জামায়াতে ইসলামী ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের সিদ্ধান্তকে বিএনপি ইতিবাচক মনে করলেও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের কেউ কেউ সেভাবে দেখছেন না।
জামায়াতে ইসলামী এর আগে স্বতন্ত্র প্রতীক নিয়ে নির্বাচনের কথা বললেও বুধবার মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার কথা জানায়।
বিএনপির দলীয় প্রতীক ধানের শীষের প্রত্যয়নপত্র নিয়ে ২৫টি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জামায়াত নেতারা। দলটির আরও ডজনখানেক প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জামায়াতের ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনের সিদ্ধান্তকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কয়েকজন নেতা অনানুষ্ঠানিকভাবে তাদের অস্বস্তির কথা জানালেও তারা এ নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না। তবে বিএনপি বলছে-চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ছাড়া জামায়াতের অন্য নেতাদের ধানের শীষ প্রতীক দেয়ায় তারা কোনো সমস্যা দেখছেন না।
কয়েক বছর আগে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হওয়ার পর তারা তাদের দলীয় প্রতীকও হারিয়েছে। তাদের দলীয়ভাবে নির্বাচন করারও কোনো সুযোগ নেই।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুর রহমান বলেছেন, ধানের শীষ প্রতীকে তাদের নির্বাচন করার বিষয়ে তারা বাস্তবতাকে বিবেচনায় নিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু আপাতত যে কোনোভাবেই হোক, আমাদের নিবন্ধন বাতিল করে রাখা হয়েছে; সে কারণে আমরা দলের নামে এবং নির্দিষ্ট প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে পারছি না।
শফিকুর রহমান বলেন, জোটের সব দলই ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছে। প্রতীক বড় নয়, বরং আমাদের ঐক্যটা বড়। এটিকে সম্মান করেই আমরা ধানের শীষ প্রতীক নিয়েছি।
তবে এবার নির্বাচনে ধানের শীষের ওপর ভর করা ছাড়া জামায়াতে ইসলামীর কোনো উপায় নেই বলে বিশ্লেষকদেরও অনেকে মনে করছেন।
তারা বলছেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের বিচার এবং ফাঁসি কার্যকর হওয়া ও আওয়ামী লীগ সরকারের চাপ-এসবের প্রেক্ষাপটে দলটি একটি প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
ফলে জামায়াতে ইসলামী তাদের অস্তিত্বের স্বার্থে পদক্ষেপ নিয়েছে বলেই বিশ্লেষকরা উল্লেখ করছেন।
যদিও ইতিমধ্যে বিএনপি ব্যাখ্যা দিয়েছে যে, তারা কোনো চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীকে ধানের শীষে মনোনয়ন দেয়নি।
এ ছাড়া নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় জামায়াতে ইসলামী নামের কোনো দল এখন নেই, এমন যুক্তিও দিয়েছেন বিএনপি নেতারা।
দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জামায়াত নেতাদের ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করার বিষয়কে তারা ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন।
তিনি বলেন, তাদের দলীয় প্রতীক নেই বা সেটিকে স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছে না, সেখানে ধানের শীষের প্রতীক তারা মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে। সেদিক থেকে অবশ্যই নেগেটিভ কিছু দেখছি না আমি।
ফখরুল আরও বলেন, ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের সঙ্গে প্রাথমিকভাবে কথাও বলেছি-যতক্ষণ পর্যন্ত জামায়াত নাম না থাকবে কিংবা তাদের মার্কা না থাকবে, তাতে তারা খুব একটা আপত্তি করেনি।
তিনি আরও বলেন, যে যুক্তিতে আমরা ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছি, সেই যুক্তিতেই বলছি-জামায়াতে ইসলামী যেহেতু নিবন্ধিত দল নয়, সুতরাং এ বিষয় নিয়ে খুব বেশি কথা বলার অবকাশ নেই।
ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, বিষয়টি তার জন্য অস্বস্তিকর হয়েছে। তিনি অবশ্য নির্বাচন করছেন না।
তবে ঐক্যফ্রন্টের যেসব নেতা নির্বাচন করছেন, তারা বেশ সতর্ক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
গণফোরামেরই কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী ঢাকার একটি আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, জামায়াতের ধানের শীষ ব্যবহারের বিষয়টি বিএনপির ইস্যু বলে তারা মনে করেন।
‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে অন্যতম শরিক হচ্ছে বিএনপি; ঐক্যফ্রন্টে জামায়াত নেই। এখন বিএনপির প্রতীক অন্য কারা ব্যবহার করবে, আমরা তো সেই সিদ্ধান্ত দিতে পারি না।’
তবে ঐক্যফ্রন্টের শরিক অন্য দলগুলোর নেতাদের অনেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে পরিস্থিতিটাকে বিব্রতকর বলে মনে করছেন।
এই জোটের শরিক নাগরিক ঐক্যের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
তবে নিবন্ধন না থাকায় জামায়াতে ইসলামী নামে কোনো দল এখন নেই বলে বিএনপি নেতারা যে যুক্তি দিচ্ছেন, ঐক্যফ্রন্টের অনেক নেতার যুক্তিও একই রকম।
ঐক্যফ্রন্টের আরেক শরিক কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের নেতা আবদুল কাদের সিদ্দিকী বলছিলেন, ‘আসলে আমি জানি না, আপনি কোথা থেকে পেলেন জামায়াতকে। এখন দেশে কোনো জামায়াত নেই। দেশের মানুষ যারা আছে, এ দেশের নাগরিক, বয়স হলে তাদের যে কেউ নির্বাচন করতে পারে।
‘তার পরও যদি বলেন, আমি আপনার সঙ্গে একমত হব যে, জামায়াত না থাকলেও জামাতিরা আছে। আমি যখন একটা ট্রেনে উঠব, তখন সে ট্রেনে টিকিট করে যে কেউ উঠতে পারে। আমার কোনো অধিকার নেই যে আমি সেই ট্রেনে তাকে নেব কি নেব না। রিজার্ভ ট্রেন হলে কিছুটা চেষ্টা করা যায়। কিন্তু যাত্রীবাহী ট্রেনে সেই চেষ্টা করার কোনো সুযোগ নেই।’
যদিও ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের সময় বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক এবং ২০-দলীয় জোট নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল, কিন্তু এখন জামায়াতসহ দুই জোটের সব দল ধানের শীষ প্রতীক নিলেও ভোটের হিসাব-নিকাশ থেকে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা তাদের অস্বস্তি চেপে যাবেন বলেই বিশ্লেষকরা মনে করেন।