বিদেশ ডেস্ক
ভারত শাসিত কাশ্মিরের পুলওয়ামায় এক স্বাধীনতাকামী যোদ্ধার আত্মঘাতী হামলায় ৪৪ সিআরপিএফ জওয়ান নিহত হওয়ার ঘটনায় শোকাহত ভারতের সব রাজনৈতিক দল। কিন্তু পাকিস্তানের ওপর দোষ চাপানোর প্রশ্নে সবাই সহমত নয়।
পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার প্রতিক্রিয়ায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির একটি মন্তব্যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। মমতা বলেছেন, “তড়িঘড়ি পাকিস্তানের ওপর দোষ চাপানো ঠিক নয়। তদন্ত করে দেখা দরকার। তাতে যদি ওরাই দোষী প্রমাণিত হয়, তা হলে অবশ্যই পদক্ষেপ করতে হবে। কিন্তু কীভাবে, কার গাফিলতিতে এত বড় হামলার ঘটনা ঘটে গেল, তাও দেখতে হবে।”
মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের প্রতিধ্বনি শোনা গেছে সারা দেশ জুড়েই। প্রশ্ন উঠেছে, কেন এত বেশি সংখ্যক আধা সামরিক বাহিনীকে একসঙ্গে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল? কেন সড়কপথে? সেটাও কেন বিনা পাহারায়? যেভাবে হামলা হয়েছে, তাতে স্পষ্ট যে জঙ্গিদের কাছে নির্দিষ্ট খবর ছিল। কারা খবর দিল?
ওই পথে যে হামলা হতে পারে, তারও সতর্কবার্তা ছিল গোয়েন্দা দপ্তরের থেকে। সেটা কেন লঘুভাবে নেওয়া হল?
এতগুলো প্রশ্নের জবাব পাওয়া যেহেতু বাকি, বিরোধীরা তাই প্রতিক্রিয়ায় অতি সতর্ক। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক প্রত্যাঘাত হানার দাবিতে যারা এখন সোচ্চার, তাদের সুরে যাতে সুর না মিলে যায়, এই হামলার রাজনৈতিক ফায়দা তোলার যে চেষ্টা হতে পারে পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক সংঘর্ষে জড়িয়ে, তা থেকে যাতে দূরত্ব বজায় রাখা যায়, সব বিরোধী দলই এখন সে নিয়ে সাবধান।
সামনে সংসদীয় নির্বাচন। সীমান্তে যুদ্ধ বাধিয়ে দেশে জাতীয়তাবাদী হাওয়া তুলে ভোটে তার প্রভাব ফেলার চেষ্টা যে শাসকগোষ্ঠী করতেই পারে, সে ব্যাপারে সচেতন সবাই। ফলে শনিবার দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের পৌরহিত্যে যে সর্বদলীয় বৈঠক হল, তাতে জঙ্গি হামলার নিন্দা করা হয়েছে সমবেতভাবে, সমস্বরে, কিন্তু সরাসরি পাকিস্তানের নাম করে দোষারোপ করা হয়নি। যদিও বলা হয়েছে ভারত-বিরোধী জঙ্গিপনায় প্রতিবেশী দেশের মদত দেওয়ার কথা, কিন্তু ওইটুকুই।
এই বৈঠকে ছিলেন কংগ্রেসের গোলাম নবি আজাদ, আনন্দ শর্মা এবং জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া। তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে উপস্থিত ছিলেন ডেরেক ও ব্রায়েন এবং সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়া সিপিআইয়ের ডি রাজা, শিবসেনার সঞ্জয় রাউথ, লোক জনশক্তি পার্টির রামবিলাস পাসোয়ান এবং জম্মু–কাশ্মীরের ন্যাশনাল কনফারেন্স পার্টির ফারুক আবদুল্লা। বৈঠকে গৃহীত সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে দেশের সেনাবাহিনীর প্রতি সমর্থন অটুট রাখার কথাও বলা হয়েছে।
কলকাতাতে শনিবার নিহত সিআরপিএফ জওয়ানদের স্মরণে একটি মোমবাতি মিছিল হয় হাজরা মোড় থেকে ময়দানে গান্ধী মূর্তি পর্যন্ত, যে মিছিলের পুরোভাগে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। মিছিলের শেষে মমতা এক সংক্ষিপ্ত ভাষণে বলেন, দেশকে রক্ষা করতে দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে এবার এগিয়ে আসতে হবে।
এদিন রাজ্যের বাম দলগুলিও আলাদা একটি শোক মিছিল বের করে শহরে। আর এদিনই বিকেলে কাশ্মীর থেকে ফিরিয়ে আনা হয় নিহত দুই বাঙালি সিআরপিএফ কর্মী বাবলু সাঁতরা এবং সুদীপ বিশ্বাসের কফিনবন্দি দেহ। বাবলুর বাড়ি হাওড়া-উলুবেড়িয়ার বাউড়িয়ার চককাশীতে। আর সুদীপ ছিলেন নদীয়ার পলাশীপাড়ার তিলিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। দুই নিরাপত্তা কর্মীর পরিবার এবং পাড়া-প্রতিবেশী এদিন ছিল সংবাদ মাধ্যমের নজরে। দিনভর তাদেরই খবর প্রচারিত হয়েছে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমে।
তীব্র শোকের মাঝেও খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি কথা বলেছেন বাবলুর স্ত্রী। তিনি বলেছেন, এই হামলার শোধ নিতে যুদ্ধ বাধানো ঠিক হবে না। কারণ যুদ্ধে আরও অনেক মানুষের প্রাণ যাবে।