২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৩:৩৮

ঈদ সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন নওগাঁর টুপি কারিগরা

 

 নওগাঁ প্রতিবেদক:

ঈদ সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন নওগাঁর নারী টুপি কারিগররা। সারা বছর টুপি সেলাইয়ের টুকটাক কাজ হলেও রমজান এবং ঈদে ব্যস্ততা বেড়ে যায়। সুঁই-সুতা দিয়ে তৈরি চমৎকার এসব টুপির চাহিদাও ব্যাপক।
গ্রামে ঢুকলেই চোখে পড়বে সুঁই আর সুতার নিপুন খেলায় টুপি তৈরির কাজ করার দৃশ্য। মনের মাধুরি মিশিয়ে সাদা টুপিতে বিভিন্ন রংয়ের সুতা দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে ফুল। গ্রামের নারীরা পাড়ার কোথাও গুটিবন্ধ হয়ে চট বা পাটি বিছিয়ে গল্পের তালে কাজ করে চলেছেন। এ দৃশ্যটি জেলা মহাদেবপুর উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের।
শুধু সুলতানপুরই নয়। উপজেলার শিবগঞ্জ, তাতারপুর, হরামনগর, মধুবন, উত্তরগ্রাম, কুঞ্জবন, আলীপুর, ঈশ^রপুর, দাশড়া, চকরাজাসহ বিভিন্ন গ্রামে নারীরা এখন এ টুপি তৈরিতে ব্যস্ত। ঈদে বোনাসের পরিমাণটা একটু বেশি পেতেই পাইকারদের কাছ থেকে নেয়া এসব সাদা টুপি সেলাইয়ের পর বুঝিয়ে দিতে কারিগরদের তোড়জোড় চলছে।
সংসারের কাজের পাশাপাশি সারা বছরই টুপি তৈরি হয়। আর টুপি তৈরি করে বাড়তি আয় করেন এই নারীরা। পড়াশুনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরাও টুপি তৈরির কাজ করে থাকে। সুঁই-সুতা দিয়ে নিপুন হাতে প্রতিটি টুপি তৈরি করতে প্রায় ১৫/২০ দিন সময় লাগে। তবে এ কাজ করে স্বাবলম্বী হলেও সময়ের ন্যায্য মজুরি তারা পান না।
জেলার মধ্যে মহাদেবপুরে এ টুপির উৎপত্তি। চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন জেলার ১১টি উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে এ টুপি তৈরি। টুপির সঙ্গে দুই হাজারের অধিক ব্যবসায়ী জড়িত। আর প্রায় ৩০ হাজার নারী কারিগর সম্পৃক্ত যাদের উপার্জনের অন্যতম পথ এই টুপি তৈরি। আর তাই সামান্য পৃষ্ঠপোশকতাই পারে এ পথকে আরও সুগম করতে।
গৃহবধূ সাবিনা ও মোরশেদা বলেন, সাংসারিক কাজের পাশাপাশি এ টুপি তৈরির করেন তারা। তবে রমজান এবং সামনে ঈদের জন্য ব্যস্ততা একটু বেশি। মূলত বোতাম সেলাই ও চেইন সেলাই দিয়ে টুপি তৈরি করা হয়। বোতাম সেলাই টুপির পরিশ্রম একটু বেশি এবং পারিশ্রমিক ৪০০-৫৫০ টাকা। আর সময় লাগে ১৫/২০ দিন। চেইন সেলাই টুপি সহজ ও সময় কম লাগে। কাজও দ্রুত হয়। এর পারিশ্রমিক ৩০০-৩৫০ টাকা। তবে পরিশ্রমের তুলনায় পারিশ্রমিক খুবই কম।
অস্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী রুমি সুলতানা জানান, পড়াশুনার পাশাপাশি সে টুপি তৈরির কাজ করে। এ থেকে যে আয় হয় তা দিয়ে কাগজ-কলম ও হাত খরচসহ আনুষঙ্গিক কাজে ব্যয় হয়।
মধুবন গ্রামের গৃহবধূ সাজেদা খাতুন। টুপির প্রাথমিক কাজটি করেন তিনি। তিনি বলেন, এক থান কাপড় থেকে প্রকারভেদে ৯০-১০০টি টুপি তৈরি হয়। পলিথিনের কাগজে সোনামুখি সুই দিয়ে বিভিন্ন ফুলের গ্রাফিক্স করা হয়। এরপর সাইজ করা টুপির কাপড়ে গ্রাফিক্স পলিথিন রেখে তেল ও ব্লু (নীল রং) দিয়ে ছাপ দেয়া হয়। ছাপ দেয়া ফুলের উপর সেলাই মেশিন দিয়ে সেলাই করা হয়। এ কাজটি করতে ১-২ দিন সময় লাগে। যার মজুরি পান ৭০০টাকা। এরপর এ টুপিগুলো বিভিন্ন কারিগরদের কাছে হাতের কাজ করতে দেয়া হয়।
স্থানীয় টুপি ব্যবসায়ী মাজহারুল ইসলাম বলেন, গত আট বছর থেকে এ টুপির ব্যবসা করে আসছেন। প্রায় ১ হাজার ৫শ জন নারী কারিগর তার এ টুপি তৈরির সঙ্গে সম্পৃক্ত। দাম বেশি হওয়ায় স্থানীয় বাজারে এসব টুপির তেমন একটা চাহিদা নেই। তবে সৌদি আরবে এ টুপির চাহিদা বেশি। প্রকার ভেদে প্রতিটি টুপি ৫শ থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হয়।

দৈনিক দেশজনতা/এন আর

 

প্রকাশ :জুন ৭, ২০১৭ ৯:২৪ অপরাহ্ণ