দেশজনতা অনলাইন ডেস্কঃ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে কারাবন্দী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে লাগাতার কর্মসূচি পালনের চিন্তা করছে বিএনপি। এপ্রিলে এইচএসসি পরীক্ষা ও মে মাসে রমজান থাকায় এর পরই মূলত এ ধরনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানা গেছে। তবে আগামী এই দুই মাসেও কেন্দ্রীয় কিছু কর্মসূচি থাকবে, যা শিগগিরই ঘোষণা করা হবে।
এ ছাড়া বিএনপির হাইকমান্ড খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সাংগঠনিক জেলাগুলোকে স্বতঃস্ফূর্ত নানা কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে। দলটির সিনিয়র নেতারা বলেছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিই এখন তাদের একমাত্র এজেন্ডা। নেত্রীর মুক্তির দাবিতে তৃণমূল নেতাকর্মীরাও এখন রাজপথে নামতে উন্মুখ হয়ে আছে। নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচির মধ্য দিয়েই তারা খালেদা জিয়ার মুক্তির এই আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী নয়া দিগন্তে বলেন, ৭৪ বছর বয়সের দেশনেত্রীকে দীর্ঘ এক বছর ধরে নির্মম নিপীড়নের মাঝে বিনা চিকিৎসায় কারাগারে বন্দী রাখা হয়েছে। তার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবি লাখ লাখ কণ্ঠে কোটি কোটি বার উচ্চারিত হলেও সরকার বেগম জিয়াকে নিয়ে নিজস্ব নকশা নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কেন্দ্রীয়ভাবে কর্মসূচি দেয়া হচ্ছে। নতুন কর্মসূচি আবারো শিগগিরই আসবে। তবে নেতাকর্মীরা এখন কেন্দ্রীয় কর্মসূচির দিকে তাকিয়ে নেই। তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নানা কর্মসূচি পালন করছে। এটি দিনকে দিন আরো জোরালো হবে।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা এমনিতেই তেতে রয়েছেন। চরম প্রতিকূল অবস্থা সত্ত্বেও লড়াইবিহীন শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে টিকে থাকার কেন্দ্রীয় কৌশল নিয়েও তাদের মধ্যে নানা প্রশ্ন রয়েছে। তবে সব ভুলে তারা বেগম জিয়ার মুক্তি আন্দোলন নিয়ে এখন মাঠে নামতে চান। নেত্রীর মুক্তির দাবিতে কর্মসূচি চান তারা।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম নয়া দিগন্তকে বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে নেতাকর্মীরা একাট্টা। তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবেই এখন অনশন, বিক্ষোভ, মানববন্ধন, দোয়া মাহফিলসহ নানা কর্মসূচি পালন করছেন। চট্টগ্রাম বিভাগের নানা জেলায় ধারাবাহিকভাবে এমন কর্মসূচি চলছে জানিয়ে তিনি বলেন, চরম অসুস্থতা সত্ত্বেও বেগম জিয়াকে অন্যায়ভাবে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। দলের নেতাকর্মীরা এটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। তারা কেন্দ্রের কাছে শক্ত কর্মসূচি চান, মাঠে নামতে চান।
জানা গেছে, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কেন্দ্র যে ধরনের কর্মসূচি দিচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে তাতে তৃণমূল নেতাকর্মীরা সন্তুষ্ট হতে পারছেন না। এ নিয়ে তারা নানা সময়ে প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করছেন। বিএনপির পাশাপাশি ঐক্যফ্রন্ট থেকে বেগম জিয়ার মুক্তির দাবিতে জোরালো কোনো বক্তব্য কিংবা কর্মসূচি কেন আসছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে নেতাকর্মীদের। বিএনপি স্থায়ী কমিটির একাধিক বৈঠকেও ঐক্যফ্রন্টের ভূমিকা নিয়ে কোনো কোনো নেতা প্রশ্ন তুলেছেন।
বিএনপি কি ঐক্যফ্রন্টের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে, এমন কথাও বলেছেন একাধিক নেতা। সম্প্রতি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে একটি অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখন বেগম জিয়ার মুক্তির দাবিতে নেতাকর্মীরা কর্মসূচি দেয়ার দাবি তোলেন। তাদের কণ্ঠে ক্ষোভের চিত্র ফুটে ওঠে।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ওই অনুষ্ঠানে বলেন, আমরা বললাম নির্দলীয় সরকার ছাড়া নির্বাচন হবে না, কিন্তু দলীয় সরকারের অধীনেই হলো। কথা হলো খালেদা জিয়া ছাড়া নির্বাচন হবে না, কিন্তু খালেদা জিয়া ছাড়া আমরা নির্বাচনে গেলাম। কেন এই অবস্থা হলো? কেন আজো খালেদা জিয়া জেলে? কেন একটা দাবিও সরকার মানল না, কী কারণে এটা হলো? কেন ড. কামালের নেতৃত্ব মেনে নিতে হলো? এর কারণ অবশ্যই বের করতে হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে দলীয় বেশ কয়েকটি প্রোগ্রামে কেন্দ্রীয় নেতারা দোষারোপের সুরে যে ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন, তার প্রভাব তৃণমূলেও কিছুটা পড়েছে। এমনিতেই মামলা-হামলায় দিশেহারা নেতাকর্মীরা। আশার আলো না দেখে কেউ কেউ নিজেকে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রেখেছেন। নির্বাচন-পরবর্তী দলীয় কর্মসূচিগুলোতে যার প্রভাবও পড়তে দেখা গেছে।
আলাপকালে দলের এক সিনিয়র নেতা বলেছেন, বিএনপির ঐক্য অটুট রয়েছে। তবে একযুগ ক্ষমতার বাইরে থাকার পাশাপাশি শীর্ষ নেত্রী কারাগারে থাকায় নেতকর্মীদের মধ্যে অভিযোগ-অনুযোগ থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ রেখেই খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। একদফা দাবি নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এই আন্দোলন মূলত রমজানের পরই শুরু হবে।