নিজস্ব প্রতিবেদক
মধ্যরাতের ভোটে নির্বাচিত সরকার বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জীবন নাশ করতে মরিয়া বলে মন্তব্য করেছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেছেন,দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী খালেদা জিয়া। তাকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে না পেরে মধ্যরাতের ভোটের সরকার তাঁকে জোর করে আটকে রেখে বিনা চিকিৎসায় তাঁর জীবন বিপন্ন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রিজভী। তিনি বলেন, দেশনেত্রীকে সরকার সরাসরি গলা টিপে হত্যা না করে এভাবে বিনা চিকিৎসায় অন্ধকার কারাগারে আটকিয়ে রেখে তিলে তিলে হত্যা করার চেষ্টা করছে।
খালেদা জিয়ার অসুস্থতা বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌছেছে উল্লেখ করে রিজভী বলেন,তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার অসুস্থতা এখন বিপজ্জনক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে তিনি একটি অস্বাস্থ্যকর ও পরিত্যক্ত কারাগারের মধ্যে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছেন।
সরকার প্রতিহিংসাবশত খালেদা জিয়াকে আটকে রেখেছে এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ৭৪ বছর বয়সী দেশনেত্রীকে দীর্ঘ এক বছর যাবৎ নির্মম-নিষ্ঠুর নিপীড়ণের মাঝে বিনা চিকিৎসায় পুরাতন জরাজীর্ণ আবদ্ধ কারাগারে বন্দী করে রাখার উদ্দেশ্যই হচ্ছে এক অনন্ত প্রতিহিংসার জ্বালা মেটানো। দেশনেত্রীকে সরকার সরাসরি গলা টিপে হত্যা না করে এভাবে বিনা চিকিৎসায় অন্ধকার কারাগারে আটকিয়ে রেখে তিলে তিলে হত্যা করার চেষ্টা করছে। দেশনেত্রীর মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবি লাখ লাখ কন্ঠে কোটি কোটি বার উচ্চারিত হলেও সরকার বেগম জিয়াকে নিয়ে তাদের নিজস্ব জীবনবিনাশী নকশা নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলতে চাই-অনেক অত্যাচার ও জ্বালা-যন্ত্রণা দিচ্ছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে, এক বছরের বেশী সময় কারাগারে আটকিয়ে রেখে কষ্ট দেয়ার পরেও কেন প্রতিহিংসা শেষ হচ্ছে না।এবার তাঁকে মুক্তি দিন।
গণতন্ত্রের জন্য খালেদা জিয়ার দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের কথা তুলে ধরে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন,যে বেগম জিয়া স্বৈরতান্ত্রিক একনায়কের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের পক্ষে বছরের পর বছর লড়াই করেছেন, সংগ্রাম করেছেন। জনগণের কাছে গিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন। রাজপথে অবিচল, অকম্প ও নির্ভিক নেতৃত্ব দিয়েছেন। কারাগারে গেছেন। গৃহে অন্তরীণ থেকেছেন। নিজ বাড়ি থেকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে উচ্ছেদ হয়েছেন। তাঁর সন্তানেরা মিথ্যা অভিযোগ, মিথ্যা মামলায় জড়িত হয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন। তারপরেও সবকিছুকে উপেক্ষা করে দেশের মানুষের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, জনগণের মৌলিক অধিকারের জন্য অবিরাম আপোষহীন লড়াইয়ে এই নেত্রী নিজস্ব সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ত্যাগ করে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। তাই এই গণমানুষের পক্ষে সংগ্রামী বৈশিষ্ট্যে আপন মহিমায় ভাস্বর দেশনেত্রী বেগম জিয়ার গড়ে ওঠা ভাবমূর্তিকে কোনভাবেই বিতর্কিত করতে না পেরে, জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে না পেরে মধ্যরাতের ভোটের সরকার তাঁকে জোর করে আটকে রেখে বিনা চিকিৎসায় তাঁর জীবন বিপন্ন করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
খালেদা জিয়াকে কেরানীগঞ্জ কারাগারে নেয়া হবে-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এমন কথার সমালোচনাও করেন রিজভী। বলেন,সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন- খালেদা জিয়াকে কেরানীগঞ্জ কারাগারে স্থানান্তরের চিন্তা-ভাবনা চলছে। দেশনেত্রীকে চিকিৎসা না দেয়ার বিষয়ে সরকারের প্রতি দেশবাসীর যে ধিক্কার উঠেছে সেটিকে আমলে না নিয়ে নাৎসীবাদী পন্থায় তারা তাদের মনুষ্যত্বহীন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেই চলেছে। মিডনাইট নির্বাচনের ও মহা কারচুপির ভোটে মন্ত্রীরা কালাপাহাড়ী মনোভাব নিয়ে কথা বলেন। তারা উচিৎ-অনুচিতের ধার ধারেন না। শুধু বিনাশ ও নির্মূলের মনমানসিকতা এই সরকারের।সরকারবিরোধী দল সমূহকে নতজানু করে রাখতেই বেগম জিয়াকে বিনা কারণে আটকিয়ে রেখেছে।
তিনি বলেন, কেরানীগঞ্জ কারাগারের নির্মান কাজ এখনও শেষ হয়নি। সেখানে গ্যাস-পানির এখনও তেমন কোনো সুবন্দোবস্ত নেই। নির্মানাধীন একটি কারাগারে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে স্থানান্তরের সরকারি চিন্তা-ভাবনা মনুষ্যত্বহীন কাজ।
আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের মনস্তত্বে যেটি নেই সেটি হলো ঔদার্য, ব্যাপক পরিসর, ভিন্ন মত বা বিরোধী দলের প্রতি সহিষ্ণুতা, মানবিকতা, সততা ও সহানুভুতি।গণতন্ত্রহরণ ও বিরোধী দল নিধন যাদের সরকারী কর্মসূচি তাদের কাছ থেকে মানবতা আশা করা যায় না। সরকারের উদ্দেশে বলতে চাই-দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার প্রতি জুলুম বন্ধ করুন। তাঁকে নিয়ে রাজনৈতিক ধুর্তামি বন্ধ করুন।এই মূহুর্তে দেশনেত্রীকে মুক্তি দিয়ে তাঁর সুচিকিৎসা প্রাপ্তির বন্ধ করা পথকে খুলে দিন। মানুষ এই সরকারের অশান্তির আগুনে ভেতরে ভেতরে দগ্ধ হচ্ছে।দেশনেত্রীর জীবন নিয়ে এই ছিনিমিনি খেলায় জনগণ ক্ষোভে অগ্নিবর্ণ হয়ে উঠেছে। এই সীমাহীন অন্যায়ের জবাব জনগণ একদিন দেবে।