২১শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৩:০৫

কাঙালিনী সুফিয়ার অবস্থার কিছুটা উন্নতি

বাংলা লোকগানের জনপ্রিয় শিল্পী কাঙালিনী সুফিয়া। হৃদরোগ ও উচ্চরক্তচাপ জনিত কারণে তাকে ঢাকার সাভারে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে ( সিসিইউ) রাখা হয়েছে।

গত মঙ্গলবার রাতে হাসপাতালে ভর্তি করা এই শিল্পীর অবস্থা আগের চেয়ে কিছুটা উন্নতি হয়েছে বলে চিকিৎসকের জানিয়েছেন। তবে অর্থকষ্টে থাকার কথা জানিয়েছে তার পরিবার।

শনিবার দুপুরে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও এনাম মেডিকেল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ডা: এনামুর রহমান এনাম হাসপাতালে যান এবং কাঙালিনী সুফিয়াকে দেখে তার শারীরিক অবস্থার খোঁজ খবর নেন।

কাঙ্গালিনি সুফিয়ার মেয়ে পুষ্প আক্তার বলেন, মা নানা জটিল রোগে দীর্ঘদিন ধরেই ভুগছিলেন। মঙ্গলবার রাতে হঠাৎ করেই বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। স্মৃতিশক্তিও লোপ পাওয়ায় তিনি কাউকে চিনতে পারছিলেন না। প্রেশার বেশি থাকার কারণে বেশ খানিকবার বমি করেন। প্রচণ্ড মাথা ও গলা ব্যথা ছিলো। এরপর দ্রুত তাকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করি।

তিনি জানান, প্রথমে কেবিনে দিলেও মায়ের অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাকে সিসিইউ নেয়া হয়েছে। চিকিৎসকরা বলেছেন- তিনি এখন অনেকটাই শংকামুক্ত।

পুষ্প কান্না জড়িত কণ্ঠে জানান বলেন, মায়ের চিকিৎসার জন্য এত টাকা কোথায় পাব। সরকার ও বিভিন্ন ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া অনুদানের টাকাসহ ধারদেনা করে অনেক টাকা ইতিমধ্যেই বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং ঔষধের পিছনে খরচ হয়ে গেছে। মায়ের অসুস্থতার খবর শুনে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে তার ভক্তবৃন্দরা হাসপাতালে ছুটে অনুদান দিলেও তার পরিমান খুবই সামান্য। তিনি তার মায়ের চিকিৎসার জন্য সকলের কাছে সহযোগিতা ও দোয়া চান।

রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী এ্যাপোলো জামালি কাঙালিনী সুফিয়া দেখতে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে ছুটে আসেন। তিনি বলেন, এ বাউল শিল্পীর অসুস্থতার খবর শুনে আমরা দ্রুত হাসপাতালে ছুটে আসি। গত দুই দিন ধরে তার পাশে থেকে পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি আমরাও তাকে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা এবং মানসিকভাবেও সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করছি।

কাঙালিনী সুফিয়ার চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক এনাম মেডিকেল কলেজের হৃদরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সোলায়মান হোসেন জানান, হৃদরোগ ও উচ্চরক্তচাপ জনিত কারণে প্রথমে থাকে এখানে ভর্তি করা হয়। এরপর নানান পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা যায় তার শরীরে রক্তের পরিমাণ অনেকটাই কম। এছাড়াও কিডনি জনিত নানান জটিল রোগ তাকে আঁকড়ে ধরছে। তবে বর্তমানে আগের চেয়ে তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে।

তিনি বলেন, এনাম মেডিকেল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ডা: এনামুর রহমানের নির্দেশে তার সকল প্রকার চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত এর জন্য হাসপাতালের কার্ডিওলোজী, নিউরোলোজীসহ প্রতিটি ইউনিটের চিকিৎসকরা চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। কাঙালিনী সুফিয়া আমাদের দেশের একজন বরেণ্য সঙ্গীত শিল্পী। তার চিকিৎসার যেন কোন ত্রুটি না হয় সে নির্দেশও আমাদের রয়েছে।

কাঙালিনি সুফিয়ার সাথে গান করা নাতি গিটার বাদক সোহান যাযাবর বলেন, আমরা চাই সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের সহায়তায় তিনি উপযুক্ত চিকিৎসা পেয়ে দ্রুত সুস্থ হয়ে আবারও আমাদের মাঝে ফিরে আসুন।

এব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা: এনামুর রহমান বলেন, কাঙালিনি সুফিয়া আমাদের দেশের একজন বরেণ্য সঙ্গীত শিল্পী; সাভারের গর্ব। আমি প্রতিদিন তার চিকিৎসার খোঁজ খবর নিচ্ছি। তার শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে অনেক ভালো।

উল্লেখ্য, বাউল গানের শিল্পী কাঙালিনী সুফিয়া মাত্র ১৪ বছর বয়সে গ্রাম্য একটি অনুষ্ঠানে গান গেয়ে শিল্পী হিসেবে পরিচিতি পান। এরপর বাংলাদেশ টেলিভিশনের নিয়মিত শিল্পী হিসেবে তার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়।

ওই সময়ই বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর ডি.জি. মুস্তফা মনোয়ার তার উপাধি দেন ‘কাঙালিনী’। সেই থেকে তিনি এই নামে পরিচিতি পান।

সঙ্গীতে এযাবৎ তিনি প্রায় ৩০টি জাতীয় ও ১০টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেছেন। গান রচনা করেছেন প্রায় ৫০০টি। তার জনপ্রিয় গানের তালিকায় আছে- ‘পরাণের বান্ধব রে, বুড়ি হইলাম তোর কারণে’, ‘কোন বা পথে নিতাই গঞ্জে যাই’, ‘নারীর কাছে কেউ যায় না’ প্রভৃতি।

প্রকাশ :ডিসেম্বর ৮, ২০১৮ ৭:৪০ অপরাহ্ণ