নিজস্ব প্রতিবেদক:
সড়কে যানজটের কারণে সাইড দিতে দেরি হওয়ায় গাড়ি থেকে নেমে মোটরসাইকেল আরোহী এক কলেজ শিক্ষককে পিটিয়েছেন রাজশাহী মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (পশ্চিম) একেএম নাহিদুল ইসলাম। এতেও তিনি ক্ষান্ত হননি। কলেজ শিক্ষকের সঙ্গে থাকা সিটি কর্পোরেশনের এক কর্মকর্তাকেও পেটান। এখানেই শেষ নয়, তাদের দুইজনকে রক্ষা করতে গিয়ে আরও কয়েকজন ওই পুলিশ কর্মকর্তার পিটুনির শিকার হন।
ডিসি নাহিদের হামলায় আহতরা হলেন, নগরীর বঙ্গবন্ধু কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক সাদিকুল ইসলাম, সিটি কর্পোরেশনের ২নং ওয়ার্ডের সচিব ফখরুদ্দিন আলী আহমেদ ও ছাত্রলীগ নেতা সাব্বির আহমেদ। একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তার এই ঘটনা মঙ্গলবার ‘টক অব দ্য সিটি’তে পরিণত হয়। তার এই আচরণে হতবাক সবাই। বঙ্গবন্ধু কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক সাদিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, মঙ্গলবার বেলা সোয়া ১১টার হড়গ্রাম নতুনপাড়া থেকে সিটি কর্পোরেশনের ২নং ওয়ার্ডের সচিব ফখরুদ্দিন আলী আহমেদের মোটরসাইকেলে চড়ে কলেজের উদ্দেশে রওয়ানা দেন তিনি।
মোটরসাইকেলটি নগরীর বন্ধগেট-বর্ণালী মোড়ের মাঝামাঝি পৌঁছলে পেছন থেকে একটি গাড়ি তাদের লক্ষ্য করে হর্ন বাজানো শুরু করে। কিন্তু সামনে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা থাকায় সাইড দিতে ২-৩ মিনিট দেরি হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে গাড়ি থেকে নেমেই মোটরসাইকেলের চালক ফখরুদ্দিনকে চড়-থাপ্পড় মারা শুরু করেন উপ-পুলিশ কমিশনার নাহিদ। এরপর পরই তাকেও (কলেজ শিক্ষক) এলোপাথাড়ি পেটান তিনি। দুইজনই নিজেদের পরিচয় দিলে নাহিদ আরও ক্ষিপ্ত হয়ে গালিগালাজ করেন ও পেটাতে থাকেন। এসময় সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা মৃদুল এগিয়ে এসে ঘটনা জানার চেষ্টা করলে তাকে পেটান নাহিদ। এরপর ছাত্রলীগ নেতা সাব্বির তাদের রক্ষায় এগিয়ে আসার চেষ্টা করলে নাহিদ তাকেও এলোপাথাড়ি চড়-থাপ্পড় মারেন। পরে ঘটনাস্থল থেকে মৃদুলকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
এদিকে পিটুনির বিষয়টি অস্বীকার করে মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (পশ্চিম) একেএম নাহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ট্রাফিক আইন অমান্য করায় মোটরসাইকেল আরোহী ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। কিন্তু ছাত্রলীগ করায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া যাবে না বলে প্রতিবাদ করে। এ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। এ ঘটনার পর কলেজ শিক্ষকদের মাঝে চরম ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। তাৎক্ষণিকভাবে এ ঘটনার বিচার ও ডিসি নাহিদের অপসারণ দাবি করে মহানগর পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলামের সঙ্গে দেখা করেন, বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি ও জাতীয় শিক্ষক-কর্মচারী ফ্রন্টের নেতারা।জাতীয় শিক্ষক-কর্মচারী ফ্রন্টের রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা বলেন, ট্রাফিক জ্যামের কারণে একজন পুলিশ কর্মকর্তাকে সাইড দিতে দেরি হওয়ায় কলেজ শিক্ষককে রাস্তায় ধরে পেটাবেন তা মেনে নেয়া হবে না। ডিসি নাহিদের এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ কাজের বিচার করতে হবে। তাকে অপসারণ করতে হবে। তা না হলে কঠোর আন্দোলন ঘোষণা করা হবে।রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম জানান, শিক্ষক নেতারা এসে মৌখিক অভিযোগ করে গেছেন। তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দৈনিক দেশজনতা/এন এইচ