২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৮:১৫

দুর্নীতিবাজ, স্বাধীনতাবিরোধীদের এদেশে কোনও ঠাঁই হবে না: প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
জঙ্গিবাদ, দুর্নীতিবাজ, স্বাধীনতাবিরোধী ও মাদক ব্যবসায়ীদের এদেশে কোনও ঠাঁই হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শনিবার (১৯ জানুয়ারি) বিকেলে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে বিজয় অর্জন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিজয় উৎসবের সমাবেশে দেয়া ভাষণে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী দেশের সর্বস্তরের জনগণের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা ব্যক্ত করে বলেন, ‘৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ দীর্ঘদিন পর উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিয়েছে। আমি আন্তরিক ধন্যবাদ কৃজ্ঞতা জানাই তরুণ ভোটারদের, যারা প্রথমবার আনন্দঘন পরিবেশে ভোট দিয়েছে। আমি কৃষক, কামার, তাঁতি, শ্রমিকসহ সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাই- তারা আবারও নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছে। আমাকে আবারও দেশসেবার সুযোগ দিয়েছে। জনগণের আস্থার প্রতিদান দেবো- এ আমার প্রতিজ্ঞা।’

এসময় তিনি নির্বাচনকালীন নিরলসভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবি, সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী ও দলীয় সকল নেতাকর্মীদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ঐক্যবদ্ধ শক্তি সব সময় বিজয় অর্জন করে। এ নির্বাচনে সেটাই আবারও প্রমাণ হয়েছে। আমি সকল রাজনৈতিক দলকে ধন্যবাদ জানাই- যারা এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। আমরা সবাইকে সঙ্গে নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে জয়-পরাজয় একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। যখন আবারও দায়িত্ব পেয়েছি তখন আমি এ কথা দ্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে পারি- আমাদের সরকার দল-মত নির্বিশেষে সবার জন্য কাজ করবে। আমরা সকলের জন্য কাজ করবো। উন্নয়নের কাজে কোনও দল-মত দেখা হবে না। যারা ভোট দিয়েছেন কিংবা যারা দেন নাই সকলের প্রতি আমি আবারও ধন্যবাদ জানাই।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘এ নির্বাচন এ বিজয় আওয়ামী লীগের ইশতেহারের পক্ষে জনগণের রায়ের বিজয়। জনগণের রায়ের মর্যাদা যেন অক্ষুণ্ন থাকে সে জন্য কাজ করবো। জনগণের এ রায় জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে রায়।’

তিনি বলেন, ‘বিজয় পাওয়া যেমন কঠিন সেই বিজয় রক্ষা করা আরও কঠিন। আমরা সেই কঠিন দায়িত্বই পালন করতে চাই। আমরা সব বাধা দূরে রেখে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চাই।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘জনগণ চায় বাংলাদেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাক। জনগণের এ রায় অন্ধকার থেকে আলোর পথে যাত্রার রায়।’

তিনি বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে ও তরুণ প্রজন্মের জন্য আধুনিক সমাজ গড়ে তুলতে চাই। আধুনিক ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রতি, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের প্রতি এই রায় দিয়েছে জনগণ।’

তাঁর সরকারের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যে নির্বাচনী অঙ্গীকার করেছি তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবো। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এগিয়ে যাবে। জনগণ আমাদের আবারও তাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছে।’

এসময় তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে জাতির পিতা সহ তাঁর পরিবারের সদস্যদের নির্মম হত্যার কথা স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ‘প্রেতাত্মারা বঙ্গবন্ধুর রক্তকে এদেশের মাটি থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চেয়েছিল।’

অতীতের স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৮১ সালে দেশে ফিরেই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম- যে স্বপ্ন যে আদর্শ নিয়ে আমার বাবা দেশ স্বাধীন করেছিলেন তাঁর সেই দেখানো পথে সোনার বাংলা গড়ার। ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার। যে বাংলাদেশে কেউ ক্ষুধার্ত, গৃহহারা থাকবে না। বাংলাদেশ হবে উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ বারবার ভোট দিয়ে আমাকে সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। আমি আমার জীবনকে উৎসর্গ করেছি। ব্যক্তিগত জীবনে আমার কোনও চাওয়া পাওয়া নেই।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ হবে উন্নত, সমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশ- এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞাম, এটাই আমাদের লক্ষ্য। মানুষের জন্য কতটুকু করতে পারলাম কতটুকু দিতে পারলাম সেটাই আমাদের লক্ষ্য। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে আমরা দেশকে গড়ে তুলবো। এজন্য আমি দেশের সকল শ্রেণিপেশার মানুষের কাছে সহযোগিতা চাই। আসুন আমরা ভবিষ্যত প্রজন্মকে সুন্দর নিরাপদ বাংলাদেশ উপহার দিই।’

তিনি বলেন, ‘বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশ যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে, দেশের গ্রামগুলো যেন শহরের সুবিধা পায়, সেই কাজ আমরা করবো। দেশকে আমরা ক্ষুধামুক্ত করেছি, দারিদ্র্যের হার কমিয়েছি। ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে আমরা দারিদ্র্যমুক্ত করবো। আমরা সুদীর্ঘ পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘জনগণ বিশ্বাস করে যে ভোট আমাদের দিয়েছে সেই ভোটের সম্মান আমি রক্ষা করবো। এদেশের অনেক মানুষ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে জীবন দিয়েছে। এজন্য প্রয়োজনে আমি আমার বুকের রক্ত দিতে প্রস্তুত।’ এসময় তিনি ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ স্মরণ করেন।

তিনি বলেন, ‘আজ প্রমাণ হয়েছে, বাংলার মানুষকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারেনি পারবে না- এটা আমাদের প্রতিজ্ঞা।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিদায়ের আগে আমি সুকান্তের সেই ঐতিহাসিক দুটি কথা আবার বলে যাই, নির্বাচনের আগেও যে কথাগুলো বলেছিলাম- “চলে যাব— তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল, এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি— নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গিকার”।’

“আসুন সকলে মিলে আমরা প্রতিজ্ঞা করি, যেকোনও ত্যাগের বিনিময়ে আমরা জাতির পিতার সেই স্বপ্নের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করবো, ইনশাল্লাহ,। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক”- এই বলে তিনি তাঁর ভাষণ শেষ করেন।

প্রকাশ :জানুয়ারি ১৯, ২০১৯ ৬:৪৩ অপরাহ্ণ