দিনের শুরুতে প্রয়োজন ছিলো প্রতিপক্ষ বোলারদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করে ব্যাটিং। প্রথম ওভার থেকেই সেটি করেছেন সাকিব আল হাসান। দলের সংগ্রহ তিনশ পেরুনোর পরে সাকিব যখন ফিরে গেলেন, তখন দলের চাহিদা ছিলো দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে দলীয় সংগ্রহটাকে বড় করা। সেটিই করে দেখাচ্ছেন দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও লিটন দাস।
অভিষিক্ত সাদমান ইসলাম, অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের পর ইনিংসের চতুর্থ ফিফটি তুলে নিয়েছেন লিটন দাস। সেঞ্চুরির কাছাকাছিতে অপরাজিত রয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। সপ্তম উইকেট জুটিতে দুজন মিলে মাত্র ১০৯ বলে যোগ করে ফেলেছেন ৮৬ রান।
দ্বিতীয় দিনের লাঞ্চ ব্রেক পর্যন্ত বাংলাদেশ দলের সংগ্রহ ৬ উইকেটে ৩৮৭ রান। মাহমুদউল্লাহ খেলছেন ৭৫ রান নিয়ে, লিটন অপরাজিত ৫৩ রানে। এর আগে দিনের সপ্তম ওভারে সাকিব সাজঘরে ফিরেছেন ৮০ রান করে।
প্রথম দিন ১১৩ বল খেলে ৫৫ রান করার পথে মাত্র একটি চার মেরেছিলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তার দলও পুরো দিনের ৯০ ওভারে সীমানা ছাড়া করেছিল মাত্র ১০টি বল। কিন্তু দ্বিতীয় দিন সকালেই বদলে গেল দৃশ্যপট। সাকিব তার নিজের ও দলের আগের দিনের বাউন্ডারি খরা কাটিয়ে দেন দ্বিতীয় দিনের প্রথম ওভার থেকেই।
দিনের প্রথম ওভারে কেমার রোচকে একটি, পরের ওভারে রস্টোন চেজকে একটি, দিনের চতুর্থ ওভারে পরপর তিন বলে তিনটি চার মারেন সাকিব। দিনের শুরুর ৪ ওভারেই ২৭ রান পেয়ে যায় বাংলাদেশ। যার মধ্যে ২৩ রানই করেন সাকিব। চার ওভারের মধ্যেই পৌঁছে যান ৭৮ রানে।
সে তুলনায় দিনের শুরুতে বেশ নড়বড়ে ছিলেন অপর অপরাজিত ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কয়েকবার লেগ বিফোরের জোরালো আবেদন ও একবার স্লিপে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান তিনি। অবশেষে দিনের পঞ্চম ওভারে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে নিজের উপস্থিতি জানান দেন মাহমুদউল্লাহ।
তার এই বাউন্ডারিতেই পূরণ হয় দুজনের শতরানের জুটি। ৬৮তম ওভারে দলীয় ১৯০ রানের মাথায় মুশফিকুর রহিমের বিদায়ের পর দুজন মিলে জুটি বাঁধেন। ১৬৬ বল খেলেই নিজেদের জুটিতে শতরান করে ফেলেন সাকিব ও রিয়াদ।
প্রথম দিনে বাংলাদেশ দলের সংগ্রহ মোটামুটি ভালো অবস্থানে থাকলেও জুটি গড়ে ভালো খেলা হচ্ছিলো না ব্যাটসম্যানদের। দিন শেষে সাদমান ইসলামও জানিয়েছিলেন বড় জুটির অভাবের কথা। দ্বিতীয় দিন সকালে সে কথাই যেন রাখলেন দলের দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং সাকিব আল হাসান।
দিনের শুরুতেই সাকিব ও রিয়াদের ইতিবাচক ব্যাটিংয়ে শুরু থেকেই রানের চাকা সচল রেখে খেলতে পেরেছে বাংলাদেশ। দিনের প্রথম ছয় ওভারেই ৩৬ বলে ৩৬ রান করে ফেলে স্বাগতিকরা। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে শতরান করেন সাকিব ও রিয়াদ। কিন্তু এর পর আর বেশিক্ষণ থাকা হয়নি টাইগার অধিনায়কের।
দিনের ৭ম এবং ইনিংসের ৯৭তম ওভারে ক্যারিবীয় পেসার কেমার রোচের অফস্টাম্পের বাইরের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে গালিতে ধরা পড়ে যান সাকিব। দলীয় ৩০১ রানের মাথায় আউট হওয়ার আগে ৬ চারের মারে ১৩৯ বলে ৮০ রান করেন তিনি।
দিনের শুরুতে যতোটা ইতিবাচক ছিলেন সাকিব আল হাসান, ঠিক ততটা ছন্দে ছিলেন না মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তবে খেলেছেন নিজের উইকেট বাঁচিয়ে, রানের চাকা সচল রেখেই। সাবধানী ব্যাটিংয়ে তুলে নিয়েছেন নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৬তম অর্ধশত।
দিনের সপ্তম ওভারে সাকিব ফিরে গেলেও এক প্রান্ত ধরে খেলছেন রিয়াদ। সাকিবের চেয়ে তুলনামূলক ধীর খেললেও ৮৮ বলে ৪ চারের মারে দিনের এগারতম ওভারে নিজের ফিফটি তুলে নিয়েছেন তিনি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে তিনি খেলেছিলেন ১০১ রানের অপরাজিত ইনিংস।
সে ফর্ম বজায় রাখলেন চলতি টেস্টেও। মাহমুদউল্লাহর ব্যাটের নির্ভরতা ও লিটনের স্বচ্ছন্দ ব্যাটিংয়েই মূলত বড় সংগ্রহের আশা বাঁচিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ। দিনের অষ্টম ওভারে উইকেটে এসে শুরু থেকেই নিজের মনমতো ব্যাটিং করতে থাকেন লিটন।
তার ব্যাট থেকেই ইনিংসের প্রথম ছক্কা পায় বাংলাদেশ। মাত্র ৫০ বলে ৮ চার ও ১ ছক্কার মারে নিজের ক্যারিয়ারের চতুর্থ ফিফটি পূরণ করেন তিনি। মাহমুদউল্লাহর সাথে জুটি গড়ে অপরাজিত থেকেই প্রথম সেশন পার করেছেন লিটন।