২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৩:২০

১-১ গোলে ড্র হল ন্যু ক্যাম্পে মৌসুমের দ্বিতীয় ক্লাসিকো

খেলা ডেস্ক

ম্যাচটা হতে পারত লিওনেল মেসির। বেঞ্চ থেকে নেমে কম ম্যাচ তো জেতাননি বার্সাকে। ম্যাচটা হতে পারত গ্যারেথ বেলের, মেসির মতই বদলি হিসেবে নেমে রিয়ালের সেরা সুযোগটা পেয়েছিলেন তিনিই। কিন্তু মেসি বা বেল নয়, ম্যাচটা হয়ে থাকল আরেক বাঁ-পেয়ে ফরোয়ার্ডের। গত গ্রীষ্মে বার্সায় যোগ দেওয়ার পর থেকে ইনজুরি, ফর্মহীনতা মিলে নিজেকে একেবারেই তুলে ধরতে পারেননি ম্যালকম। মৌসুমের দ্বিতীয় এল ক্লাসিকোতে মেসির বদলে জায়গা পেয়েছিলেন মূল একাদশে। সুযোগটা লুফে নিলেন দু’হাতেই। ম্যালকমের সমতাসূচক গোল এবং দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ১-১ গোলে ড্র হল ন্যু ক্যাম্পে মৌসুমের দ্বিতীয় ক্লাসিকো। রিয়ালের হয়ে গোল করেছেন লুকাস ভাজকেজ।

ম্যাচের শুরু থেকেই মেসিহীন বার্সাকে চেপে ধরেছিল রিয়াল। ৫ মিনিটে ম্যাচের প্রথম গোলের সুযোগটা পেয়েছিল সোলারির দলই। প্রতি-আক্রমণে টনি ক্রুসের জোরাল শট ফিরিয়ে দেন বার্সা গোলরক্ষক মার্ক আন্দ্রে টার স্টেগান। পুরো প্রথমার্ধেই প্রতি-আক্রমণে বার্সাকে বেশ ভুগিয়েছে ‘লস ব্লাঙ্কোস’রা। ম্যাচে নিজেদের প্রথম প্রতি-আক্রমণেই লিড নেয় রিয়াল। ৬ মিনিটে ভিনিসিয়াস জুনিয়র ভাসানো ক্রস বুঝতে ভুল করেন জর্দি আলবা। বল পেয়েই ডিবক্সে ক্রস করেন করিম বেনজেমা। ক্লেমেন্ত লংলেকে ফাঁকি দিয়ে বাঁ-পায়ের আলতো টোকায় বল জালে পাঠান লুকাস ভাজকেজ। গ্যারেথ বেলের বদলে তার ওপর সোলারির দেখানো আস্থার পূর্ণ প্রতিদান দিলেন তিনি। শুরুতেই গোল খেয়ে মেসিহীন বার্সাকে মনে হয়েছে আরও খাপছাড়া। মাঝমাঠ এবং রক্ষণভাগে যেন ভুল পাসের মিছিলেই নেমেছিলেন বুস্কেটস-পিকেরা। সুযোগ বুঝে আরও আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে রিয়াল।
প্রথমার্ধে বার্সার রক্ষণভাগকে প্রায় পুরোটা সময়ই তটস্থ রেখেছিলেন ভিনিসিয়াস। কিন্তু তার একাধিক ভুল সিদ্ধান্ত রিয়ালকে ভুগিয়েছে বেশ কয়েকবার। ১৩ মিনিটে সার্জিও বুস্কেটসের ভুলে বল পেয়ে যান তিনি। বাঁ-প্রান্তে ক্রুস ফাঁকা থাকলেও স্বার্থপরের মত নিজেই শট নেন ভিনিসিয়াস। জেরার্ড পিকের দারুণ ব্লকে পরীক্ষায় পড়তে হয়নি টার স্টেগানকে। মিনিট পাঁচেক পর আবারও বার্সার ভুল, ইভান রাকিটিচের পা থেকে বল কেড়ে নেন ভিনিসিয়াস। আবারও সতীর্থদের কাউকে পাস না বাড়িয়ে নিজেই শট নেন, এবারও তাকে ফিরিয়ে দেন পিকে। প্রথমার্ধে ক্রুস, বেনজেমাদের রোষানলে বেশ কয়েকবারই পড়তে হয়েছে তরুণ ব্রাজিলিয়ানকে।

