দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থায় নানা পরিবর্তন এসেছে। এরফলে চিকিৎসাসেবা অনেকটা সহজলভ্য হচ্ছে। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে চিকিৎসা ব্যয় বেড়েই চলেছে। আর এ ব্যয় মেটাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে লোকজনকে। অথচ চিকিৎসা মানুষের মৌলিক অধিকার। কাজেই এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া অত্যন্ত জরুরি।
‘চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে দেশে প্রতি বছর শতকরা ৫ ভাগেরও বেশি মানুষ সহায়-সম্বলহীন হয়ে পড়ছেন। দেশের বিদ্যমান চিকিৎসা ব্যবস্থায় এখন চিকিৎসা ব্যয়ে ৬৭ শতাংশ খরচ মানুষকে নিজের পকেট থেকে করতে হয়। শতকরা ৫৫ ভাগ মানুষ এখনও মানসম্মত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত। শুধু বাংলাদেশেই নয়, পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি মানুষের অতিপ্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সুবিধা গ্রহণের সুযোগ নেই।’
এ সংক্রান্ত রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে দেশে প্রতি বছর শতকরা ৫ ভাগেরও বেশি মানুষ সহায়-সম্বলহীন হয়ে পড়ছেন। দেশের বিদ্যমান চিকিৎসা ব্যবস্থায় এখন চিকিৎসা ব্যয়ে ৬৭ শতাংশ খরচ মানুষকে নিজের পকেট থেকে করতে হয়। শতকরা ৫৫ ভাগ মানুষ এখনও মানসম্মত চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত। শুধু বাংলাদেশেই নয়, পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি মানুষের অতিপ্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সুবিধা গ্রহণের সুযোগ নেই। পৃথিবীর ৮০ কোটি মানুষ তাদের পরিবারের মোট ব্যয়ের অন্তত ১০ শতাংশ চিকিৎসা সেবা গ্রহণের খরচ নিজেদের পকেট থেকে বহন করে এবং বছরে প্রায় ১০ কোটি মানুষ চিকিৎসা সেবার ব্যয় বহন করতে গিয়ে অতিদরিদ্র হয়ে পড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জনের সফলতা আশাব্যঞ্জক। সরকার বর্তমানে জিডিপির ২.৮ শতাংশ স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু এখন ৭১ দশমিক ৮ যা ২০০০ সালে ছিল ৬৫ দশমিক ৫। শিশুদের টিকাদানের অর্জন ৯৪ শতাংশ। অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ সুবিধার আওতায় আনা হয়েছে ৬৫ শতাংশ মানুষকে। মাতৃমৃত্যুর হার এখন প্রতি এক লাখে ১৭৬ জন যা ২০০০ সালে ছিল ৩৯৯ জন। প্রতি এক হাজার জনে নবজাতকের মৃত্যুর হার ২০০০ সালে ছিলে ৪২.৬; যা ২০১৫ সালে কমে হয় ২৩.৩ এবং পাঁচ বছরের নিচে শিশুমৃত্যুর হার প্রতি এক হাজার জন ২০০০ সালে ছিলে ৮৮ জন; যা ২০১৫ সালে ৩৭.৬-এ নেমে আসে।
এই পরিসংখ্যান আমাদের আশাবাদী করে। কিন্তু চিকিৎসা ব্যয় কমানোটা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। এমনিতেই দিন দিন চিকিৎসা ব্যয় বাড়ছে। মুনাফালোভী এক শ্রেণির হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার আর কিছু অনৈতিক মানসিকতার চিকিৎসক ও ওষুধ কোম্পানির কারণে চিকিৎসা ব্যয় বাড়ছে। স্বাস্থ্য খাতে মানুষ প্রায় ৭০ শতাংশ বেশি খরচ করে ওষুধের পেছনে। এ কারণে ওষুধের দামের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি করতে হবে।
এছাড়া বেসরকারি খাতে যন্ত্রপাতি, পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও বেসরকারি বিশেষায়িত সেবার ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থার উন্নয়নও জরুরি। জনসাধারণের মৌলিক চাহিদা পূরণে সরকার এগিয়ে আসবে বলে প্রত্যাশা করি।