নিজস্ব প্রতিবেদক:
কাজের সন্ধানে বেরিয়েছিলেন পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার ১৮ শ্রমিক। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে তাদের ১৭ জনই তলিয়ে গেছেন মেঘনার জলে। গত সোমবার রাতে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার কালিপুরা ও কলাগাছি নামক স্থানে মাটিবোঝাই ট্রলারডুবির ঘটনায় তারা নিখোঁজ হন।
ঘটনার পাঁচ দিন অতিবাহিত হলেও তাদের সন্ধান মেলেনি। তাই শোকের মাতম চলছে তাদের বাড়িতে বাড়িতে। বেঁচে থাকার আশা ছেড়ে দিয়ে এখন স্বজনদের লাশ পেলেই তাদের সান্ত¡না।
নিখোঁজদের সঙ্গে কাজে গিয়েছিলেন ম-ুমালার শ্রমিক নিতাই। ঘটনার পর দিন সকালে তিনি তার বাবা অমূল্যকে ফোন করে জানান, তারা সবাই ৯ দিন আগে গজারিয়া উপজেলার ভক্তখালীতে ট্রলারে মাটি কাটার কাজে যান।
গত সোমবার আনুমানিক রাত সাড়ে ৩টার দিকে ট্রলারে মাটি আনার সময় সবাই কেবিনে ঘুমিয়েছিলেন। হঠাৎ বিপরীত দিক থেকে তেলবাহী কার্গো ধাক্কা দিলে ট্রলারটি ডুবে যায়। এ সময় কোনো রকমে সাঁতরিয়ে নিতাই প্রাণে বাঁচলেও বাকিরা ওঠতে পারেননি। নিখোঁজ ১৬ জনের বাড়ি ভাঙ্গুড়ার খানমরিচ ইউনিয়নে।
নিখোঁজ ব্যক্তিরা হলেনÑ ম-ুমালা গ্রামের লয়ন ফকিরের ছেলে রফিকুল ইসলাম (৩৮), নূর ইসলামের ছেলে মানিক (২৫), সায়দারের ছেলে তুহিন (২০), আলতাফ হোসেনের ছেলে নাজমুল (২০), আবদুল আজিজের ছেলে জাহিদ (২০), গোলাপের ছেলে সোলেমান (৩৫), গোলবার হোসেনের ছেলে নাজমুল (২০), জাব্বার মোস্তফার ছেলে আলিফ (২০), মোস্তফা (২২) ও জামাতা রহমত (৩০), মাদারবাড়িয়া গ্রামের আহম্মেদের ছেলে আজাদ (৪৫); দাসমরিচ গ্রামের একই পরিবারের বাবা মোশারফ (৪৫), তার ছেলে ওমর (২৫), মোন্নাফ (১৮), ভাগ্নে রুহুল (২৩); চ-িপুর গ্রামের আলহাজের ছেলে আমিন (১৮), আলতাফের ছেলে হাছেন (২৫) এবং পার্শ্ববর্তী উল্লাপাড়ার গজালোর মৃত আয়েন উদ্দীনের ছেলে ইসমাইল (৪৫)।
ঘটনার পর থেকেই স্বজনদের মধ্যে চলছে আহাজারি। কান্নায় ভারী হয়ে পড়েছে ওই এলাকার বাতাস। তারা এখন বাইরের কাউকে দেখলেই স্বজনদের সন্ধান চাচ্ছেন। এরই মধ্যে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিখোঁজদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে সান্ত¡না দিয়েছেন। উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান হাসান আলিফের নেতৃত্বে পরিবারের সদস্যদের এক বস্তা চাল, দুই কেজি ডাল ও দুই কেজি আলু বিতরণ করা হয়েছে। তবে ম-ুমালা গ্রামের মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘নিখোঁজ গ্রামবাসীদের অন্তত লাশগুলো পেলেও মনকে সান্ত¡না দিতে পারতাম।’
খানমরিচ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আসাদুর রহমান বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে পরিবারগুলোকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।’ ইউএনও মো. মাসুদুর রহমান জানান, জেলা প্রশাসক তাদের আর্থিক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।