২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | দুপুর ২:২১

অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল : শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হলের আবাসিক ছাত্র-ছাত্রীদের বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ জানান, বুধবার গভীর রাতে রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষরে এক নোটিশে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়।

নোটিশে বলা হয়, ২৬ মার্চ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-২০১৯’ উদযাপন উপলক্ষে উদ্ভুত ঘটনার প্রেক্ষিতে সাধারণ শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারিদের নিরাপত্তা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি সমুন্নত রাখার স্বার্থে উপাচার্যকে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ২৮ মার্চ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় ক্লাস, পরীক্ষাসহ সকল একাডেমিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হলো এবং একইসঙ্গে সব হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ প্রদান করা হলো।

উল্লেখ্য, স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের না রাখা এবং উপাচার্য ইমামুল হকের একটি মন্তব্যকে কেন্দ্র করে গত মঙ্গলবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন ছাত্রছাত্রীরা।

ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ১২ দফা দাবিতে বুধবার দিনভর শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলার পর বুধবার রাত ২টা ৫৫ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. হাসিনুর রহমান স্বাক্ষরিত ও ই-মেইলে প্রেরিত এক নোটিশে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। ওই নোটিশ বৃহস্পতিবার সকালে বিশ^বিদ্যালয়ের নোটিশ বোর্ডে টানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ এবং বিকেলের মধ্যে আবাসিক শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দিলেও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি হল ত্যাগ না করার ঘোষনা দিয়েছেন। এতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।

শিক্ষার্থীরা টিএসসিতে পাঠদান না করানো, সেমিনার রুমের ভাড়া তিন হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ৫শ’ টাকা করা এবং সব জাতীয় দিবস শিক্ষক-শিক্ষার্থী সমন্বয়ে উদযাপন করার দাবি জানিয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্লাশ-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

প্রসঙ্গত, গত ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে বৈকালিক চা চক্র ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সেখানে শিক্ষার্থীদের আমন্ত্রন জানানো হয়নি। শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানের বাইরে এর প্রতিবাদ জানায়।

এ ঘটনায় ভিসি ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষার্থীদের রাজাকারের বাচ্চা বলেছেন বলে দাবি শিক্ষার্থীদের। এর প্রতিবাদে এবং ভিসির ওই উক্তি প্রত্যাহারের দাবীতে গত বুধবার সকাল থেকে ক্লাশ-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে একক ক্ষমতাবলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষনা করেন উপাচার্য।

এ বিষয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এসএম ইমামুল হক আজ সকালে মুঠোফোনে বলেন, গত বুধবার মুষ্টিমেয় শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের জিম্মি করেছিল। এভাবে চলতে দেওয়া যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক-সাধারণ শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সরকারী সম্পদের ব্যাপক ক্ষতির আশংকা রয়েছে। এই আন্দোলন সাধারন শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নয়, স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্ধনে একটি বিশেষ গোষ্ঠী আন্দোলনের নামে অরজকতা করছে। এটা বাড়াবাড়ির পর্যায়ে পড়ে। সবার স্বার্থে প্রদত্ত আইন অনুযায়ী একক ক্ষমতা বলে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষনা করেছেন।

শিক্ষার্থীরা বিকেল ৫টার মধ্যে হল ত্যাগের পাশাপাশি কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মেনে নেবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি। এরপরও কেউ ক্যাম্পাসে বিচ্ছৃংখলা করার চেষ্টা করলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন উপাচার্য।

প্রকাশ :মার্চ ২৮, ২০১৯ ১১:৪৬ পূর্বাহ্ণ