মহাজোট থেকে জাতীয় পার্টি (জাপা) কত আসন পাচ্ছে, তা এখনো নিশ্চিত হয়নি। এ বিষয়ে দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা নিশ্চুপ। আবার দলীয় প্রধান এইচ এম এরশাদ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে অনেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে মনোনয়ন নিয়ে বাণিজ্যের অভিযোগ করছেন। সব মিলিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার পাশাপাশি উত্তেজনা বিরাজ করছে জাপায়।
দলীয় সূত্র জানায়, দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় বর্তমান সাংসদ সালমা ইসলামসহ (ঢাকা-১) অন্তত ১০ জন নেতা ও মনোনয়নপ্রত্যাশী জাপার শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেছেন। কেউ কেউ পদত্যাগও করেছেন।
জাপার মনোনয়নের চিঠি না পাওয়ায় দল থেকে পদত্যাগ করেছেন প্রেসিডিয়াম সদস্য ও গাইবান্ধা জেলা কমিটির সভাপতি আবদুর রশীদ সরকার। তিনি বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। আবদুর রশীদ ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে গাইবান্ধা-২ আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
আবদুর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার হাত ধরে পার্টিতে যারা এসেছে, তাদেরও মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আমি পার্টির জন্য অনেক করেছি, টাকা খরচ করেছি। আর কত? আমি আর পারছিলাম না।’
ঢাকা-১৩ আসন থেকে জাপার মনোনয়ন চেয়েছিলেন দলের ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম সেন্টু। মনোনয়ন না পেয়ে তিনি ক্ষুব্ধ। গতকাল তাঁর সমর্থকেরা বনানীর কার্যালয়ের সামনে স্লোগান দেন। সেখানে শফিকুল ইসলাম ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে দল থেকে পদত্যাগ করার ঘোষণা দেন। এই আসনে আওয়ামী লীগ সাদেক খানকে প্রার্থী করেছে।
দল থেকে পদত্যাগ করছেন কি না, জানতে চাইলে শফিকুল ইসলাম গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাগজে-কলমে কিছু হয়নি। মহানগর উত্তরের ২৬ থানার নেতা-কর্মীরা কার্যালয়ে একটি সভায় গিয়েছিলেন। তাঁরা আমার মনোনয়ন না পাওয়ায় আবেগে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।’
ফেনী-৩ আসনে দলের মনোনয়ন না পেয়ে পদত্যাগ করেন জাপা চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা রিন্টু আনোয়ার। এ আসনে জাপার প্রার্থী সদ্য দলে যোগ দেওয়া অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী। লালমনিরহাট-২ আসনে মনোনয়ন না পেয়ে বিএনপিতে যোগ দেন দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রোকন উদ্দিন।
গাজীপুর-৫ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন গাজীপুর মহানগর জাপার সহসভাপতি ওবায়দুল কবির। তিনি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে নিজের আসনে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার ঘোষণা দেন। এই আসনে জাপার মনোনয়ন পেয়েছেন প্রেসিডিয়াম সদস্য আজম খানের স্ত্রী দলের কালীগঞ্জ উপজেলা সভাপতি রাহেলা পারভীন।
নীলফামারী-৪ আসনে দলের বর্তমান সাংসদ শওকত চৌধুরীর পাশাপাশি এরশাদের বোনের ছেলে আদিলুর রহমানকেও দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এতে তিনি জাপার বনানী কার্যালয়ে এসে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এরশাদের ভাগনেও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এখানে আওয়ামী লীগ কোনো প্রার্থী দেয়নি।
দিনাজপুর-৫ আসনে দলীয় প্রার্থিতার আবেদন সংগ্রহ করা মো. সোলায়মান সামি, চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয় পার্টির সহসভাপতি মোহাম্মদ আলী, সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের শেখ শরিফুল ইসলাম এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী কাজী মামুনুর রশীদ ও জয়পুরহাট-২ আসনে আবুল কাশেম মনোনয়ন নিয়ে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ তোলেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাপার মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এসব সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। এটা কোনো একটি স্থান থেকে এসেছে, আমাকে ও দলকে হেয়প্রতিপন্ন করতে। পয়সা খেয়ে, কোনো জায়গা থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে এটা করা হতে পারে।’