২২শে নভেম্বর, ২০২৪ ইং | ৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সন্ধ্যা ৭:১৭

ডাবল চিঠির ছড়াছড়ি

বেশির ভাগ আসনে একাধিক প্রার্থী রেখে প্রাথমিক মনোনয়নের চিঠি দেওয়া শুরু করেছে বিএনপি। গতকাল সোমবার বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে কারাবন্দি খালেদা জিয়ার জন্য তিনটি আসনের মনোনয়নের চিঠি তাঁর প্রতিনিধিদের হাতে হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে ওই কার্যক্রম শুরু করা হয়। দুর্নীতির দুই মামলায় সাজা নিয়ে কারাগারে থাকা খালেদা জিয়া এবার মনোনয়ন নিয়েছেন ফেনী-১, বগুড়া-৬ ও বগুড়া-৭ আসন থেকে। খালেদা জিয়ার প্রতিনিধি হিসেবে বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম এবং চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য হেলালুজ্জামান তালুকদার লালুর হাতে চিঠি তুলে দেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

একই আসনে একাধিক প্রার্থী রাখার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বিএনপি বলেছে, কোনো কারণে একজনের প্রার্থিতা বাতিল হলেও যাতে অন্যজনেরটা টিকে থাকে সে বিবেচনা থেকেই এমন কৌশল নেওয়া হয়েছে। বিএনপির মহাসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা প্রতিটি আসনে দুজন করে প্রার্থীকে প্রাথমিক মনোনয়ন দিচ্ছি। কোনো কারণে একজনের না হলে পরেরজন যাতে সুযোগ পান। আর আমাদের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ যেখানে যাঁরা আছেন, সেখানে তাঁরাই মনোনয়ন পেয়েছেন।’

নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় দলীয় মনোনয়নের এই চিঠি বা প্রত্যয়নপত্রও জমা দিতে হবে। এই প্রত্যয়নপত্রে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সই থাকছে।

খালেদা জিয়ার মনোনয়নের চিঠি হস্তান্তরের পর বিকেল ৪টা থেকে বরিশাল বিভাগে ধানের শীষের মনোনীত প্রার্থীদের প্রত্যয়নপত্র দেওয়া শুরু হয়। এরপর সন্ধ্যা ৬টায় রংপুর বিভাগের এবং রাত ৮টায় রাজশাহী বিভাগের প্রার্থীদের প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গতকাল চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা বিভাগের কয়েকটি আসনের প্রার্থীরা বিচ্ছিন্নভাবে মনোনয়ন সংগ্রহ করেন। আজ মঙ্গলবার সারা দিন প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হবে বলে বিএনপি চেয়ারপারসনের অফিস সূত্রে জানা গেছে।

মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীদের তালিকায় পুরনো প্রার্থী অর্থাৎ ২০০১ ও ২০০৮ সালে নির্বাচনকারীদের প্রায় সবার হাতে ধানের শীষ প্রতীক তুলে দিয়েছেন দলটির হাইকমান্ড। তবে যাঁরা মৃত্যুবরণ করেছেন বা ঋণখেলাপি কিংবা বার্ধক্যজনিত কারণে এবার নির্বাচন করতে পারবেন না তাঁদের বাদ দেওয়া হয়েছে। এই তিন বিভাগে নতুন মুখ দেখা যায়নি। তবে চমক হিসেবে এসেছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও দল থেকে বহিষ্কৃত গোলাম মাওলা রনি। নারী ও সংখ্যালঘুদের সংখ্যাও হাতে গোনা। তবে একাধিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করায় বিকল্প প্রার্থীদের মধ্যে নতুন মুখের সংখ্যা অনেক।

