খেলা ডেস্ক
ওল্ড ট্রাফোর্ডে এমন ম্যাড়মেড়ে ড্র হয়ত আশা করেননি কেউই। অথবা প্রথমার্ধেই দুইদলের চারজনের বদলি হওয়াটাও অনুমিত ছিল না। সেটা অবশ্য ট্যাকটিক্যাল কোনো বদলি ছিল না, সবগুলোই বাধ্য হয়ে করাতে হয়েছে দুই ম্যানেজারকে। বাধ্য হয়ে আরও একটা কাজও করতে হয়েছে দুইদলকে, গোলশূন্য ড্রয়ে পয়েন্ট ভাগাভাগি করেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড-লিভারপুলের। তবে লিভারপুলের কাজটা হয়ে গেছে তাতে, পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে উঠে গেছে তারা। সমান ম্যাচে ম্যানচেস্টার সিটির চেয়ে এক পয়েন্টে এগিয়ে এখন লিভারপুল।
ম্যাচের শুরুটা যেমন হয়েছিল, সময়ের সঙ্গেই সেই গতি কমে এসেছিল ওল্ড ট্রাফোর্ডে। ঘড়ির কাটা মিনিট ছোঁয়ার আগেই ম্যাচে গোল হতে পারত। অ্যাশলি ইয়াং এর বিপদজন ব্যাকপাস অবশ্য ডেভিড ডি গিয়া সামাল দিয়েছিলেন। কিন্তু ডিবক্সের ভেতর ফ্রিকিকের হাত থেকে রেহাই দিতে পারেননি দলকে। তাতে অবশ্য ডি গিয়া বা ইয়াং কারো জন্যই আফসোসের কারণ হয়নি। লিভারপুল কাজে লাগাতে পারেনি সেই সুযোগ। প্রথমার্ধে এর চেয়ে ভালো সুযোগও আর আসেনি ইয়ুর্গেন ক্লপের জন্য।
প্রথমার্ধের ম্যাচ রিপোর্ট আলাদা করে লিখলে হয়ত সেটার শিরোনাম বদলে মেডিকেল রিপোর্ট বানিয়ে দেওয়া যেত। অদ্ভুত প্রথমার্ধে ইনজুরিতে ৩ জন খেলোয়াড় হারিয়েছে ইউনাইটেড। ইনজুরির কারণে লিভারপুল হারিয়েছে রবার্তো ফিরমিনোকে। তাই চাপটা বেশি গেছে ইউনাইটেডের ওপর দিয়েই। প্রথমে হেরেরা, এরপর মাতা মাঠ ছেড়েছেন। আর হেরেরার জায়গায় নেমে জেসি লিনগার্ড প্রথমার্ধের আগেই আরেকবার বদলি হয়েছেন। ম্যাচফিট ছিলেন না, লিনগার্ড তাই টিকতেও পারেননি বেশিক্ষণ। তবে মাঠ ছাড়ার আগেই দলকে এগিয়ে দেওয়ার সেরা সুযোগটা পেয়েছিলেন তিনিই। থ্রু বল ধরে ঢুকে গিয়েছিলেন ডিবক্সের ভেতর, কিন্তু অ্যালিসন বেকারের দুর্দান্ত সেভ আর গোল পেতে দেয়নি তাকে। অ্যালিসনের সঙ্গে সংঘর্ষেও কপাল পুড়েছে, এরপরই মাঠ ছেড়েছেন তিনি।
দ্বিতীয়ার্ধেও আক্রমণে বেশি উজ্জ্বল ছিল ওলে গানার সোলশায়ারের দল। অবশ্য নিশ্চিত গোলের সুযোগ সেভাবে তৈরি করা হয়নি ইউনাইটেডের। তবে হাফ চান্সগুলো কাজে লাগাতে পারলেও হয়ত গোলের মুখ দেখতে পারত রেড ডেভিলরা। ৫২ মিনিটে অ্যালেক্সিস সানচেজের হেড মিস করে লক্ষ্য। রোমেলু লুকাকু ডান প্রান্ত দিয়ে অন্তত দুইবার ভালো ক্রস করেছিলেন, কিন্তু কোনোবারই সেসব কাজে লাগাতে পারেনি ইউনাইটেড। এর মধ্যে একটা আবার ৯১ মিনিটে, কিন্তু ফার্গি টাইম আর ফিরে আসেনি ওল্ড ট্রাফোর্ডে, ক্রিস স্মলিংও নাগাল পাননি সে ক্রসের। আক্রমণভাগে মার্কাস র্যাশফোর্ডও ছায়া হয়ে ছিলেন পুরোটা সময়, তার আসলে তেমন কিছু করারও ছিল না। প্রায় পুরোটা ম্যাচ তিনি খেলেছেন খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।
অ্যানফিল্ডে লিভারপুলের কাছে ইউনাইটেড হেরেছিল জের্দান শাকিরির দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে। এরপর নতুন ম্যানেজারের অধীনে ইউনাইটেডের চেহারা বদলে গেছে। বদলে যাওয়া ইউনাইটেডের বিপক্ষেও বেঞ্চে ছিলেন শাকিরি। শাকিরির সরণাপন্ন হয়েও অবশ্য এবার আর লাভ হয়নি ইয়ুর্গেন ক্লপের। এমন দিনে শাকিরিও আর পারেননি ম্যাচের ভাগ্য বদলাতে। জোয়েল মাটিপের কর্নার থেকে করা হেড যা একটু উত্তেজনা ছড়িয়েছিল লিভারপুলের ডাগ আউটে, এছাড়া দ্বিতীয়ার্ধে লিভারপুলের আক্রমণ ছিল ছায়া হয়েই। মানে, সালাহরা মোটেই সুবিধা করতে পারেননি। ইউনাইটেডের ৩ শট অন টার্গেটের বিপরীতে লিভারপুল গোলে শট করতে পেরেছিল মাত্র একবার। তাও ডেভিড ডি গিয়া সহজেই লুফে নিয়েছিলেন। তাতে ইউনাইটেডের হয়ে শততম ক্লিনশিট নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন ডি গিয়া।
রাতে অন্য ম্যাচে আর্সেনাল সাউদাম্পটনকে ২-০ গোলে হারানোয় অবশ্য এই ড্রয়ে খানিকটা অসুবিধাতেই পড়েছে ইউনাইটেড। পয়েন্ট তালিকায় পাঁচে নেমে গেছে ইউনাইটেড, আর চারে উঠে গেছে আর্সেনাল।