ভিনিসিয়াসের ভুলের বেশ চড়া মূল্যই দিতে পারত রিয়াল। কিন্তু রিয়ালের গোলরক্ষক হিসেবে ফেরা কেইলর নাভাস ছিলেন দুর্দান্ত ফর্মে। ২০ মিনিটে লুইস সুয়ারেজের পাস থেকে কোস্টারিকান গোলরক্ষককে একা পেয়ে যান মেসির বদলে নামা ম্যালকম। কিন্তু দারুণ দক্ষতায় তাকে ফিরিয়ে দেন নাভাস। এই সেভের পরই ক্যামেরায় ধরা পড়ে সুয়ারেজের শূন্য অভিব্যক্তি। যেন ভাবছিলেন, মেসি থাকলে হয়ত তখনই সমতায় ফিরতে পারত কাতালানরা। ২৭ মিনিটে আবারও গোলের সুযোগ পায় বার্সা, এবারও বাধ সাধেন নাভাস। রাকিটিচের ফ্রিকিক থেকে পিকের হেড ফিরিয়ে দেন দারুণভাবে। ৩৮ মিনিটে সুয়ারেজের বাঁকানো শটটাও ফিরিয়ে দিয়েছেন অবিশ্বাস্যভাবে। ফর্মের সাথে ভাগ্যটাও বেশ সহায় ছিল নাভাসের। ৩২ মিনিটে রাকিটিচের হেডে পরাস্ত হলেন, কিন্তু বল প্রতিহত হল বারপোস্টে। ম্যাচের সাথে আক্রমণের ধার বাড়ালেও ভুল পাসের ‘অভ্যাস’টা বদলায়নি বার্সার। প্রথমার্ধের শেষদিকে কুতিনিয়োর ভুলে মাঝমাঠে বল পেয়ে যান ভিনিসিয়াস। দুজনকে ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে শট নেন নিজেই, ফিরিয়ে দেন স্টেগান। প্রথমার্ধে লিড নিয়ে ফিরলেও ভিনিসিয়াসের স্বার্থপরতা বেশ ডুবিয়েছে রিয়ালকে।

প্রথমার্ধে বার্সার আক্রমণভাগে সবচেয়ে উজ্জ্বল ছিলেন তিনিই। সহজ এক সুযোগ হাতছাড়া করলেও ম্যালকমই ছিলেন আক্রমণে বার্সার ‘নিউক্লিয়াস’। দ্বিতীয়ার্ধের ১০ মিনিট পেরুতেই বার্সাকে সমতায় ফেরান তিনিই। ৫৭ মিনিটে রাকিটিচের পাসে নাভাসকে একা পেয়ে যান আলবা। গোললাইন ছেড়ে এগিয়ে এসে স্প্যানিশ লেফটব্যাককে ফিরিয়ে দেন নাভাস। ফিরতি বলে ডিবক্সের বাইরে থেকে সুয়ারেজের শট প্রতিহত হয় বারপোস্টে। ডিবক্সের ডানপ্রান্তে বল পেয়েই বাঁ-পায়ের বাঁকানো শটে দলকে সমতায় ফেরান ম্যালকম। প্রথম দর্শনে অনেকে হয়ত মেসিই মনে করে ফেলতে পারেন ম্যালকমকে, বাঁ পায়ে এমন গোল তো আর কম করেননি ‘লিও’। প্রথমার্ধের মিসে ‘জিরো’ হওয়া ম্যালকমই বনে যান ন্যু ক্যাম্পের ‘হিরো’। সমতায় ফিরেই তুরুপের তাসটা খেলেন ভালভার্দে। ৬৩ মিনিটে কুতিনিয়োর বদলে নামেন মেসি। চিত্রনাট্য যেন তৈরিই ছিল ন্যু ক্যাম্পে মেসিময় আরেক রাতের।

কিন্তু সদ্যই ইনজুরি ফেরত মেসি ঠিক স্বরূপে থাকতে পারেননি। ড্রিবলগুলো হচ্ছিল না ঠিকঠাক, সু্যোগসন্ধানী পাসগুলোও খুঁজে পাচ্ছিল না সুয়ারেজদের। বার্সার অধিনায়ককে দারুণভাবে মার্ক করেছিলেন কাসেমিরো এবং মদ্রিচ।রিয়ালের দুই মিডফিল্ডারের কড়া মার্কিংয়ে নিজের সেরাটা দিতে পারেননি মেসি। ‘এলএম১০’-এর সাথে একই সময় ভিনিসিয়াসের বদলি হিসেবে নেমেছিলেন বেল। ৮১ মিনিটে রিয়ালকে জেতানোর সেরা সুযোগটা পেয়েছিলেন ওয়েলশ ফরোয়ার্ডই। মার্কো আসেন্সিওকে থামাতে ডিবক্সে ছেড়ে বেরিয়ে আসেন স্টেগান। ফাঁকা গোলপোস্ট পেয়ে বেলের দিকে পাস বাড়ান বেনজেমা। কিন্তু বার্সার গোলে শটই নিতে পারেননি বেল। দ্বিতীয়ার্ধের তিন মিনিট বাকি থাকতে রিয়ালকে জেতানোর আরও এক সুযোগ পেয়েছিলেন ক্রুস। কিন্তু এবারও তার শট ফিরিয়ে দেন পিকে। রক্ষণে রীতিমত ‘লেটার মার্কস’ পেয়েই উতরে গেছেন সাবেক স্প্যানিশ ডিফেন্ডার। শেষ পর্যন্ত ড্র নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হল দু’দলকে। ‘অ্যাওয়ে’ গোল থাকায় এবং দ্বিতীয় লেগ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে হওয়ায় কিছুটা স্বস্তিতেই থাকার কথা রিয়ালের। কিন্তু ম্যাচটা যখন এল ক্লাসিকো, তখন ‘হোম’ ম্যাচ বা ‘অ্যাওয়ে’ গোল- এসব কেতাবী পরিসংখ্যান যেন পালায় জানালা দিয়েই। শেষ হাসি হাসবে কে, জানতে অপেক্ষা করতে হবে ২৮ ফেব্রুয়ারিতে বার্নাব্যুর ফিরতি লেগের জন্য।

প্রকাশ :ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৯ ২:৪২ অপরাহ্ণ