দলটির একাধিক নেতার সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, যাঁরা জয়ী হয়ে আসতে পারবেন তাঁদেরই বেছে নিয়েছে বিএনপি। এলাকায় প্রভাব আছে, কারচুপির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারবেন এমন বিবেচনায় সংস্কারপন্থী নেতাদেরও প্রার্থী করা হয়েছে। সংস্কারপন্থী নেতা হিসেবে পরিচিত মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ, জহির উদ্দিন স্বপন, শহিদুল হক জামাল, সরফুদ্দিন সান্টু, ইলেন ভুট্টোসহ বেশ কয়েকজন নেতা মনোনয়ন চিঠি গতকাল সংগ্রহ করেছেন। বিএনপি নেতাদের অনেকে স্ত্রীকেও বিকল্প প্রার্থী করেছেন। আলতাফ হোসেন চৌধুরীর স্ত্রী সুরাইয়া আখতার, শহীদুল আলম তালুকদারের স্ত্রী সালমা আলম, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন ছবি বিকল্প প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন চিঠি সংগ্রহ করেছেন। এ ছাড়া কয়েকজন প্রার্থী তাঁর ছেলেকে বিকল্প প্রার্থী রেখেছেন।

গত রাতে এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত যাঁরা বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন তাঁরা হলেন : ব্যারিস্টার নওশাদ জমির ও তৌহিদুল ইসলাম (পঞ্চগড়-১); ফরহাদ হোসেন আজাদ ও নাদিয়া আক্তার (পঞ্চগড়-২); মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (ঠাকুরগাঁও-১); মোহাম্মদ আব্দুস সালাম ও মো. জুলফিকার মর্তুজা চৌধুরী তুলা (ঠাকুরগাঁও-২); জাহিদুর রহমান ও জিয়াউল ইসলাম জিয়া (ঠাকুরগাঁও-৩); মনজুরুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ (দিনাজপুর-১); সাদিক রিয়াজ পিনাক ও মঞ্জুরুল ইসলাম (দিনাজপুর-২); জাহাঙ্গীর আলম ও মোয়াজ্জেম হোসেন দুলাল (দিনাজপুর-৩); মো. আক্তারুজ্জামান ও হাফিজুর রহমান সরকার (দিনাজপুর-৪); এ জেড এম রেজওয়ানুল হক ও এস এস জাকারিয়া বাচ্চু (দিনাজপুর-৫); মো. লুত্ফর রহমান ও মো. শাহিনুল ইসলাম শাহিন (দিনাজপুর-৬); আবুল হাসান কায়কোবাদ (কুড়িগ্রাম-১); আবু বকর সিদ্দিক (কুড়িগ্রাম-২); তাজভীরুল ইসলাম ও আব্দুল খালেক (কুড়িগ্রাম-৩); আজিজুর রহমান ও মোখলেছুর রহমান (কুড়িগ্রাম-৪); আসাদুল হাবিব দুলু (লালমনিরহাট-৩); মোশাররফ হোসেন সুজন ও কামরুজ্জামান বাবু (রংপুর-১); ওয়াহিদুজ্জামান মামুন, মোজাফফর আলী ও মোহাম্মদ আলী সরকার (রংপুর-২); রিটা রহমান (পিপিবি) ও মোজাফর আহমদ (রংপুর-৩); এমদাদুল হক ভরসা, আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা ও খলিলুর রহমান (রংপুর-৪); সোলায়মান আলম ও ডা. মমতাজ (রংপুর-৫); সাইফুল ইসলাম (রংপুর-৬); মো. শাহজাহান মিয়া ও বেলালী বাকী (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১); আনোয়ারুল ইসলাম (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২), আব্দুল ওয়াহেদ ও হারুন-অর রশিদ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩); সালেক চৌধুরী, মোস্তাফিজুর রহমান ও