রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে একটি পিকআপভ্যানে দলটির নেতারা বিজয় দিবস নিয়ে বক্তব্য দিচ্ছেন। নেতাদের বক্তৃতার পাশাপাশি দলের নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিচ্ছেন। এর মধ্যে বড় একটি শোভাযাত্রা নিয়ে নয়াপল্টনে যান ঢাকা-৯ আসনে বিএনপির প্রার্থী ও মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস। এর কিছুক্ষণ পরই শুরু হয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিজয় শোভাযাত্রা।
মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ রোববার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে এক বিজয় শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শোভাযাত্রা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বিএনপির মহাসচিব ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জাতীয় স্মৃতিসৌধ থেকে না ফেরার কারণে সেটি দুপুর ১২টার দিকে শুরু হয়।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, আইনবিষয়ক সম্পাদক সানাউল্লাহ মিয়া, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না প্রমুখ বিজয় শোভাযাত্রায় উপস্থিত ছিলেন।
শোভাযাত্রা শুরুর আগে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা কথা বলেন। শুরুতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আজকের এই বিজয় দিবস হওয়া উচিত ছিল আনন্দের, উৎসবের। ৪৭তম এই বিজয় দিবসে আমাদের আনন্দিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আজকে অত্যন্ত ভারাক্রান্ত, আতঙ্কিত, উৎকণ্ঠিত—এই দেশে গণতন্ত্র টিকে থাকবে কি টিকে থাকবে না। নির্বাচন কমিশন যে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে, সেই নির্বাচন কমিশন নির্বাচন নিরপেক্ষভাবে পরিচালনা করতে ব্যর্থ হচ্ছে। নির্বাচনে সব রকমের পক্ষপাতিত্ব শুরু করেছে সরকার। আমরা কখনো এ ধরনের নির্বাচন দেখিনি। নজিরবিহীনভাবে সরকার বিরোধী দলের নেতা-কর্মী এমনকি প্রার্থীদেরও গ্রেপ্তার করছে, মিথ্যা মামলা দিচ্ছে এবং সবভাবে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, এই নির্বাচন দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচনে সিদ্ধান্ত হবে যে বাংলাদেশের মানুষ স্বৈরতন্ত্রে থাকবে, নাকি গণতন্ত্রে থাকবে। বাংলাদেশের মানুষ তাদের স্বাধীনতার ফল ভোগ করবে কি ভোগ করবে না। বাংলাদেশের মানুষ নির্যাতিত হয়ে একটি ‘স্বৈরতন্ত্রের’ মধ্যে, একটি ‘একদলীয়’ শাসনব্যবস্থার মধ্যে যাবে, নাকি বহুমাত্রিক গণতন্ত্রের দিকে যাবে; এই বিষয়গুলো আজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, এই নির্বাচনে সিদ্ধান্ত হবে, বিএনপির নেত্রী খালেদা জিয়াকে এই ‘অন্যায়’, ‘অত্যাচার’, ‘অবিচার’ থেকে তাঁকে মুক্ত করা সম্ভব হবে কি না।
হামলা-মামলার কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নজিরবিহীন পক্ষপাতিত্ব, নির্যাতন, হামলা, মামলা চলছে। গতকাল মির্জা আব্বাসের ওপর হামলা হয়েছে। কোনো প্রার্থীর ওপর এভাবে হামলা হয়? নির্বাচন কমিশন, সরকার তাকিয়ে থাকে, কিছুই করে না। মাহবুব উদ্দিন খোকনকে ‘গুলি’ করা হয়েছে, তিনি এখন চিকিৎসাধীন। সুব্রত চৌধুরীর ওপর গতকাল হামলা করা হয়েছে।
সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা সরকারকে হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি, গ্রেপ্তার বন্ধ করুন। না হলে এর দায়দায়িত্ব সবকিছু আপনাদের নিতে হবে। এই দেশে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার দায়িত্ব নিতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, আজ শোভাযাত্রা ছিল দুটি, সেটা পরিবর্তন করে তাঁরা সকাল ১০টার মধ্যে নিয়ে এসেছেন। শত বাধা-বিপত্তি, নির্যাতন উপেক্ষা করে শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়ার জন্য নেতা-কর্মীদের ধন্যবাদ দেন তিনি। পাশাপাশি সব ধরনের হামলা-মামলা, গ্রেপ্তার বন্ধ করার আহ্বান জানান তিনি।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক ও ঐক্যফ্রন্ট নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমরা একটি লড়াইয়ের মধ্যে আছি। এ লড়াই হলো ভোটের লড়াই। ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারি ভোটের নামে এই দেশে মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সেই থেকে এই দেশে যত নির্বাচন করা হয়েছে, সব নির্বাচন ছিনতাই করেছে। মানুষ কেউ ভোট দিতে যায়নি, প্রার্থীদের ওপর নির্যাতন করেছে, গ্রেপ্তার করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘নতুন নির্বাচনেও তারা (আওয়ামী লীগ) মনে করেছে আগের নির্বাচনের মতো ওয়াকওভার দেওয়া হবে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবার ওয়াকওভার দেব না। আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, প্রার্থী দিয়েছি—এটা দেখে সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। মির্জা ফখরুলের গাড়িবহরে হামলা করা হয়েছে, সারা দেশে নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করা হয়েছে।’
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের বক্তব্যের পর বিজয় শোভাযাত্রা শুরু হয়। বিজয় শোভাযাত্রায় ঢাকা মহানগর বিএনপির বিভিন্ন ইউনিট, মহিলা দল, ছাত্রদল, যুবদল, শ্রমিক দলের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে শোভাযাত্রাটি নাইটিঙ্গেল মোড়, কাকরাইল মোড় হয়ে শান্তিনগর মোড় ঘুরে আবার নয়াপল্টনে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় শোভাযাত্রার সামনে-পেছনে বিপুলসংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। শোভাযাত্রায় কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি এবং কোনো ধরনের আটক বা গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া যায়নি।