খান দলীয় প্যাডে স্পিকারের কাছে শপথের ব্যবস্থা নিতে আবেদন করেছেন। গণফোরাম নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলছেন, মোকাব্বির দলীয় প্যাড চুরি করে স্পিকারকে চিঠি দিয়েছেন। দলের শীর্ষ নেতা এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য না দেয়ায় ধারণা করা হচ্ছে- মোকাব্বিরের শপথে তার ব্যক্তিগত সায় রয়েছে। এসব নিয়ে গণফোরামে চলছে তোলপাড়।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলগুলোও এ নিয়ে গণফোরামকে চাপে রেখেছে। পরিস্থিতি সামলাতে মোকাব্বিরকে দল থেকে বহিষ্কার করা ছাড়া গণফোরামের সামনে কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। না হয় গণফোরামের রাজনীতিই প্রশ্নবিদ্ধ হবে। কারণ যেই দোষে সুলতান মনসুরকে বহিষ্কার করা হয়েছে, একই ‘অন্যায়’ করে মোকাব্বির যদি পার পেয়ে যান, তবে দলের ভাবমূর্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। সেই সুযোগ গণফোরাম দেবে না বলে মনে করছেন অনেকেই।
এসব বিষয়ে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, গণফোরামের প্যাডেই মোকাব্বির চিঠি পাঠিয়েছেন। তবে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সেই প্যাড ব্যবহারের অনুমতি ও অধিকার রয়েছে কেবল সাধারণ সম্পাদকের। তিনি নিজে বা তার অনুমোদিত কোনো ব্যক্তি ওই প্যাড ব্যবহার করতে পারবেন। মোকাব্বির খান দলের সাধারণ সম্পাদককে না জানিয়ে যেভাবে ওই প্যাড ব্যবহার করেছেন, দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তিনি বেআইনি কাজ করেছেন।
তাকে বহিষ্কার করা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সুব্রত চৌধুরী বলেন, তিনি (মোকাব্বির খান) দলের গঠনতন্ত্র ভঙ্গ করেছেন। আমরা এখন বসে সিদ্ধান্ত নেব। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার কারণেই আমরা সুলতান মনসুরকে বহিষ্কার করেছি। একই ঘটনা তিনিও ঘটিয়েছেন। তার ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত আসে, তা জানতে সামনের বৈঠক পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
কবে সেই সিদ্ধান্ত এমন প্রশ্নে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি আরও বলেন, আগামী ২০ এপ্রিল আমাদের সাধারণসভা ও ২৬ এপ্রিল কাউন্সিল রয়েছে। মোকাব্বির খান সাধারণসভা ও কাউন্সিল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারতেন। কিন্তু তিনি কারও তোয়াক্কা না করে শপথ নিতে যাচ্ছেন। এটি সম্পূর্ণ ব্যক্তি স্বেচ্ছাচারিতার মধ্যে পড়ে। তার এ কাজ দলীয় গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের শামিল।
এদিকে গতকাল সোমবার ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে দেখা করতে তার মতিঝিলের চেম্বারে যান মোকাব্বির খান। উদ্দেশ্য শপথের আগে ড. কামালের আশীর্বাদ কামনা। সেখান থেকে বেরিয়ে মোকাব্বির খান জানান, ড. কামাল হোসেন ও গণফোরামের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শপথগ্রহণ করতে স্পিকারকে চিঠি দিয়েছেন।
মোকাব্বির খানের শপথ নেয়ার বিষয়ে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু বলেন, দলীয় ফোরামে মোকাব্বিরের শপথ নেয়ার বিষয়ে ইতিবাচক কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
আর গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের শপথ না নেয়ার সিদ্ধান্ত এখনও বহাল আছে। তিনি নিজ দায়িত্বে শপথ নিচ্ছেন।’ দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে শপথ নিয়ে কি করবেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আগামী ২০ এপ্রিল আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক আছে। সেখানে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এর বাইরে গিয়ে কেউ যদি শপথগ্রহণ করে থাকে, সেটি তার নিজ দায়িত্বে। এর সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই।
গণফোরামের প্যাডে স্পিকারকে চিঠি পাঠানোর বিষয়ে সুব্রত চৌধুরী বলেন, মোকাব্বির খান গণফোরামের প্যাড ‘চুরি’ করে সেই কাগজে স্পিকারের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। মোকাব্বিরের বিষয়ে কী ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হবে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরে বৈঠক করে তা জানানো হবে।
আর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর লতিফুল বারী হামিম বলেন, মোকাব্বির ব্লাকমেইল করে গণফোরামের প্যাড ব্যবহার করেছেন। তিনি বলেন, মোকাব্বির খান দলকে ব্লাকমেইল করে গণফোরামের প্যাড ব্যবহার করেছেন। যদি উনি শপথ নেন, তা হলে তার বিরুদ্ধে দলীয় ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
গণফোরামের প্যাড তিনি কোথায় পেলেন- এমন প্রশ্নের জবাবে লতিফুল বারী হামিম বলেন, উনি কোথা থেকে প্যাড পেলেন এ বিষয়ে আমাদের জানা নেই। হয়তো অফিসের ড্রয়ার থেকে নিতে পারেন। যদি তিনি প্যাড ব্যবহার করেন, তা হলে তাকে জবাবদিহি করতে হবে। দলীয় সিদ্ধান্ত হলে অবশ্যই এ প্যাডে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টুর স্বাক্ষর থাকার কথা। কিন্তু ওই প্যাডে মন্টুর কোনো স্বাক্ষর নেই। এ ছাড়া স্পিকারের কাছে উনি যে চিঠি দিয়েছেন তাতেও মন্টুর স্বাক্ষর ছিল না।
ড. কামালের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তে মোকাব্বির শপথ নিচ্ছেন কিনা এমন প্রশ্নে গণফোরামের প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পথিক বলেন, ‘ড. কামাল হোসেন কিন্তু গণফোরামের মালিক নন। তিনি দলের সভাপতি এবং আমাদের শ্রদ্ধেয় নেতা। তবে কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমতি ছাড়া তিনি একা কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না।’
এর আগে ৭ মার্চ শপথ নেয়ার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে ৬ মার্চ সন্ধ্যায় সিদ্ধান্ত পাল্টান মোকাব্বির খান। দলীয় চাপের মুখে তিনি তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। তবে ওই দিন অর্থাৎ ৭ মার্চ শপথ নেন গণফোরামের আরেক সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ।
৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে গণফোরামের প্রতীক উদীয়মান সূর্য নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মোকাব্বির খান। তিনি সিলেট-২ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে পরাজিত করে জয়ী হন। এই আসনে প্রথমে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল বিএনপির নিখোঁজ নেতা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা। তার মনোনয়ন বাতিল হলে মোকাব্বিরকে সমর্থন দেয় ঐক্যফ্রন্ট।