মাসুদ রানা (নওগাঁ-১); শামসুজ্জামান খান ও খাজা নজিব উল্লাহ চৌধুরী (নওগাঁ-২); রবিউল আলম বুলেট ও পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকী জনি (নওগাঁ-৩); শামসুল আলম প্রামাণিক ও একরামুল বারী দীপু (নওগাঁ-৪); জাহিদুল ইসলাম ও নজমুল হক সনি (নওগাঁ-৫); আলমগীর কবির ুও শেখ রেজাউল ইসলাম (নওগাঁ-৫); কামরুন্নাহার শিরিন ও তাইফুল ইসলাম টিপু (নাটোর-১), রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু ও সাবিনা ইয়াসমিন ছবি (নাটোর-২), মো. দাউদার মাহমুদ, অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আনোয়ারুল (নাটোর-৩); আব্দুল আজিজ, মোজাম্মেল হক (নাটোর-৩); ব্যারিস্টার আমিনুল হক, আতা হক (রাজশাহী-১), মিজানুর রহমান মিনু ও সাঈদ হাসান (রাজশাহী-২), এ কে এম মতিউর রহমান মন্টু ও শফিকুল হক মিলন (রাজশাহী-৩), আবু হেনা ও মো. আ. গফুর (রাজশাহী-৪), আবু সাঈদ চাঁন ও মো. নুরুজ্জামান খান মানিক (রাজশাহী-৬), অ্যাডভোকেট নাদিম মোস্তফা ও নজরুল মণ্ডল (রাজশাহী-৫); রফিকুল ইসলাম, ন্যান্সি আহমেদ কবির (নীলফামারী-১); মো. শামসুজ্জামান (জামান) ও কাজি আকতারুজ্জামান (নীলফামারী-২); ফাহমিদ ফয়সাল চৌধুরী (নীলফামারী-২); রুমান মোর্শেদ কনক চাপা ও মো. নাজমুল হাসান (সিরাজগঞ্জ-১); ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, রুমানা মাহমুদ (সিরাজগঞ্জ-২); আব্দুল মান্নান তালুকদার, আয়নুল হক (সিরাজগঞ্জ-৩); রেজাউল রহমান (জামায়াত) ও শামসুল আলম (সিরাজগঞ্জ-৪); রকিবুল করিম খান ও আমিরুল ইসলাম খান আলিম (সিরাজগঞ্জ-৫); কামরুজ্জামান এহিয়া খান মজলিস ও এম এ মুহিত (সিরাজগঞ্জ-৬); মতিউর রহমান তালুকদার ও নজরুল ইসলাম মোল্লা (বরগুনা-১); নুরুল ইসলাম মনি (বরগুনা-২); আলতাফ হোসেন চৌধুরী (পটুয়াখালী-১); সুরাইয়া আখতার চৌধুরী, শহীদুল আলম তালুকদার ও সালমা আলম (পটুয়াখালী-২); হাসান মামুন ও মো. শাহজাহান (পটুয়াখালী-৩); এ বি এম মোশাররফ হোসেন ও মনিরুজ্জামান মুনির (পটুয়াখালী-৪); আন্দালিব রহমান পার্থ, গোলাম নবী আলমগীর ও হায়দার লেলিন (ভোলা-১); হাফিজ ইব্রাহিম ও রফিকুল ইসলাম মমিন (ভোলা-২); হাফিজউদ্দিন আহমেদ ও মো. কামাল হোসেন, (ভোলা-৩); নাজিমউদ্দিন আলম ও মো. নুরুল ইসলাম নয়ন (ভোলা-৪); জহিরউদ্দিন স্বপন ও আবদুস সোবহান (বরিশাল-১); সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু ও শহিদুল হক জামাল (বরিশাল-২); জয়নুল আবেদীন ও সেলিমা রহমান (বরিশাল-৩); মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ ও রাজীব আহসান (বরিশাল-৪); মজিবর রহমান সারোয়ার ও এবায়েদুল হক চাঁন (বরিশাল-৫); আবুল হোসেন খান ও রশিদ খান (বরিশাল-৬); শাহজাহান ওমর (ঝালকাঠি-১); রফিকুল ইসলাম জামাল, ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো ও জেবা খান (ঝালকাঠি-২), ব্যারিস্টার সরোয়ার হোসেন (পিরোজপুর-১), রুহুল আমিন দুলাল ও শাহজাহান মিয়া (পিরোজপুর-৩)।

