দরজায় কড়া নাড়ছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সারাদেশ এখন নির্বাচনী জ্বরে আক্রান্ত। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার এবং উন্নয়নের নতুন ধারার লক্ষ্য নিয়ে ভোটের মাঠে নেমেছে দেশের বৃহৎ দুই জোট। কার্যত এই দুই জোটের মধ্যেই নির্বাচনের প্রতিযোগিতা হবে বলে সবার ধারণা। ইশতেহার প্রস্তুতির কাজ চলছে দুই জোটেই। উন্নয়নের কথাই দুই জোটের ইশতেহারে প্রাধান্য পাচ্ছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
সংসদ নির্বাচন আসলে সাধারণ জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলো উন্নয়নকেই প্রাধান্য দেয়। জনগণও যারা উন্নয়ন করতে পারবে তাদের নির্বাচিত করতে চায়। কিন্তু একজন সংসদ সদস্য কিংবা জাতীয় সংসদের মূলকাজ উন্নয়ন নয়। তাদের মূলকাজ আইন প্রণয়ন করা। তারা সে রকম আইন প্রণয়ন করবে যা দেশের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে। প্রধান দুই জোটের ইশতেহার এখনো প্রকাশিত হয়নি, প্রস্তুতি চলছে। দলগুলোর ইশতেহারে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে কিছু বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা থাকা প্রয়োজন।
সরকারি- বেসরকারি যে কোন চাকরিতে প্রবেশের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করা আছে। কিন্তু যে কোন শিক্ষাগত যোগ্যতার ব্যক্তিই সংসদ সদস্য হতে পারে। যার ফলশ্রুতিতে এ রকম অনেকেই সংসদে গিয়েছেন বা যাওয়ার জন্য প্রার্থী হয়েছেন যাদের আইন প্রণয়নের বিষয়ে ন্যূনতম ধারণাও নেই। শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষিত আইন প্রণেতা ছাড়া ভালো আইন পাওয়া যাবে না। তাই, সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণের বিষয়টি ইশতেহারে থাকা দরকার।
নির্বাচনী ব্যবস্থাঃ
দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে জটিলতা দৃশ্যমান। এই জটিলতা নিরসন ও নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থার একটি স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনকালীন স্থায়ী সরকার ব্যবস্থার সমাধান হিসেবে কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে তা রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে থাকা প্রয়োজন।
সংসদ সদস্য হওয়ার বয়সসীমাঃ
সরকারি চাকরিতে প্রবেশের এবং অবসরের বয়স নির্ধারিত রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, বিচারপতিদেরও অবসরের বয়সসীমা রয়েছে। কিন্তু সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য বয়সের শুরু থাকলেও শেষ নেই। সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য বয়সসীমা নির্ধারণ প্রয়োজন।
সংসদ সদস্য হওয়ার শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ
সরকারি- বেসরকারি যে কোন চাকরিতে প্রবেশের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করা আছে। কিন্তু যে কোন শিক্ষাগত যোগ্যতার ব্যক্তিই সংসদ সদস্য হতে পারে। যার ফলশ্রুতিতে এ রকম অনেকেই সংসদে গিয়েছেন বা যাওয়ার জন্য প্রার্থী হয়েছেন যাদের আইন প্রণয়নের বিষয়ে ন্যূনতম ধারণাও নেই। শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষিত আইন প্রণেতা ছাড়া ভালো আইন পাওয়া যাবে না। তাই, সংসদ সদস্য হওয়ার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণের বিষয়টি ইশতেহারে থাকা দরকার।
রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্যঃ
দেশের গণতান্ত্রিক উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্রপতি- প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য প্রয়োজন। এ ব্যাপারে সরকার গঠন করলে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন তা রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে উল্লেখ করতে হবে। উন্নত গণতান্ত্রিক দেশগুলোর মতো টানা কতবার রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন সে ব্যাপারে আইন করা যেতে পারে।
প্রশাসনের বিকেন্দ্রীকরণ:
বাংলাদেশের প্রশাসনে বিকেন্দ্রীকরণ অত্যাবশ্যকীয়। বহুদিন ধরেই প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের জন্য প্রদেশ গঠন করে প্রাদেশিক সরকার ও মেট্রোপলিটন সরকার গঠনের দাবি আছে বিভিন্ন মহল থেকে। এই ব্যাপারে ইশতেহারে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা থাকা প্রয়োজন।
নির্দলীয় পেশাজীবী রাজনীতিঃ
বাংলাদেশে বিভিন্ন পেশাজীবীদের সংগঠন রয়েছে, যেমনঃ চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষক, সাংবাদিকদের সংগঠন। বর্তমানে এই সকল সংগঠন দলীয় লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতিতে জড়িত। যা এই সকল সংগঠনের নিজস্বতাকে বিনষ্ট করেছে এবং পেশাজীবীদের স্বার্থ ভূলুণ্ঠিত করছে। পেশাজীবীদের অধিকার রক্ষার স্বার্থে এবং পেশাগত উন্নয়নের লক্ষ্যে তাদেরকে দলীয় রাজনীতি থেকে মুক্ত করা প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। তাই, পেশাজীবী সংগঠনকে দলীয় প্রভাব মুক্ত করে দেশের উন্নয়নে পেশাগত মেধা ও দক্ষতাকে কীভাবে কাজে লাগনো যায় সে বিষয়ে নতুন করে চিন্তা করা প্রয়োজন। পেশাজীবীদের নির্দলীয় রাজনীতি নিশ্চিত করার জন্য কি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে তা ইশতেহারে উল্লেখ করা উচিত।
দ্বি- কক্ষ বিশিষ্ট সংসদঃ
উন্নত ও আধূনিক গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে দুই কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ রয়েছে। দুই কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ প্রণয়ন করা হলে দেশের গণতন্ত্র এগিয়ে যাবে। এই ব্যবস্থার ফলে বাংলাদেশের গণতন্ত্র উন্নত ও আধুনিক দেশের মতো হবে। তাই, বাংলাদেশে দুই কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা প্রয়োজন।