খেলা ডেস্ক
টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে হলে এ ম্যাচে জয়ের বিকল্প ছিল না খুলনা টাইটানসের। সেই লক্ষ্যে লড়াকু সংগ্রহ পেয়েছিল মাহমুদউল্লাহ বাহিনী। ব্যাটসম্যানরা ঠিকই নিজেদের কাজটা সেরে রেখেছিলেন। তবে বোলাররা পারলেন না। অ্যালেক্স হেলস, এবি ডি ভিলিয়ার্স, ক্রিস গেইলদের বুকে বিন্দুমাত্র ভয় ধরাতে পারেনি জুনায়েদ-ইয়াসিররা। ফলে ফলাফল যা হওয়ার তাই হলো। রংপুর রাইডার্সের কাছে ৬ উইকেটে হেরে বিপিএল-২০১৯ থেকে বিদায় নিলো টাইটানসরা।
জবাব দিতে নেমে উড়ন্ত সূচনা পায় রংপুর। এদিন ভিন্ন চিত্রে দেখা যায় দুই ওপেনারকে। ধরে খেলেন ক্রিস গেইল। আর মেরে খেলেন অ্যালেক্স হেলস। ক্যারিবীয় দানব গ্রহণ করেন ধীরে চলো নীতি। অন্যদিকে রীতিমতো তাণ্ডব চালান ইংলিশম্যান। মুড়ি-মুড়কির মতো চার-ছক্কা হাঁকাতে থাকেন তিনি। এতে মাত্র ৭ ওভারেই ৭০ রান তুলে ফেলে মাশরাফির দল।
দুর্দান্ত খেলতে খেলতে আচমকা থেমে যান হেলস। ইয়াসির শাহর বলে সরাসরি বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি। ফেরার আগে খেলেন ২৯ বলে ৮ চার ও ২ ছক্কায় ৫৫ রানের বিধ্বংসী ইনিংস। এতে জয়ের ভিত পেয়ে যায় রংপুর। পরে ক্রিজে এসে গ্যালারি তাতিয়ে দেন এবি ডি ভিলিয়ার্স। খুলনার বোলারদের বেধড়ক পেটাতে থাকেন তিনি। বাছ-বিচারহীনভাবে ভালো বলেও কোপ দাগান এ প্রোটিয়া। ফলে জয়ের দিকে ধাবিত হতে থাকে দল। তবে ২৫ বলে ৩ চার ও ৪ ছক্কায় ৪১ রানের মারকাটারি ইনিংস খেলে এবি ফিরলে রানের চাকা মন্থর হয়ে যায়। যদিও এরপরই জ্বলে ওঠেন গেইল। তিনিও খেলেন ৪০ বলে ৫৫ রানের ইনিংস। ফলে রংপুরের জয় হয়ে যায় সময়ের ব্যাপার। যা শেষ ওভারের তৃতীয় বলে ইয়াসিরকে ছক্কা মেরে উদযাপন করেন এবারের বিপিএলের সেরা রান সংগ্রাহক রাইলি রুশো।
বিপিএলে নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে টস জিতে প্রথমে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন রংপুর অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। ফলে আগে ব্যাটিং করতে নামে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের খুলনা। তবে শুরুতেই হোঁচট খায় দলটি। মাশরাফির শিকারে পরিণত হন আল-আমিন। দ্বিতীয় উইকেটে ব্র্যান্ডন টেইলরকে নিয়ে প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করেন জুনায়েদ সিদ্দিকী। কিন্তু হঠাৎই হার মানেন তিনি। ফরহাদ রেজার বলে রাইলি রুশোকে ক্যাচ দিয়ে ফেরত আসেন বাঁহাতি ওপেনার।
২৯ রানে টপঅর্ডারের দুই ব্যাটসম্যান হারালে রানের গতি শ্লথ হয়ে গিয়েছিল খুলনার। পরে নাজমুল হোসেন শান্তকে নিয়ে খেলা ধরেন ব্র্যান্ডন টেইলর। প্রথমে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া গড়ে তোলেন তারা। ক্রিজে সেট হলে ছোটাতে থাকেন স্ট্রোকের ফুলঝুরি। চেষ্টা করেন দ্রুত রান তোলার। তাতে ঘটে বিপত্তিও।ক্রিস গেইলের বলির পাঁঠা বনেন টেইলর। ফেরার আগে ২০ বলে ৪ চার ও ১ ছক্কায় ৩২ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন এ জিম্বাবুইয়ান। এই আউটের পর নজর কাড়ে ক্যারিবীয় দানবের উদ্যাম ড্যান্স।
টেইলর ফিরলেও রান বাড়ানোর ভিত পেয়ে যায় খুলনা। তাতে এসে জ্বালানি জোগান মাহমুদউল্লাহ। নাজমুল হোসেনের সঙ্গে তুখোড় জুটি গড়ে তোলেন তিনি। দুজনই বইয়ে দিতে থাকেন রানের নহর। রংপুর বোলারদের ওপর চালান স্টিম রোলার। এতে রানের চাকা ঘুরে বনবন করে। তবে হঠাৎই থেমে যান খুলনা অধিনায়ক। ফরহাদ রেজার শিকার হয়ে ২০ বলে ১টি করে চার-ছক্কায় ব্যক্তিগত ২৯ রান করে সাজঘরের পথ ধরেন তিনি।
সঙ্গী হারিয়ে বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারেননি নাজমুলও। পরের বলেই কট অ্যান্ড বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি। এবারের বিপিএলে শুরু থেকেই রানখরায় ভুগছিলেন এ ব্যাটার। এদিন দুর্দশা কাটিয়েছেন। ফিরেছেন ২ রানের জন্য হাফসেঞ্চুরি বঞ্চিত হয়ে। ৩৫ বলে ২ চারের বিপরীতে ৩ ছক্কা হাঁকিয়ে ৪৮ রান করেন বাঁহাতি ব্যাটার।
পরক্ষণেই ফরহাদের চতুর্থ শিকার হয়ে ফেরেন আরিফুল হক। শেষ পর্যন্ত ৬ উইকেটে ১৮১ রান তুলতে সক্ষম হয় খুলনা। তা সম্ভব হয়েছে শেষ দিকে ডেভিড উইজের টর্নেডো ব্যাটিংয়ের কারণে। মাত্র ১৫ বলে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ৩৫ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন তিনি।
রংপুরের হয়ে ৪ ওভারে ৩২ রানের বিনিময়ে ৪টি উইকেট নেন ফরহাদ রেজা। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এটি তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। দুর্দান্ত বল করেন মাশরাফিও। ৪ ওভারে মাত্র ১৭ রান খরচায় ১ উইকেট নেন তিনি।