এ ছাড়া আছেন মোশাররফ রহমান (লালমনিরহাট-১); আসাদুল হাবিব দুলু (লালমনিরহাট-৩); রুমানা মোর্শেদ কনক চাপা ও মো. নাজমুল হাসান (সিরাজগঞ্জ-১); ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও রুমানা মাহমুদ (সিরাজগঞ্জ-২); সালাউদ্দিন খান পিপিএম (পাবনা-১), এ কে এম সেলিম রেজা হাবীব ও হাসান জাফির তুহিন (পাবনা-২); কে এম আনোয়ারুল ও হাসাদুল ইসলাম হীরা (পাবনা-৩), হাবিবুর রহমান হাবীব, সিরাজুল ইসলাম (পাবনা-৪); মো. শোকরানা ও কাজী রফিকুল ইসলাম (বগুড়া-১); জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা (নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক) মাহমুদুর রহমান মান্না ও বিএনপির শাহে আলম (বগুড়া-২), আব্দুল মমিন তালুকদার ও মাসুদা মোমিন (বগুড়া-৩); মো. মোশারফ হোসেন ও জিয়াউল হক মোল্লা (বগুড়া-৪); গোলাম মো. সিরাজ ও জানে আলম খোকা (বগুড়া-৫); খালেদা জিয়া, মো. রেজাউল করিম ও এ কে এম মাহবুবুর রহমান (বগুড়া-৬); খালেদা জিয়া ও মোর্শেদ মিলটন (বগুড়া-৭); ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও মামুনুর রশিদ (নোয়াখালী-১); জয়নাল আবদীন ফারুক ও কাজী মো. মফিদুর (নোয়াখালী-২); বরকত উল্লাহ বুলু ও কাজী মাজহারুল ইসলাম (নোয়াখালী-৩); শাহিনূর বেগম (নোয়াখালী-৪); ফজলুল আজিম (নোয়াখালী-৬); হাসিনা আহমেদ (কক্সবাজার-১); লুত্ফর রহমান কাজল (কক্সবাজার-৩); মো. সালাহ উদ্দিন ও শাহজাহান চৌধুরী (কক্সবাজার-৪); খন্দকার আহাদ আহমেদ ও মাহমুদুন্নবী টিটুল (গাইবান্ধা-২, এই আসনের নিচে লেখা আছে আব্দুর রশিদ সরকার যোগদান করতে পারেন); ডা. মঈনুল হাসান সাদিক, মিসেস রওশনারা খাতুন (গাইবান্ধা-৩); ফারুক কবির আহমেদ ও মো. ওবায়দুল হক সরকার (গাইবান্ধা-৪)। এ ছাড়া রাঙামাটি—দীপেন দেওয়ান ও মনি স্বপন দেওয়ান, বান্দরবান—সাচিন ক্রু জেরি ও উম্মে কুলসুম সুলতানা এবং খাগড়াছড়িতে আব্দুল ওয়াদুদ ভূইয়াকে মনোনীত করা হয়। গাইবান্ধা-১ ও পাবনা-৫ আসন রাখা হয়েছে জামায়াত প্রার্থীর জন্য।

কাঁদলেন ফখরুল : দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিঠি দলীয় প্রধানের প্রতিনিধির হাতে তুলে দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। একপর্যায়ে তিনি টিভি ক্যামেরা বন্ধ রাখতে অনুরোধ করেন এবং পকেট থেকে রুমাল বের করে চোখ মোছেন। বগুড়ার দুটি আসনে খালেদা জিয়ার পক্ষে জেলা বিএনপির সভাপতি সাইফুল ইসলাম এবং চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু মহাসচিবের কাছ থেকে প্রত্যয়নপত্র গ্রহণ করেছেন।

প্রকাশ :নভেম্বর ২৭, ২০১৮ ৯:২১ পূর্বাহ্ণ