খেলা ডেস্ক
আগে ব্যাটিং করা বাংলাদেশের টপ অর্ডার ব্যর্থ, ভঙ্গুর মিডল অর্ডার। এরপর মোহাম্মদ মিঠুনের হাল ধরা, তবে থেমে যাওয়া ইনিংস বড় করার আগেই। তার সহকারির ভূমিকা পালন করা ব্যাটসম্যানের অবস্থাও তাই। ‘পার’ স্কোরের বেশ আগেই তাই থেমে যাওয়া বাংলাদেশের। এরপর মার্টিন গাপটিলের সেঞ্চুরি, নিউজিল্যান্ডের সহজ জয়। হুট করে মনে হতে পারে, হয়তো বলা হচ্ছে নেপিয়ারে প্রথম ওয়ানডের কথাই। আদতে ক্রাইস্টচার্চেও ঘটেছে এমনই। ২২৬ রানে অল-আউট হয়ে যাওয়া বাংলাদেশ গাপটিলের ঝড়ো সেঞ্চুরিতে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৮ উইকেটে হেরে সিরিজও হেরে গেছে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই। নিউজিল্যান্ড জিতেছে ৮৩ বল বাকি রেখেই।
ক্রাইস্টচার্চে ছিল বৃষ্টি হুমকি, সঙ্গে মেঘাচ্ছন্ন কন্ডিশন। টসে জিতে তাই বোলিং নিলেন কেন উইলিয়ামসন। এরপর পিচ্ছিল ফিল্ডিং, আর অতিরিক্ত রানের পশরা সাজিয়েও বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের ওপর আধিপত্য করলো নিউজিল্যান্ড। চারটি ক্যাচ মিসের সঙ্গে রান-আউট মিসের চড়া মূল্য তো দূরে থাক, বাংলাদেশ দাবিও করতে পারল না কিছু। আর পরে বোলারদের মাঝে এক মোস্তাফিজুর রহমান ছাড়া নিউজিল্যান্ড ব্যাটসম্যানদের চ্যালেঞ্জ জানাতে পারলেন না কেউই।
ব্যাটিংয়ে শুরুটা হয়েছিল লিটন দাসকে দিয়ে, ট্রেন্ট বোল্টকে বেরিয়ে এসে তুলে মারতে গিয়ে মিড-অন থেকে পেছনে দৌড়ে যাওয়া ফার্গুসনের হাতে ধরা পড়লেন তিনি আগেরদিনের মতো ১ রান করেই। তামিম রান-আউট থেকে বাঁচলেন, নতুন বলের সুইংয়ের বিপক্ষে ছিলেন অতি-সতর্ক। তবে ওভার দ্য উইকেট থেকে করা হেনরির বলটা মিডউইকেটের দিকে খেলতে গিয়ে হলেন এলবিডব্লিউ, ২৮ বলে ৫ রান করে তামিম শুধু সংগ্রামই করে গেলেন। দুই ওপেনারের উইকেটের মাঝে বৃষ্টি এসে কিছুক্ষণ থামিয়েছিল খেলা।
সৌম্য আবারও শুরুটা ভাল করলেও শেষটা করেছেন হতাশাজনকভাবে- ২৩ বলে ২১ রান করে ডি গ্রান্ডহোমের অফস্টাম্প থেকে বেরিয়ে যাওয়া বলে ব্যাট চালিয়ে স্লিপে ধরা পড়ে। দুইবার জীবন পেয়েছিলেন মুশফিক, হেনরির বলে মিডউইকেটে অ্যাস্টলের হাতে ৬ রানে ও স্লিপে টেইলরের হাতে ১৪ রানে। তবে আগের ম্যাচের মতোই ইনসাইড-এজে বোল্ড হওয়ার আগে করতে পেরেছেন ২৪ রান। মাহমুদউল্লাহ ফিরেছেন দ্রুতই, অ্যাস্টলের প্রথম ওভারে তাকে আলগা শট খেলতে গিয়ে কট-বিহাইন্ড হয়ে।
এরপর মিঠুনের পালা। তাকেও একটা জীবন দিলেন টেইলর, ৫ রানে। সেটা কাজে লাগালেন তিনি। অ্যাস্টলকে স্লগ করে ছয় মেরে ফিফটি পূর্ণ করলেন। তবে হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট ভোগাল তাকে, শেষটাও হলো না মনমতো। সাব্বিরের সঙ্গে ৭৩ রানের জুটি ও নিজের ৫৭ রানের পর অ্যাস্টলের স্লাইডার মিস করে বোল্ড হয়ে ফিরেছেন ৩৫তম ওভারে। সাব্বির একটা জীবন পেয়েছিলেন, অ্যাস্টলের বলটা স্টাম্পে লাগলেও বেল পড়েনি বলে। এরপর তিনি যোগ করলেন আর ৩৩ রান, ফার্গুসনের পেসের সংমিশ্রণে ধোঁকা খেয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দেওয়ার আগে। তার আগে মিরাজ বা পরে সাইফউদ্দিনও করতে পারেননি কিছু, শেষদিকে মোস্তাফিজের এক চার ও মাশরাফির ছয়েই যা ছিল একটু রোমাঞ্চ।
বোলিংয়ে ব্রেকথ্রুর রোমাঞ্চ পেতে অবশ্য ৪৫ রান পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে বাংলাদেশকে। মোস্তাফিজকে পুল করতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়েছেন হেনরি নিকোলস। তবে আরেকদিকে ঝড় তুলে ফেলেছেন ততক্ষণে গাপটিল। মাশরাফিকে চার মেরে মাত্র ৩৩ বলে ফিফটি পূর্ণ করেছেন, ক্যারিয়ারের ১৬ ও টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন ৭৬ বলে। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে উইলিয়ামসনের সঙ্গে তার জুটিতে উঠেছে ১৪৫ রান। ৮৭ বলে ১১৮ রান করে মোস্তাফিজের শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়েছেন গাপটিল, তবে তার আগেই নিউজিল্যান্ডকে নিয়ে গেছেন তিনি অনেকদূর।
সিরিজে শেষ ম্যাচে খেলবেন না উইলিয়ামসন, সে কারণেই কিনা থাকলেন শেষ পর্যন্ত। ক্যারিয়ারে ৩৭তম ফিফটি করলেন, অপরাজিত থাকলেন ৮৬ বলে ৬৫ রানে, জয়সূচক বাউন্ডারিও মারলেন তিনিই। তার সঙ্গী ছিলেন রস টেইলর- ২০ বলে ২১ রান করে।