সামনে জাতীয় নির্বাচন। এই সময়ে নানা গোষ্ঠীর অপতৎপরতা বেড়ে যায়। সেই রকম এক অপতৎপরতা দেখা গেলে নড়াইলে। নড়াইলে কম্পিউটার, অন্যান্য যন্ত্রাংশ ও ৫২ হাজার জাল টাকাসহ ২ জনকে আটক করেছে ডিবি পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নের জুড়ুলিয়া গ্রাম থেকে আব্দুল আলিম ওরফে রনি (৫৫) ও সাজ্জাদ হোসেনকে (২০) আটক করা হয়। আব্দুল আলিম নিজেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী (বাতিল কৃত) দাবি করছেন এবং নির্বাচনী কাজে এ টাকা ব্যয় করবেন বলেও জানান। এ সময় তাদের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে জাল টাকা, কম্পিউটার, সিল এবং অন্যান্য যন্ত্রাংশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় সদর থানায় মামলা করা হয়েছে। এ ধরনের আটকের ঘটনা স্বস্তিদায়ক। বিশেষ করে সামনে জাতীয় নির্বাচন। এইসময় সেব ধরনের অপতৎপরতা বন্ধে কঠোর নজরদারি চালাতে হবে।
জাল টাকা দেশের অর্থনীতির জন্য বিরাট হুমকি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশে এই জালিয়াত চক্র বর্তমানে ব্যাপকহারে তাদের জাল বিস্তার করেছে। অত্যন্ত নিপুণতার সঙ্গে তারা টাকা জাল করে বাজারে ছাড়ছে। দেখতে হুবহু আসলের মতো। কিন্তু পুরোটাই নকল। সারাদেশে অনেক জাল টাকা তৈরির কারখানার খবরও ইতিমধ্যে গণমাধ্যমে এসেছে। জানা যায় টাকা জাল করার প্রতিটি কারখানায় ঘণ্টায় প্রায় দু`লাখ টাকার জাল নোট তৈরি হয়। ব্যাপক হারে এসব নোট বাজারে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।
‘জাল টাকা তৈরি ও বিপণন ফৌজদারি অপরাধ। এতে জড়িতদের সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন শাস্তির বিধান রয়েছে। কিন্তু আইনের ফাঁক গলে অপরাধী চক্র ঠিকই অপরাধ করে যাচ্ছে। এসব অপরাধীর সঙ্গে আন্তর্জাতিক চক্রের যোগাযোগ থাকার তথ্যও রয়েছে। জানা যায়, কিছু জঙ্গী সংগঠনের ব্যয় নির্বাহ হয় এই জাল টাকা দিয়ে। জাল টাকার বিস্তার রোধ করতে না পারলে বিপর্যস্ত হবে সাধারণ মানুষের জীবন।’
এসব অপরাধীদের অনেককে পাকড়াও করা হলেও তারা আবার জামিনে বেরিয়ে এসে একই অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। আইনের ফাঁক থাকায় এই ঘৃণ্য অপরাধীরা সহজেই পার পেয়ে যায়। এদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও সাক্ষীর অভাবে তা অনেক ক্ষেত্রে প্রমাণ করা দুরূহ হয়ে পড়ে। আর এভাবেই জালিয়াত চক্র সহজেই বড় ধরনের অপরাধ করেও পার পেয়ে যায়। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের ভাবতে হবে কিভাবে জালিয়াত চক্রের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করা যায় যাতে কেউ আর এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত হওয়ার সাহস না পায়।
জাল নোটের অবারিত বিস্তারে আসল টাকার মূল্য কমে যায়। মূল্যস্ফীতি সৃষ্টি হয় এবং মুদ্রার ওপর আস্থা নষ্ট হয়। ফলে অর্থনীতিতে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ পরিস্থিতিতে দেশের কাগুজে মুদ্রার নিরাপত্তা নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আরও ভাবতে হবে। জাল টাকা তৈরি ও বিপণন ফৌজদারি অপরাধ। এতে জড়িতদের সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন শাস্তির বিধান রয়েছে। কিন্তু আইনের ফাঁক গলে অপরাধী চক্র ঠিকই অপরাধ করে যাচ্ছে। এসব অপরাধীর সঙ্গে আন্তর্জাতিক চক্রের যোগাযোগ থাকার তথ্যও রয়েছে। জানা যায়, কিছু জঙ্গী সংগঠনের ব্যয় নির্বাহ হয় এই জাল টাকা দিয়ে। জাল টাকার বিস্তার রোধ করতে না পারলে বিপর্যস্ত হবে সাধারণ মানুষের জীবন।
এ পরিস্থিতিতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ব্যাংকিং-এর যাবতীয় কর্মকাণ্ড ডিজিটালাইজড করা প্রয়োজন। ব্যাংক ব্যবস্থায় জাল নোট শনাক্তকারী মেশিনের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে। এসব উদ্যোগের পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। সাধারণ মানুষের পক্ষে মেশিনে আসল নকল বোঝার সুযোগ নেই। এই মেশিন ছাড়াও কি দেখে নকল টাকা চেনা যাবে সে বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে গণমাধ্যমে।