২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সন্ধ্যা ৬:০৩

নকশাবহির্ভূত অবৈধ ভবনঃ আবার সচল হচ্ছে দুদকের অনুসন্ধান

অনুসন্ধান বন্ধ হওয়ায় বিস্মিত দুদক চেয়ারম্যান * নতুন তালিকা চেয়ে আজ চিঠি যাচ্ছে রাজউকে * কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব দিতে হবে

দেশজনতা অনলাইনঃ অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে রাজধানীতে গড়ে ওঠা কয়েক হাজার বহুতল ভবনকে কালো তালিকাভুক্ত করে সেগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুসন্ধান শুরু করেছিল দুদক। ২০১৩ সালের মে মাসে অনুসন্ধান কাজে হাতও দেয় দুদক। এ জন্য নিয়োগ করা হয় কর্মকর্তা। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সেই অনুসন্ধান থেমে যায়।

বনানীতে এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনার পর আবার বিষয়টি সামনে আসছে। নড়েচড়ে বসেছে দুদক। পুরনো সেই অনুসন্ধান নতুন করে সচল করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে দুদক থেকে চিঠি দিয়ে রাজউকের কাছে অবৈধ ভবনের সম্পূর্ণ তালিকা চাওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া যারা এসব অনিয়মের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধানে নামছে দুদক।

জানতে চাইলে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘৬ বছর আগের অনুসন্ধানটি কেন থেমে গেল? রাজউকের নকশাবহির্ভূত কালো তালিকাভুক্ত ভবনের বিষয়ে দুদক থেকে অনুসন্ধান শুরুর পর তার কি হল জানব। আমরা আবার নতুন করে সেই অনুসন্ধানটি সচল করব।’

তিনি বলেন, ‘অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে আমরা রাজউককে চিঠি দেব। জানতে চাইব অবৈধ ভবনের সর্বশেষ তালিকার তথ্য। এ ছাড়া যেসব কর্মকর্তা অবৈধ ভবন নির্মাণে সহায়তা করেছেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘এখন অবস্থা এমন পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে, অনিয়মকেই নিয়মে পরিণত করা হচ্ছে। যারা এভাবে নিয়ম ভাঙছেন এবং অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করছেন তাদের তালিকা করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বনানীর এফআর টাওয়ার নির্মাণে অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করা হবে।’

এ জাতীয় অনিয়মকে দুর্নীতি হিসেবে অবহিত করে তিনি বলেন, ‘সময়মতো কাজ না করাও দুর্নীতি। ঘুষ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে অনেক আগেই কাজ শুরু হয়েছে। এবার এসব অনিয়ম বা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ শুরু হবে। ১৮ তলা ভবনের অনুমোদন পেয়ে বানালেন ২৩ তলা। এই অনিয়মের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের ক্ষমা হবে না।’

দুদকের অপর একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে রাজউকের কর্মকর্তাদের সম্পদের হিসাব চাওয়া হবে। তারা প্রচুর অর্থবিত্তের মালিক হয়েছে অনিয়ম দুর্নীতি করে। এতদিন তাদের ছাড় দেয়ার কারণেই রাজধানীতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন তৈরি হচ্ছে। কর্মকর্তাদের অনেকেই গোপনে নিজেরা নথি তৈরি করে কাউকে না কাউকে অনৈতিক কাজে সহায়তা করেন। আবার কেউ কেউ গুরুত্বপূর্ণ নথি গায়েবও করে দেন। দুদকের অপর একটি অনুসন্ধান কাজ করতে গিয়ে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্লট, বেশ কিছু বাড়ি ও ভবনের অনেক নথির হদিস পাওয়া যায়নি। এ কারণে ওই নথি কোথায় আছে, কারা শত শত নথি গায়েবের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য দুদক থেকে কিছুদিন আগে রাজউককে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে।

অবৈধ ভবনের বিষয়ে দুদক থেকে ২০১৩ সালের মে মাসে উপ-পরিচালক সাহিদুর রহমানের নেতৃত্বে একটি টিম গঠন করা হয়েছিল। অনুসন্ধানের শুরুর দিকেই দুদকের ওই কর্মকর্তা বিভিন্ন মাধ্যম থেকে কয়েক হাজার নকশাবহির্ভূত ভবনের তালিকা সংগ্রহ করেন। অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা সে সময় যুগান্তরকে জানিয়েছিলেন, ওই তালিকায় অন্তত ১০ হাজার ভবন রয়েছে।

কী কারণে দুদকের অনুসন্ধান বন্ধ হয়েছিল জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান, অনুসন্ধান টিম রাজউকের একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে খিলগাঁওয়ে নকশাবহির্ভূতভাবে নির্মিত একজন পুলিশ কর্মকর্তার বাড়ির অবৈধ অংশ ভাঙার কাজ শুরু করলে একটি মহলের চাপের মুখে তাদের মাঠ থেকে ফেরত আসতে হয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের ওই কর্মকর্তা বলেন, অনুসন্ধান কাজ করতে গিয়ে একদিকে বাধার মুখে পড়ি। অপরদিকে অনুসন্ধান কর্মকর্তাও পরিবর্তন করে দেয়া হয়। তিনি জানান, নকশাবহির্ভূত অন্তত ১০ হাজার ভবনের তালিকার তথ্য হাতে রেখেই আমরা অনুসন্ধান শুরু করেছিলাম। পরে দুদকের অপর একজন কর্মকর্তাকে নতুন অনুসন্ধান কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়। তিনি কিছুদিন কাজ করেন। পরে দুদক থেকে বদলি হয়ে গেলে অনুসন্ধানও থেমে যায়।

এদিকে, দুদকের তালিকার সূত্র ধরে যুগান্তরে প্রকাশিত একটি রিপোর্টের সূত্র ধরে প্রকাশিত প্রতিবেদনের বিষয়টি নিয়ে এক ব্যক্তির করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছর ২০ জুন হাইকোর্ট রাজধানী ঢাকায় নকশাবহির্ভূত কালো তালিকাভুক্ত ভবনের তালিকা আদালতে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন। বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি এবিএম আলতাফ হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চের ওই আদেশে ২০১৩ সালেল ৮ জুলাইয়ের মধ্যে দুদক ও রাজউককে প্রতিবেদন আকারে ওই তালিকা দাখিল করতে বলা হয়। একই সঙ্গে ওইসব ভবন নির্মাণকারীসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেছিলেন আদালত। দুই সপ্তাহের মধ্যে দুদক ও রাজউকসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছিল। বিষয়টি তখন গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন সংশ্লিষ্ট আদালতের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিত রায়। তবে এখনও সেই বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়নি বলে জানা গেছে। তবে দুদকের পক্ষ থেকে নকশাবহির্ভূত ভবনের মধ্যে ৬ হাজার ২০৪টি ভবনের তালিকা আদালতকে দেয়া হয়েছিল বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে দুদকের মহাপরিচালক (আইন) মো. মঈদুল ইসলাম বলেন, আমি এমন একটি বিষয় জানার পরপরই খোঁজখবর নেই। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, দুদকের পক্ষ থেকে একটি তালিকা আদালতে ‘সাবমিট’ করা হয়েছে। অবকাশকালীন বন্ধের আগে এ বিষয়ে ‘মেনশন’ করা হয়েছিল। বনানীর ঘটনার পর আবার বিষয়টি অগ্রাধিকার পাবে।

প্রকাশ :এপ্রিল ১, ২০১৯ ১২:২৮ অপরাহ্ণ